[প্রথমপাতা]
|
স্বদেশে প্রবাসী
-কাজী ইনসানুল হক
[কমিউনিটি নিউজের উপদেষ্টা সম্পাদক কাজী
ইনসানুল হক বেশ কিছুদিন স্বদেশ ঘুরে এলেন। তার দেখা, তার চোখে পড়া নানা
ঘটনা প্রতিদিনের রোজনামচার আদলে লিখেছিলেন -সেখান থেকে কিছু লেখা নিয়ে এই
কলাম। পাঠকদের মন্দলাগার দায়ভার লেখকের]
১৪ মার্চ ২০১৪.
গত রাত জুড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিসিবি স্যালিব্রেশন কনসার্ট আইসিসি টি২০
ওয়ার্ল্ডকাপের বর্ণিল অনুষ্ঠান দেখলাম। হয়তো জমকালো অনুষ্ঠান হয়েছে তবে
গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বনাম খ্যাত এ আর
রহমানকে হেয় না করেই বলছি, তাকে সম্মান দিন, সম্মান তার প্রাপ্য। কিন্তু
আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে একটি করে গান
গেয়ে নেমে যেতে হবে সেটা মেনে নেয়া যায়না। এ আর রহমানের সাথে আসা শতাধিক
শিল্পীদের পরিবেশনার মান যা তার চেয়ে অনেক অনেক ভালো শিল্পী আমাদের আছে
তারা বঞ্চিত হয়েছেন আর ভারতীয়রা এ ধরনের সাদা-মাটা শিল্পীদের বাংলাদেশে এনে
পারিশ্রমিক কামিয়েছেন। ভারতের প্রতি অতিনির্ভরতা ভালো লাগেনি।
*****
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান ও
নিজস্ব ভবনের উদ্বোধনে কিছুক্ষণের জন্যে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ হলো। ১৯৭৮
সালের এই দিনে সুচনা হয়েছিলো "বই পড়ার অভ্যেস দিয়ে আলোকিত মানুষ তৈরি"র এই
কারখানার। পরম শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ ছিলেন সেই কারখানার
'কারিগর'। অক্লান্ত পরিশ্রম, শত প্রতিকূলতা, প্রবল মনোবল আর লক্ষ লক্ষ
মানুষের অপার ভালোবাসায় সেটি আজ মহিরুহে পরিনত হয়েছে। দেশ ছাড়বার আগে, বহু
আগে বহুবার গিয়েছি ওখানে, বই ধার করতে, চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র
প্রদর্শনীতে। বাংলা মোটরের পাশে তখনকার দিনের নির্জন এলাকার ছায়াসুনিবিড়
সেই স্থানটি এখন ইট-সুড়কির বিশালাকার দানবীয় স্থাপনায় সকল কৌলীন্য
হারিয়েছে। ৩০ বছর আগের সেই ভবনটি খুঁজতে যাওয়া আমার মূর্খতা।
এখন সেখানে সুপরিসর বৃহৎ ভবন। অতি ব্যস্ত স্যারের সাথে দেখা হলো, পরিচয়
দিতেই আন্দাজে চিনলেন। বছর কয়েক আগে ওনার জাপানের সফরের সময় ক'টা দিন তার
সান্নিধ্য পেয়েছি। কিছু সময়ও দিয়ে ছিলাম। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র জাপান শাখা
প্রতিষ্ঠার সময় আমন্ত্রিত হয়ে ক'দিনের জন্যে জাপানে এসেছিলেন। টোকিওর
ইতাবাসি -কু'র সাকাই চো, তোশিমা হাসপাতালের মুখোমুখি মনি (বর্তমানে আমেরিকা
প্রবাসী)র ছোট্ট বাসার একটি কক্ষে স্যার থাকতেন। আমার বাসা থেকে ঐ বাসাটির
দুরত্ব মাত্র ১০০ গজ। এখনো প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে আমি ঐ বাসাটি দেখি আর
তখনই স্যারের কথা মনে পড়ে -বিনম্র শ্রদ্ধায় মাথাটা নুয়ে আসে।
*****
শ্যামলীর রিং রোড একটু এগুলেই, একটি গলি ধরে আরো খানিকটা এগিয়ে গেলে আদাবর
এলাকায় মেজ ভাগনের সদ্য কেনা ফ্ল্যাট দেখতে যাওয়া। অবেলায় যাওয়া তাই ফিরতে
ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ফিরবার পথে সিএনজি খুঁজছি। স্বতস্ফুর্ত ভাবে এক
রিক্সা চালক এগিয়ে এলো, স্যার কোথায় যাবেন? আমার গন্তব্য পথের অনেকটা জুড়ে
রিকসা চলাচল নিষিদ্ধ তাই এড়িয়ে যেতেই বলল, স্যার এটা ইঞ্জিন রিক্সা। আমার
গন্তব্য বলতেই যাবো স্যার চলেন, ভাড়া যেটি বললো সেটিও সিএনজি'র অর্ধেক।
কিছু না ভেবেই উঠে পড়লাম। ব্যাটারি চালিত রিক্সা -সেটাও কিনা বেশ বড় আরাম
আরাম ভাব। দু'জনে স্বচ্ছন্দ্যে বসা যায়। বেশ ভালোই লাগছে। যান্ত্রিক গতিতে
রিকসা ছুটছে। অবাক হচ্ছি ভিআইপি রাস্তা সহ সকল রাস্তায় অবলীলায় পার হচ্ছে
আমার রিক্সাটি। ট্রাফিক পুলিশের কঠিন চোখের বাঁধা উপেক্ষা করে রিক্সা
ছুটছে। দু'এক জায়গায় তেড়ে আসা ট্রাফিক পুলিশ রিক্সা থামাতে ছুটে আসে।
রিক্সা চালক সামান্য গতি কমিয়ে কী যেন ইশারা করে ট্রাফিক পুলিশ সাথে সাথেই
সরে যায়। বিষয়টা আমাকে ভাবায়। এই রিক্সাচালক কি রিকসা শ্রমিকদের ডাকসাইটে
নেতা নাকি এই রিক্সাটা কোনো পুলিশ কর্মকর্তার? ভুল ভাঙ্গে গন্তব্য শেষে যখন
রিক্সাচালক আমাকে বাসার গেইটে নামিয়ে দেয়, ভাড়া দিতে যেয়ে চমকে উঠি। তার
একটি পা গোড়া থেকে নেই -অপর পা'টি হাঁটু অব্দি নেই।
কায়িক শ্রম কম বলে প্যাডেল রিক্সায় না চড়ে যান্ত্রিক রিক্সায় চড়েছি ভেবে
নিজেকে যতটা 'মহৎ' ভেবে ছিলাম আসলে আধখানা পা দিয়ে আমাদের দু'জনের চারখানা
পা সামান্য ক'টা টাকার বিনিময়ে চালিয়ে এনে এই রিক্সা চালক আমাদের জানিয়ে
দিলো মানুষ হিসেবে সে ছোট নয়। আর ট্রাফিক পুলিশের যা দুর্নামই থাকুক এই
শারীরিক প্রতিবন্ধীর প্রতি তার প্রদত্ত সম্মান কোনোক্রমেই কারো চেয়েই কোনো
অংশে কম নয়।
kaziensan@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|