প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ওমরন জাপানঃ বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবায় ভূমিকা রাখতে চায়

 

 

-কাজী ইনসানুল হক,

কিয়োতো থেকে ঘুরে এসে বিশেষ প্রতিবেদন।

[জাইকার অনুদানে বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের ৭টি জেলা হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ৭টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ডায়গনোস্টিক সেন্টার।]

"জাইকা আমাদের ডেভেলাপমেন্ট পার্টনার। যারা আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। জাইকার ঋণ দেয়ার একটি সময় থাকে। সেই সময়টা ইয়ান লোন ফেজ টু কে সম্প্রসারণ করার জন্যে এখন কথা চলছে। দ্বিতীয় দফা ঋণ বাড়ানোর আগে তারা সম্ভাব্যতা যাচাই করে থাকে, সেটা সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের দেশের ৭টি জেলায় ঘুরে দেখেছে সেখানে ইমেজিং অর্থাৎ এক্সরে, এমআরআই , সিটি স্ক্যান -সব করতে মহিলারা লম্বা লাইন দিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে থাকেন। তখন তারা অনুভব করলো বাংলাদেশে আমরা যে অর্থ দেবো কিছুটা আমরা ঐ খাতে দেব আর কিছুটা আমরা এই ৭টি জেলা হাসপাতালে আমরা বিশ্বমানের ডায়গস্টিক সেন্টার করে দেবো। পুরো হাসপাতাল নির্মাণ না করে এগুলোর জন্যে আলাদা ইউনিট করে দেয়া হবে। তারা যন্ত্রপাতি গুলো এনে দেবে, এগুলো পরিচালনার জন্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। এভাবে তিনটি ধাপের প্রস্তাব নিয়ে জাইকা এসেছে। এরপর জাইকা মন্ত্রী মহদয়কে অবহিত করে জাপানে এ ধরনের বেশ কিছু নির্মাতা কোম্পানি আছে, মন্ত্রীকে সেগুলো দেখে যেতে তারা আমন্ত্রন জানান। যে সব ইমেজিং যন্ত্রপাতি কিনবো সেগুলো প্রধানতঃ জাপান থেকে কেনার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।"

 

নিরু শামসুন্নাহার, চিফ অফ প্ল্যানিং

জাপান সফরে এসেছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী মোঃ নাসিম। তার সফর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন মোঃ আবু তাহের, অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রীর সচিব কাজী এ কে এমন মহিউল ইসলাম, চিফ অফ প্ল্যানিং নিরু শামসুন্নাহার, ডিজি দ্বীন মোহাম্মাদ নূরুল হক, এ বি এম আব্দুল হান্নান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম রসুল ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান।

প্রতিনিধি দল ওমরন ছাড়াও বেশ ক'টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। তবে প্রতিনিধি দলের মধ্যে ওমরনের পণ্য সম্পর্কে উচ্চ ধারণার আভাস পাওয়া গেছে।

ওমরনঃ

বিশ্বখ্যাত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির শিল্প সয়ংক্রিয়তা, ইলেক্ট্রনিক্স কম্পোনেন্ট, ট্রাফিক যন্ত্রাংশ ও হেলথ কেয়ার সামগ্রীর প্রস্তুতকারক জাপানের বিখ্যাত নির্মাতা ওমরনের কর্পোরেট প্রেসিডেন্ট ইয়োশিহিকো ইমাদা গত ১৯ নভেম্বর জাইকার আমন্ত্রনে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাপান সফররত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব মোঃ নাসিম ও তার সফর সঙ্গীদের কিয়োতোর কর্পোরেট অফিসে স্বাগত জানান।
 

 


১০ মে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কাজুমা তাতোইশি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানি আজ বিশ্বসেরা জায়ন্ট ওমরন। ৬৪ বিলিয়ন ইয়েন মূলধনের পৃথিবীর সব ক'টি মহাদেশ জুড়ে ১২১টি দেশে তাদের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিনিধি প্রায় ৩৬ হাজার কর্মীবাহিনী নিয়ে তাদের নিরন্তর অগ্রযাত্রা। ওমরন নামটি এসেছে "ওমুরা" থেকে, প্রতিষ্ঠাতা কাজুমা তাতেইশি'র কিয়োতোর এই স্থানেই তার প্রথম কারখানা স্থাপন করেছিলেন।

বিশ্বের অনেক যন্ত্রেরই আবিস্কার হয়েছিলো ওমরনের কারখানায়। ১৯৩৩ সালে বিশ্বের প্রথম এক্স-রে টাইমার আবিস্কার করে ওমরন বিশ্বের সকলের কাছে পরিচিতি পায়। ১৯৬৪ সালে বিশ্বের প্রথম অটোমেটেড ট্রাফিক সিগনাল, ১৯৬৭ সালে বিশ্বের প্রথম জনহীন ট্রেন নিয়ন্ত্রন যন্ত্রাংশ এবং ১৯৬৯ সালে বিশ্বের প্রথম ডেস্কটপ ক্যালকুলেটর আবিস্কার করে ওমরন। ১৯৭১ সালে বিশ্বের প্রথম অনলাইন ক্যাশ ডিসপেন্সার এবং ১৯৯৮ সালে টাকা গননার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ওমরনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। মন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষ্যে ওমরন কার্যালয়টি বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিলো। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রতীক লাল ও সবুজ রঙের ফুলে সজ্জিত করা হয়।

কিছুদিন আগে ওমরন কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্যে বিপুল পরিমাণ স্বাস্থ্য সামগ্রী উপহার দেয়ার জন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ওমরন'কে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সহ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ওমরন কর্পোরেশনকে দেয়া কৃতজ্ঞতা পত্র হস্তান্তর করেন সঙ্গে বাংলাদেশের হস্তশিল্প উপহার দেন। ওমরন প্রধান তা অসম্ভব বিনয়ের সাথে গ্রহণ করেন এবং বলেন তিনি বাংলাদেশের এই উপহারটি সর্বদা মর্যাদার সাথে সংরক্ষণ করবেন এবং সবাইকে জাপানের ঐতিহাসিক চা পানে আপ্যায়ন করেন।
 




স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওমরনকে বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান্ট নির্মাণের আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে সব রকমের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন। এ বছর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ওমরন হেলথ কেয়ার, বাংলাদেশ -প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই তারা বিক্রয় শুরু করে দিয়েছে।

এরপর মন্ত্রী সহ অন্যান্যদের স্বাগত জানান ওমরনের হেলথ কেয়ার প্রেসিডেন্ট কিচিরো মিয়াতা, তিনি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাখ্যা দেন এবং অতি উৎসাহের সংগেই বলেন- বাংলাদেশ সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণাটি একটি যুগান্তরকারী উদ্যোগ। গ্রাম ও অবহেলিত জনপদ, দুর্গম স্থানের সুবিধাবঞ্চিত জনগনের স্বাস্থ্য সেবার এই প্রচেষ্টাকে আমরা অভিবাদন জানাই। ব্যাবসার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরকারকে সহায়তা করতে চাই। আমাদের নির্মিত এই সামগ্রী গুলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ তাই, নার্স, ডাক্তার বা ল্যাব টেকনিশিয়ানরা কম সময়ে বেশি রোগীকে তাদের সেবা প্রদান করতে পারে।

 



ওমরন হেলথ কেয়ার বাংলাদেশ'র পরিচালক কাজী মাহফুজুল হক লাল, ও মোসাদ্দেক হোসেন, জাইকার কর্মকর্তা এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও প্রবাসী মিডিয়া এখানে উপস্থিত ছিলেন।

ওমরনের কার্যক্রমঃ বিশ্বের একমাত্র প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান্টঃ
 


 

আমরা দেখতে গেলাম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিচালিত একটি পূর্ণাঙ্গ ইন্ডাস্ট্রি। পঙ্গু, বিকালঙ্গ, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি প্ল্যান্ট। এটির প্রধান নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। হুইল চেয়ার তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। মূল ফটকে গিয়ে আমরা অভিভূত হলাম। পতপত করে উড়ছে বাংলাদেশেএর পতাকা। ওমরনের পতাকা, জাপানের পতাকা পাশে আমাদের লাল-সবুজ পতাকা।

প্রতিবন্ধীদের কর্ম সহায়ক যন্ত্রপাতিও নির্মাণ করেছে ওমরন। যাদের একটি হাত নেই তাদের জন্যে অন্য হাতে কাজ করার উপযোগী, যাদের দু'হাত নেই তাদের পা দিয়ে চালানোর মত উপযোগী মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো পরিবেশটাই প্রতিবন্ধী সহায়ক। ব্যারিয়ার ফ্রিঃ হুইল চেয়ারের উচ্চতা বিবেচনায় মেশিন পত্রের অবস্থান, কর্মক্ষেত্রের পাশেই তাদের থাকার ব্যবস্থা, এলিভেটর, এটিএম বুথ, ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য সেবা ও রেস্টুরেন্ট।
 


 

মানব হিতৈষী চিকিৎসক ডা.ইউতুকা নাকামুরা প্রতিবন্দ্বীদের কল্যানে ১৯৬৫ সালে জাপান সান ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার আহ্বানে ওমরন ১৯৭২ সালে এগিয়ে এসে এগিয়ে এসে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। ওমরন কিয়োতো তাইয়ো কোম্পানি লিঃ।

আমরা এক এক করে প্রতিটি ফ্লোরে কর্মরত কর্মীদের কর্মযজ্ঞ দেখি আর অবাক হই। প্রতিবন্ধীরা কত নির্দ্বিধায় সাধারণ জনশ্রোতে মিশে গেছে। সমাজের বোঝা না হয়ে তারা এখন সমাজেরই অংশ। সেল্যুট জানাই প্রতিষ্ঠাতা দু'জনকে। ডা. নাকামুরা ও প্রকৌশলী তাতেইশি'কে, আর বলতে ইচ্ছে করছে তোমরা অমর, বেঁচে নেই তবু বেঁচে আছো সবার হৃদয়ে। ডা. নাকামুরার সেই বাণী "নো ওয়ান ইস সো ডিসএবল অ্যা জ বি আনএবল টু ওয়ার্ক"
 

 


সায়োনারা, অতিথিরা বিদেয় নিয়েছে সবাই। আমরাও চলে যাবো। ওমরনের একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক আমাদের গাইড। তিনি আমাদের কিয়োতো স্টেশনে নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে শিনকানসেনে আমরা টোকিও আসবো। বিদায় বেলা ওনারা এলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারও এলেন হুইল চেয়ার চালিয়ে, বিদায় করমর্দন হলো। আমাদের গাড়ি চলতে থাকলো, ওনারা হাত নাড়ছেন। এক সময়ে হারিয়ে গেলেন। তাকিয়ে আছি পেছনে। বাংলাদেশের পতাকাটাও এক সময়ে মিলিয়ে গেলো।



কাজী ইনসানুল হক,
kaziensan@gmail.com

 

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ