কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে
একান্ত সাক্ষাৎকারে নায়ক সোহেল রানাঃ চলচ্চিত্র অঙ্গনের অতীত বর্তমান ও
ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা
বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন করে তার পরিচয় করে দেয়ার মতো কিছুই নেই। সবাই তাকে
চিনেন এবং জানেন। বড় পর্দায় যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন
গুণী ও বড় শিল্পীদের তালিকা করা হলে যে নামটি প্রথম দিকেই উচ্চারিত হবে,
তিনি আর কেউ নন; আমাদের প্রিয় নায়ক মাসুদ পারভেজ। যিনি চলচ্চিত্র প্রেমী এবং
দর্শকের কাছে সোহেল রানা নামেই সমধিক পরিচিত।
সমপ্রতি এক বৃষ্টিস্নাত এক পড়ন্ত বিকালে রাজধানীর উত্তরাস্থ তার বাসায় কথা
হয় আমাদের কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের ঢাকা প্রতিনিধির সাথে। চলতি
বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে
সোহেল রানার অব্যক্ত কিছু কথা। তিনি বলেছেন দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, বলেছেন
বিশ্বকাপ ফুটবল, পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, ভূমি দসু্যদের অপতৎপরতা,
চলচ্চিত্র অঙ্গনের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনার কথা।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজকে দেয়া সোহেল রানার এ সাক্ষাতকারটি গ্রহণ
করেছেন ঢাকা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত পুরো বিশ্ব।
বিশ্বকাপের জ্বর আপনাকে কতটুকু ছুতে পেরেছে?
সোহেল রানা : বিশ্বকাপের সবগুলো খেলা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
মোটামুটিভাবে বিশ্বকাপ জ্বর আমাকে আক্রান্ত করতে পারেনি। কারণ আমি আমাদের
দেশের অন্যান্য তারকাদের মতো তীব্র জ্বরে ভুগছি না। আমার খুব কষ্ট লাগে যখন
টেলিভিশনে মিডিয়া ভুবনের অনেক তারকারা নিজেদের ইচ্ছামত কথা বলে যাচ্ছেন
বিশ্বকাপ নিয়ে। এমননো অনেকে বলেছেন, বলটি পাস না দিয়ে ডজ দিলে গোল হতো। এটা
এক ধরণের মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না। যারা কোনদিন ফুটবল খেলেননি, তারাই এখন
ফুটবলবোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাছাড়া আমাদের কতিপয় ফুটবল খেলোয়ার
আছেন যারা বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমার
দেশের একজন খেলোয়ার ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার খেলোয়ারদের ভুল ধরছেন। নিজের
যোগ্যতা সম্পর্কে না জেনেই এমন এমন মন্তব্য বেড়িয়ে আসছে যেগুলো সত্যিকার
অর্থেই আমাকে ভীষণভাবে কষ্ট দেয়।
আমি বলতে চাই, বিশ্বফুটবলে দুই ধরনের খেলা হয়। এবারের বিশ্বকাপেও তাই হচ্ছে।
সাধারণত ইউরোপের দেশগুলো শক্তি নির্ভর ফুটবল খেলে থাকে, যে খেলায়
নান্দনিকতার কমতি রয়েছে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো খেলে নান্দনিক বা
ছন্দময় ফুটবল। এখানে দুঃখের বিষয় এই যে, এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোন
সুপারস্টার উপহার দিতে পারেনি। আর্জেন্টিনার লিওয়েন মেসির খেলায় সুপারস্টার
হবার সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে বলে মনে করেন চিত্র নায়ক সোহেল রানা। ব্রাজিলের
খেলায় আগের সেই ছন্দ না থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি মনে করি দুঙ্গা
যে দলটি নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিলেন সে দলে কোন সুপারস্টার নেই। রোনালদিনহো,
রোনালদোর, আদ্রিয়ানোর মতো সুপারস্টারের অনুপসিস্থতির কারণেই এবারের
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ব্রাজিলকে। অন্যদিক বিবেচনায় ব্রাজিল-
আর্জেন্টিনার মধ্যে শক্তির দিক থেকে তেমন কোন পার্থক্য নেই। যেদিন যে দল
ভালো খেলবে তারাই বিজয়ীর হাসি হাসবে। আমি আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দুই দলের
খেলায় পছন্দ করি।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : বৃষ্টিস্নাত দিন আপনার কেমন লাগে?
সোহেল রানা : এখন আর ভালো লাগে না। আপনারা শুনে হয়তো হাসতে পারেন যে, আমার
অনেক পছন্দের দিন হচ্ছে বৃষ্টির দিন। বর্তমানে বর্ষকাল চলছে। বৃষ্টিও হচ্ছে
প্রতিনিয়তই। কিন্তু বৃষ্টির দিনে আমি এখন যা সবচেয়ে বেশি মিস করি সেটি হচ্ছে
ব্যাঙের ডাক। আগে বৃষ্টি নামলেই রাতের বেলায় যখন ব্যাঙগুলো সম্মিলিতভাবে
ক্যা,কু,ক্যা,কু....করে ডাকতে থকে তখন আমি খুব আনন্দিত হতাম। মনে হতো
ব্যাঙগুলো মনের সুখে সম্মিলিতভাবে গান করছে। নগর জীবনের যান্ত্রিকতা আমার
কাছ থেকে এই প্রিয় মুহুর্তটাকে কেড়েই নিয়েছে বলতে পারেন। তারপরও বৃষ্টির
প্রতি আলাদা দুর্বলতা থাকায় আমার বাড়ির ৩ তলায় আলাদা একটা রুম করা হয়েছে
যেটির ছাদ টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যখনই বৃষ্টি নামে বৃষ্টির টাপুর-টুপুর
শব্দ শোনার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে যায়। আসলে বাংলা মানেই বৃষ্টিভেজা সেঁদো
মাটির গন্ধ, বাংলা মানেই টিনের ছাদে টাপুর-টুপুর ছন্দ।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : নগর জীবনে নান্দনিকতা হারিয়ে যাচ্ছে কেন?
সোহেল রানা : নগর জীবন আর নান্দনিকতা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ধারণা। শুধু
আদ্যাক্ষর হিসেবে নগরজীবনের 'ন' আর নান্দনিকতার 'ন' এর মিল রয়েছে। এর বেশি
কিছু মিল থাকতে পারে না। নগরজীবন একটা যন্ত্র। এ যন্ত্রটা একটা কিলিং মেশিন
হিসেবে কাজ করছে। আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করে যে নগর গড়ে উঠছে সেখানে
নান্দনিকতা খুঁজে পাওয়াই যাবে না। আমি মনে করি, আমাদের দেশে নগর জীবন
নান্দনিকতাকে হত্যা করছে প্রতিনিয়তই। একটা মেশিন যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবে,
নগরজীবনও একটা মেশিন। যে মেশিনে নান্দনিকতা বলতে কোন কিছুই নেই।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : প্রতিনিয়তই রাজধানীর আশে-পাশের এলাকাগুলোতে
নদী-খাল ভরাট করছে ভূমিদস্যুরা। যার ফলে আমারা হারিয়ে ফেলছি নান্দনিকতা। এ
ব্যাপারটি আপনাকে কতটুকু মর্মাহত করে?
সোহেল রানা : আমাকে মর্মাহত করে না। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে
দুর্বল করে দেয় দেশের রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনগুলো। যদি রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনগুলো
আমাকে ক্ষমতা দিতো অথবা রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনগুলো না থাকতো, তাহলে ঐ
বার্স্টাডগুলোকে গুলি করে মেরে ফেলতাম।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : আপনি মুক্তিযদ্ধের ময়দানে সরাসরি লড়াই করেছেন।
আপনার কি মনে হয় যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক
ইতিহাস জানতে পারছে। যদি জানতে না পারে তবে এর দায়ভার কার?
সোহেল রানা : মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের ৮০ ভাগই জানে না মুক্তিযুদ্ধ
পরবর্তী প্রজন্ম। এই সঠিক ইতিহাস না জানার জন্য দায়ভার সরকার এবং বিরোধী
দলেরই। যখন যে দলই ক্ষমতায় যায় তখন তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা
করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্যটা বেড়িয়ে আসেনা।
'৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসারি অংশগ্রহণ করে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে
অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাদেরকেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়। যিনি
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে সহয়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন
তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বলা যায়। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের
মধ্যে অনেক আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশনেননি। আমি তাদের
অবদানকে ছোট করে দেখছি না। মুক্তিযুদ্ধের সর্মথকরা ছিলেন বলেই এদেশ স্বাধীন
হয়েছে।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : সমপ্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ সংসদ নির্বাচনে
আপনি কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতা
হিসেবে কি কি চাওয়ার আছে?
সোহলে রানা : মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হয়ে
থাকলে তাদের সাহায্য বা অনুদান দেয়ার কথা কোন মন্ত্রী, এমপি এমনকি
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও আর বললেন না। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করে বলছি,
আমরা কারো দয়া ভিক্ষা চাই না। আমরা চাই শুধু আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু।
মুক্তিযোদ্ধাদের যথপোযুক্ত সম্মান না দিলে এর আখের ভালো হবে না। বঙ্গবন্ধুর
নিদের্শে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এখনো তার আদর্শে বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে জাতীয় ৪ নেতার যে
অবদান তাও আমাদের আরো বেশি শ্রদ্ধভরে স্মরণ করতে হবে। বর্তমান সরকার যদি বলে,
তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার তাহলে তারা হয়তো আর কোনদিন বলবে না
মুক্তিযোদ্ধাদের সহয়তা দানের কথা।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র '
ওরা ১১ জন' নিয়ে কিছু বলুন।
সোহেল রানা : আমিই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ নির্মাণ করেছি।
কিন্তু এ জাতি এখনো আমাকে ন্যূতম কৃতজ্ঞতাবোধটুকু দেখায়নি। মুক্তিযুদ্ধ থেকে
আমাদের সাথে কেউ ফিরেছিল আবার কেউ ফিরেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের
দারোয়ান চাচা বলেছিলেন, 'আপনারাতো সব স্যার ফিরা আইলেন না।' তার এই কথা
থেকেই অনুপেরণা নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং চলচ্চিত্রে আসা।
কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : জীবনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কতটুকু
ব্যবধান দেখতে পাচ্ছেন?
সোহেল রানা : এখন জীবনের বিকালে অবস্থান করছি। হয়তো আর কয়েকটা দিন পর পড়ন্ত
বিকালে পোঁছাবো। তবে এ জীবনে খোদা যা দিয়েছেন তাই নিয়েই সন্তুষ্ট আছি। তবে
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব এবং বিশেষ করে
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দিতে সর্বত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাব।
আপনাকে ধন্যবাদ।
>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে
একান্ত সাক্ষাৎকারে সিনথিয়া: টাকার পেছনে ছুটছে নতুনরা
>>কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেনঃ ভারত থেকে কয়লা আমদানি করে বিদ্যুত
উৎপাদনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী
>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে
একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলাঃ
বাবা চাননি আমি পেশাদার কণ্ঠ শিল্পী হই
>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে
একান্ত সাক্ষাৎকারে পার্থ বড়ুয়াঃ
সংগীত-অভিনয়কে কখনো আলাদা করে দেখিনি
>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এটিএম
শামসুজ্জামানঃ
কপালে থাকলে ঠেকায় কে
>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে
একান্ত সাক্ষাৎকারে মোনালিসা:
চলচ্চিত্র আমাকে দিয়ে হবে না
>>কমিউনিটি
স্কাইনেটজেপি’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জয়া আহসানঃ
কিছুটা হাততালি হয়তো পাই
>>কমিউনিটির
মুখোমুখিঃ অভিনয় মডেলিং ও নতুন সংসার নিয়ে প্রভা
>>কমিউনিটি
স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার সব কাজই যত্ন নিয়ে
করি : চুমকী
>>কমিউনিটির
সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে চলচ্চিত্র নায়ক ফেরদৌসঃ আমাদের
চলচ্চিত্রের কিছু প্রযোজক পরিচালক খুব স্বার্থপর
>>কমিউনিটির
সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ যে পতাকার জন্য
লক্ষ মা-বোনরা ইজ্জত হারিয়েছেন, রাজাকারদের গাড়িতে সেই পতাকাই
উঠেছিল
>>কমিউনিটিকে
দেয়া সাক্ষাতকারে স্পিকারঃ দুর্যোগ থেকে হাওরবাসীকে বাঁচাতে
আলাদা
হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে
>>কমিউনিটিকে
অর্থমন্ত্রীঃ বিদ্যুৎ সংকটের কারনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না
>>১৯৪৮ থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূচনাঃ বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক রওশন আলম
>>প্রবাসীদের
দেশের প্রতি গভীর টান চোখে
পড়ার মতঃ বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা তানভীর
মোকাম্মেল
[প্রথমপাতা] |