|
জাপান কাহিনি:
আশির আহমেদ
-কাজী ইনসানুল হক,
গতবছর বই মেলায় জাপান প্রবাসী
আশির আহমেদের বই "জাপান কাহিনি"প্রকাশিত হয়েছে
এবং বইটি যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। লেখাগুলো
আশির নিয়মিত তার ফেসবূকে
পোষ্ট করতেন, সেগুলোরই সংকলন বই আকারে প্রকাশ। জাপান ও জাপানের প্রবাস
জীবনের টুকিটাকি বিষয় ভিত্তিক লেখাগুলো বেশ তথ্যমূলক ও সরল ভাষায় লেখা,রম্য
ধাচের লেখার ষ্টাইলটা ছিল চমৎকার,ঝরঝরে,মচমচে ,ফলে বিপুল পাঠক পড়তে যেয়ে
বেশ উপভোগ করেছে।বইটির পাঠক নন্দিত হওয়ার এটাই কারন।
আশির সর্বদা যেভাবে কথা
বলেন সেভাবেই লিখেছেন,বই পড়ছি না
আশির বলছে আমি শুনছি,আমার এরকমটাই মনে
হয়েছে। মেধাবী
আশির লেখালেখিতেও সফল বলা যেতে পারে।
আশির আহমেদ এবং আমার জাপানে আসা অনেকটা একই সময়ে।সদ্য তরুণ
আশির বুয়েটে
ভর্তি হতে না হতেই উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে জাপানে আসে। সম্ভবতঃ আন্ডার
গ্রাজুয়েশনের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে।আমি মধ্য তিরিশের,ব্যাবসায়
শোচনীয় মার খেয়ে আব্বা হুজুরের দেশে গমন, সেখানে সূবিধা না করতে পেরে
ভাগ্যান্বশনে জাপানে আসা।আশিরের উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন আর আমার অর্থ উপার্জন
একেবারে উল্টো। কিন্তু লেখালেখির কারনে কিভাবে যেন একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে
যায়।
সে সময় জনপ্রিয় 'যায় যায় দিন' এ আমার 'মেইড ইন জাপান' নিয়মিত কলাম যেতো।
অপটু হাতের অখাদ্য লেখাগুলো যে এতটা পাঠকপ্রিয়তা লাভ করবে ভাবিনি। দীর্ঘদিন
ধরে প্রতি সপ্তাহে একটা করে লেখা যেতো।সময়টা ছিল চিঠিপত্রের জামানার।প্রতিটি
লেখার ভালো মন্দ প্রতিক্রিয়ায় দেশ বিদেশ থেকে অসংখ চিঠি আসতো।জাপান
পোষ্টঅফিস তো আমাকে একটা পোষ্টবক্স
বিনা ভাড়ায় দিয়ে দিল। বিষয় নির্বাচন,সুন্দর
শিরোনাম,কলাম লোগো ও লেখার সাথে গেট আপ সস্তা নিউজপ্রিন্টের কাগজকেও কত
মূল্যবান করতে পারে তা যায় যায় দিনের সব কলামের জনপ্রিয়তার কথা মনে করিয়ে
দেয় নেপথ্যে একজন আধুনিক সম্পাদক শফিক রেহমানের কথা।
আশিরের সাথে যখনই দেখা হতো, লেখা নিয়ে কথা হতো। খুউব বিনীতভাবে ভুল ত্রূটি
ধরিয়ে দিত। আড্ডাবাজ
আশিরের একটা গ্রুপ ছিল,সবার মধ্যমনি হয়ে আসর
জমাতো,মানুষকে অবাক করার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল, মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই
শুনতো।মনে পড়ে ২০০২ সালে সংগীতা -সর্বানুর নতুন সংসারে মিয়ামায়েদায়রার
বাসায় সারা দিনব্যাপী আড্ডার কথা,আশির সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিল।
চিরচেনা আশির আচমকা পাল্টে গেল যেদিন আমাদের ড:মূহাম্মদ ইউনূস নোবেল সম্মান
পেলেন।মাত্র কয়েক ঘন্টায় আমরা জাপান প্রবাসীরা একটা বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন
করে ফেললাম। মনি অফিস ছুটি নিয়ে হলের ব্যাবস্হা করলো,আশির গ্রামীন ব্যাংক ও
ইউনুস স্যারের ওপর নানান তথ্য নিয়ে একটা প্রেজেন্টেবল ডকুমেন্টারি তৈরী করে
ফেললো শাহেদ সহ অন্য বন্ধুদের সহযোগিতায়।
হল ভর্তি দর্শকদের নিয়ে আমরা ড: ইউনুসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালাম।
রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দ্দৌলা প্রধান অতিথি,প্রফেসর নারা বিশেষ অতিথি, আমি
সভাপতিত্ব করলাম। দল মত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী শুভেচ্ছা বক্তব্য
রাখলেন।আশির দীর্ঘক্ষন ধবে পাওয়ার পয়েন্টে ডকূমেন্টারি দেখালেন,কথা বললেন।
বর্হিবিশ্বে প্রবাসীরাই প্রথম জাপানে এ ধরনের অনুষ্ঠান করলেন।
ড:ইউনুস পূর্ব নিদ্ধারিত সফরে নেবেল সম্মান পাওয়ার পরপর চীনে গেলেন, সেখান
থেকে জাপানে আসবেন। টোকিওতে তাকে সম্বর্ধনা দেয়ার বিশাল আয়োজন, বিশ্বের
সুপার মিডিয়ার সাংবাদিকরা, জাপানের নিউজ মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়েছে
বাংলাদেশের ড: ইউনুসকে কভার করতে। সেখানেও আমরা কজন বাংলাদেশী মাত্র।আশির
,শাহেদ ও বন্ধূরা।প্রশ্ন পর্বে
আশির দাড়াচ্ছে,ঝটপট ড:ইউনুসের উপর একটা url
ও উদ্বোধন করা হলো তাকে দিয়েই ।স্বদেশী হিসেবে আমাদের কজনার অবস্হান
স্যারের খুউব কাছাকাছি।আশির যখন স্যারকে বললেন তিনি গ্রামীনে স্যারের সাথে
কাজ করতে চান স্যার তাকে ঢাকায় আসতে বললেন,আমরা তার নিরব শ্রোতা।এরপর
জানলাম আশির জাপান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন,এবং গেলেনও।ড:মোহাম্মদ ইউনূস সঠিক
মানুষটাকেই পাশে নিয়েছিলেন কারন পরবর্তিতে গ্রামীনের জনহিতকর কর্মযজ্ঞে
কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড:
আশির আহমেদের ভূমিকার কথা আমাদের
অজানা নয়।
আশির মনেপ্রানে বাংলাদেশকে ভালবাসেন। এখলাছপুর তার গ্রামের নাম আমি প্রথম
জেনেছি তার মুখ থেকে, এক জাপানী বন্ধূকে সাথে নিয়ে একটা বিপ্লব ঘটিয়েছেন
তিনি। এলাকার বেশ কটা স্কূলে প্রথমে কিছূদিন ফ্রি দৈনিক পত্রিকা দিয়ে পাঠক
তৈরী করা ও পরে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস তৈরী করে বানিজ্যিকভাবে আশে পাশের কটি
গ্রামে নিয়মিত পত্রিকা বিক্রির ব্যাবস্হা করেছেন।যে গ্রামের কেউ কখনও দৈনিক
পত্রিকা যোগাযোগের কারনে সংগ্রহ করতে পারতোনা সেখানে পরবর্তিতে দূইশত দৈনিক
বিক্রি হতো.বেশ ক কপি ইংরেজী ডেইলী ও গ্রাহকরা কিনতেন।তার সাফল্যের এই
কাহিনী পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জেনেছি।দেশ নিয়ে তার নানান ভাবনা শূধূ
বাংলাদেশের মিডিয়ায় নয়,জাপানের মর্যাদাবান মিডিয়াগুলোতে বহুভাবে প্রকাশিত
হয়েছে।voip নিয়ে তার লেখা আমরা জাপানের বাংলা কাগজ 'পরবাস' এ ছাপিয়েছিলাম
সেই কবে যখন বিষয়টা ছিল সবার অজানা । বাংলাদেশের সব গুলো গ্রামের আলাদা
আলাদা হোমপেজ করার প্রচেষ্টার সাথে
আশির জড়িত।গ্রামীন সদস্যদের হাতে
ডিজিটাল ক্যালকুলেটর,হেলথ কিট দিয়ে স্বাস্হ্য সেবায় গ্রামীন জনপদে যে
বিপ্লব এগুলের নেপথ্যে আমাদের প্রিয়
আশির।
শুরু করেছিলাম
আশিরের বই জাপান কাহিনি নিয়ে। গত বছর আচমকা মায়ের অসূস্হতার
খবর পেয়ে মাত্র দূ ঘন্টার প্রস্তূতিতে দেশের পথে হানেদা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।
বেরুবার মুহূর্তে ঘরের পোষ্ট বক্সে
আশিরের পাঠানো 'জাপান কাহিনি' সৌজন্য
সংখাটি পেলাম।সাথে নিয়ে রওনা হলাম।বিমান তখনও ছাড়েনি,জাপান কাহিনী
খুললাম,উৎসর্গ পাতা দেখে নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলাম। আমার মতো একজন অতি
সাধারন মানূষকে এতটা মর্যাদা দেয়ার দরকার ছিলনা।আশির লিখেছে "সূপ্রিয় ইনসান
ভাইকে,সেই কবেকার কথা,মেইড ইন জাপান পড়ে আপনার ভক্ত হয়ে যাই,অটূট থাকূক সেই
ভক্ত সম্পর্কটুকু"
আশিরকে একটা ক্ষূদে ম্যাসেজ পাঠালাম,"আশির, মৃত্যুসজ্জায়
মা .খবর পেয়ে দেশে ছূটছি,আপনার বই পেয়ে কিছূটা শোক ভুলে গেছি,বইটা পড়বো এবং
কেন যেন মনে হচ্ছে মাকে যেয়ে সূস্হ দেখবো।" হ্যা তাই হয়েছে।দেশ থেকে ফিরে
আসার পর আশির জানতে চেয়েছেন, কেমন আছেন আমার মা। বলেছ,
আলহামদুলিল্লাহ সুস্হ।
এবারের বইমেলায়
আশির আহমেদের জাপান কাহিনি-২ বেরুচ্ছে।
প্রচ্ছদটা অসাধারন, এত অর্থবহ পোষ্টার সহসা চেখে পড়েনা। প্রচ্ছদ শিল্পীকে
অভিনন্দন।
কাজী ইনসানুল হক,
kaziensan@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|