|
ঢাকা-নারিতা-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইটঃ
বাংলাদেশ বিমান চালু হোক
-কাজী ইনসানুল হক,
উপদেষ্টা সম্পাদক, কমিউনিটি নিউজ
২৫ মে ২০১৪, জাপানের হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলো বাংলাদেশ
বিমানের ঝকঝকে তকতকে একটি বিমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের
রাষ্ট্রীয় সফরে সফর সংগী নিয়ে এলেন জাপানে।
২০০৬ সালে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইট বন্ধ হয়েছিলো। দীর্ঘ ৮ বছর পর মে মাসে
ছিলো বাংলাদেশ বিমানের এই জাপান যাত্রা। এর আগে ১৯৭৯ সালে প্রথম ঢাকা-টোকিও
ফ্লাইট চালু হয়েছিলো। ১৯৮১ সালে সাময়িক বিরতির পর বিমানের ফ্লাইট পুনরায়
চালু হয়। সর্বশেষ ২০০৬ সালে এই রুট বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯২ সালে অবশ্য এই
ফ্লাইট নাগোয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছিলো। সেটিও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে
যায়।
প্রায় দুই যুগ আগে প্রথম জাপানে এসেছিলাম বিমানের এই ফ্লাইটেই। ২০০৬ সালে
বিমান বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত দেশে যাতায়াত করা হতো বিমানের এই ফ্লাইটেই।
বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস মান অন্য এয়ারলাইন্সের তুলনায় অনেক খারাপ ছিলো।
তারপরও বিমান বিমানই। এখন যখন হংকং, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, চায়না,
থাইল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশে যেতে হয় তখনই মনে হয় এই বিড়ম্বনার প্রহর কখন কাটবে।
কখন চালু হবে বাংলাদেশ বিমান -আবারও!
প্রবাসী সাংবাদিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কভার করতে গিয়ে ঐ সময়ের
দু'টি বিশেষ মুহূর্ত আমার জন্যে বিশেষ স্মরণীয় বলে মনে হয়েছে। যখন প্রথম
হানেদা বিমানবন্দরের উপর "বাংলাদেশ বিমান" লেখা আমাদের বিমানটি চক্কর দিয়ে
নীচে নেমে এসে আস্তে আস্তে রানওয়েতে থেমে গেলো সেই মুহূর্তটি। বারবার মনে
হয়েছিলো আহা, বাংলাদেশ বিমান যদি আবার চালু হতো।
হ্যাঁ আর দ্বিতীয় স্মরণীয় মুহূর্তটি হচ্ছে ২৬ মে সন্ধ্যায় জাপানের
প্রধানমন্ত্রীর সোওরি-দাইজিন কানতে'তে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক আলোচনা
ও চুক্তি সাক্ষর করার মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করার। ২০১০ সালেও তৎকালীন জাপানি
প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চুক্তি সাক্ষর
অনুষ্ঠাটিতে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিলো। জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
আমন্ত্রনে জাপান সফররত পৃথিবী বিখ্যাত বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রেস
কভারেজ করার সুযোগ হলেও স্বদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কভার করার এই সুযোগটি
আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে।
এবার বিমান প্রসঙ্গ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এলেন, উষ্ণ অভর্থ্যনা পেলেন,
তখনই নাগরিক সম্বর্ধনায় জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন
মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে সকল প্রবাসীর পক্ষ থেকে জাপানে বাংলাদেশ বিমানের
ফ্লাইট চালু করার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানালেন শত প্রতিকূলতা
সত্বেও তিনিও চান ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট চালু হোক।
আশার কথা রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের সবার প্রচেষ্টায় ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট
চালু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জাপানে
এসেছেন। অন্যান্য কিছু রাষ্ট্রীয় কাজের পাশাপাশি বিমান চালুর বিষয়ক আলোচনা
ও প্রাইমারি চুক্তি পত্র সাক্ষর হয়েছে। এরপর বিমান চালুর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, নারিতায় বাংলাদেশ বিমানের যে "স্লট"টি ছিলো সেটি
আর চালু করা সম্ভব নয়। পরিবর্তে হানেদা বিমানবন্দরকেই বাংলাদেশ বিমানের
নতুন গন্তব্য হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা-ব্যাংকক-হানেদা
রুটটি চালু করার চেষ্টা চলছে। কিছুটা সময় লাগলেও বিমান আবার জাপানের আকাশে
তার যাত্রাপথ সম্প্রসারণ করবে সেটা বলা যায়।
ক'দিন আগে টোকিওর জাইকা সেন্টারে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি প্রদর্শনীতে
রাষ্ট্রদূত জনাব মোমেন আমাকে তার এই আশাবাদের কথা জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে
এটাও মনে করিয়ে দিলেন এই ফ্লাইট অব্যাহত রাখতে প্রবাসী সকলের সহযোগিতা
দরকার। ইতালিতে তিনি অনেক চেষ্টা তদ্বির করে ঢাকা-মিলান ফ্লাইট চালু
করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর রাখা যায়নি।
দুর্নীতি ও বিমান দু'টি সমার্থক শব্দ। তারপরও মনে করি বিমানের ফ্লাইট চালু
হলে যে সুবিধা ভোগ করবো আমরা তার বিনিময়ে আমরা প্রবাসীরা বিমানকে অন্ততঃ
জাপানে দুর্নীতি করার সুযোগ দেবো না -সেটি বলতে পারি।
আমাদের কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি, রাষ্ট্রদূত মহদয়ের প্রতি,
প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের এই দাবিটিকে মর্যাদা দেয়ার জন্যে।
কাজী ইনসানুল হক,
ইমেইলঃ
kaziensan@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|