[প্রথমপাতা] |
কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ যে পতাকার জন্য লক্ষ মা-বোনরা ইজ্জত হারিয়েছেন,
রাজাকারদের গাড়িতে
সেই পতাকাই উঠেছিল
কমিউনিটি ডেস্ক ।।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাপান সফরে এসেছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
মাননীয় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি
এসেছিলেন টোকিও বৈশাখি মেলাতেও। সেখানেই কমিউনিটির একান্তে কিছু কথা হলো
জনাব লতিফ সিদ্দিকীর সাথে।
তার এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলোঃ
আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মেলায় এসে কেমন লাগছে?
উত্তরঃ খুবই ভাল লাগছে। প্রবাসের ভাইয়ের-বোনেরা, প্রবাসের যন্ত্রনাময়
জীবনের মাঝেও যে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন এটাকে সত্যিই খুব ধন্যবাদ জানাতে হয়।
প্রশ্নঃ জাপানে কি এটাই প্রথম সফর?
উত্তরঃ না। এর আগেও একবার এসেছিলাম। তবে মন্ত্রী হিসেবে এটাই প্রথম সফর।
প্রশ্নঃ এবার বাংলাদেশের কিছু প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের বর্তমানে যে বিদ্যুত
সংকট চলছে কিন্তু উত্তরনের তেমন কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা, এ ব্যাপারে
সরকারের কি বক্তব্য?
উত্তরঃ বিদ্যুত সংকটের জন্য আমি চারদলীয় জোট সরকারের অপকর্মের কথাই বলব।
তারা এত বছর থেকে গেছে কিন্তু বিদ্যুত বাড়ায় নি। তারা শিল্পকারখানার
অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ায়নি, গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধিরও
উদ্যোগ নেয়নি। এ সমস্যা আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমাধান করতে
পারব, তবে একটু সময় লাগবে।
প্রশ্নঃ কিন্তু কিছু কিছু বিষয়গুলোকে যেমন মনে হচ্ছে জনগনের উপর পরীক্ষা করে
দেখা হচ্ছে, যেমন ঘড়ির কাঁটা কিম্বা দু'ঘন্টা লোড শেডিং এর বিষয়টি। আপনার
কি মনে হয়না এতে করে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে?
উত্তরঃ ঘড়ির কাঁটা কোন এক্সপেরিমেন্টের বিষয় ছিলনা। পৃথিবীর অনেক দেশেই
সূর্যালোকের ব্যবহারের জন্য এটা করা হয়। আমাদের মত দেশগুলো যেগুলোর বিদ্যুত
ঘাটতি ব্যাপক সেগুলোর জন্য এটা খুবই জরুরী। ডে-লাইট সেভিং এর ফলে ২০০
মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় হয়েছিল। এটা কিন্তু কম কথা নয়।
আর দেশের ৮০ ভাগ লোকই এখনো বিদ্যুতের আওতার বাইরে। দেশের মাত্র ২০ ভাল লোক
বিদ্যুতের সুবিধাভোগী। তারা জনগনের অংশ কিন্তু জনগনের পুরোটা নয়। তারা
জনগনের ক্ষুদ্র অংশ।
প্রশ্নঃ কিন্তু এর প্রভাব কি গোটা জনগনের উপর পড়ছেনা? যেমন ধরুন এই যে
দু'ঘন্টা লোড শেডিং করা হয়েছিল -সেটা কি সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস করছেনা?
উত্তরঃ জনপ্রিয়তাটাই একমাত্র কথা নয়। আমি আগেও যা বলেছি, জনপ্রিয়তার বিষয়টি
হলো জনগনের মাঝে। সাধারন জনগন যারা বিদ্যুত ব্যবহার করেনা তাদের
খুশী-অখুশীর কোন ব্যাপার নেই। এটা নিয়ে তারাই হৈ চৈ করছে যারা বেশি
সুবিধাভোগী। আমার দেশের কৃষি বা শিল্প উৎপাদন বন্ধ রেখেতো আমি কাউকে এসি
চালাতে দিতে পারিনা।
প্রশ্নঃ এসি বন্ধ রাখার বিষয়টি আপনারা কি ভাবে বিষয়টি মনিটর করতে পারছেন?
উত্তরঃ মনিটর করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তবে পুরোটা যে মনিটরিং এর মধ্যে
এসেছে -এ কথাও বলা যাবেনা। চারদলীয় জোটের পাঁচ বছর ও তত্বাবধায়ক সরকারে
দু'বছরে যে অব্যবস্থাপনা হয়েছে তা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে।
অনেক ক্ষেত্রে অনেক অব্যবস্থাপনা রয়েছে, আমাদের দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে।
জিয়াউর রহমান হয়ত যুদ্ধ করেছিলেন কিন্তু সেটা পরিস্থিতির কারনে। দেশপ্রেমের
জন্য নয়। সে মানুষের চরিত্রকে নষ্ট করেছে। সে নষ্ট চরিত্রকে আবার ঠিক করতে
অনেক সময়ের প্রয়োজন। আপনারা যদি খুব তাড়াতাড়ি সব সমস্যার সমাধান চান, ওয়ান
নাইট প্রিপারেশনে সব কিছুর সমাধান সম্ভব নয়। এটা কোন নকলবাজি নয়। তার কারন
মানুষের অন্তরকে তৈরি করতে হবে।
প্রশ্নঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কি যথেষ্ট সময়ক্ষেপন হচ্ছেনা?
উত্তরঃ ওদেরকে শুধু যুদ্ধাপরাধী বলব কেন, ওরা আমার জাতির চেতনা বিরোধী। আমরা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সচ্ছতার ভিত্তিতেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন
করতে চাই। আমাদেরতো সমস্যাও আছে, যুদ্ধাপরাধীরা কিছু দিন আগেও দেশ দাপিয়ে
বেড়িয়েছে। যে জাতীয় পতাকার জন্য আমাদের লক্ষ মা বোন তাদের ইজ্জত হারিয়েছেন
সে পতাকা তারা রাজাকারদের গাড়িতে উড়িয়ে পতাকার মর্যাদাই নষ্ট করে দিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীরা তো চিহ্নিত। এখন বিচার করার পর তারা বলল যে এটা রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণদিত। সে জন্যই আমরা চাই বিচারটা যাতে সুষ্ঠু হোক।
প্রশ্নঃ সরকারের অবশিষ্ট সময়ের ভিতরে বিচার প্রক্রিয়া কি শেষ হবে বলে মনে
হয়?
উত্তরঃ আমরা মনে করি তা হবে। কারন সব তো, সাক্ষী সাবুদ, প্রমান সবই
প্রস্তুত আছে, পত্র-পত্রিকা, বই-পুস্তক, ভিডিওসহ বহু কিছু রয়েছে প্রমানের
জন্য। কাজেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবেনা।
প্রশ্নঃ বিচার প্রক্রিয়া হয়ত শেষ হলো কিন্তু তার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার মত লম্বা হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে? বিশেষ
করে যদি এর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসে সেক্ষেত্রে এরকমটি ঘটার সম্ভাবনা
কি উড়িয়ে দেয়া যায়?
উত্তরঃ এরপরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবেনা তা ভাবছেন কি করে? আমাদের
প্রতিশ্রুতি মত আমরা কাজ করতে পারলে, যেমনটা আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার রায়
বাস্তবায়ন করেছি তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন
করলে, বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করতে পারলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে।
আপনি কেন প্রেজিউম করছেন যে আওয়ামী লীগ আসবেনা?
আমি এখানে আসার আগে বৃহত্তর রংপুর জেলায় তিনটি জনসভা করে এসেছি। প্রচান্ড
গরমের মধ্যে সেখানে ৩০/৩৫ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন -সেটাকে আমি কি বলব?
প্রশ্নঃ মহাজোট সরকারের প্রথম বছর দেখা গেছে জনপ্রিয় বেড়েছে। কিন্তু
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে এই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ছে, এটাকে কোন দৃষ্টিতে
দেখছেন?
উত্তরঃ এসব বাড়া-কমার নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু? আমরা কাজ করছি। পাঁচ বছর পর
জনপ্রিয়তা প্রমান হবে।
প্রশ্নঃ স্বাধীনতার ঘোষনা প্রসঙ্গে, জিয়াউর রহমান রনাঙ্গন থেকে দেয়া একটি
ইন্টারভিউতে নিজে বলেছেন তিনি মার্চের ২৭ তারিখে ঘোষনা দিয়েছিলেন। আমাদের
সংগ্রহে সেই ভিডিওটি রয়েছে। কিন্তু সরকার এই ইন্টারভিউটি প্রচারের ব্যপারে
তেমন আগ্রহী নয়। কেন? এটা কি সরকারের সংগ্রহে নেই? এটা দিয়েই স্বাধীনতার
ঘোষনার বিতর্কের একবারেই সমাপ্তি টানা সম্ভব।
উত্তরঃ জিয়ার ঘোষনা দেবার বিষয়টিই অবান্তর। দেশের সাত কোটি মানুষ এক নাম না
জানা মেজরের ঘোষনায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে? তাই আবার হয় নাকি? সে ২৭ তারিখ
ঘোষনা দিল আর অম্নি মানুষ যুদ্ধে নেমে গেল? বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য
দেশের মানুষকে প্রস্তুত করেছেন। ৭ই মার্চে তিনি ঘোষনা দিয়েছেন এবারের
সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম -এভাবে
তিনি আমাদের প্রস্তুত করেছেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমি কি জিয়াউর
রহমানের ঘোষনায় যুদ্ধ করেছি নাকি?
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা কে দিয়েছে তা নিয়ে আমি জবাব দিতেই রাজী নই। স্বাধীনতার
ঘোষনা কোথাকার কোন হরিদাস বলল, তাতে কি যায় আসে। ৭ই মার্চ স্পষ্ট ঘোষনা আসল
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম -তারপর আর কি আছে? আমার নেতৃত্বে দেশের
প্রথম বেসামরিক যোদ্ধারা পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল সেটা
এপ্রিলের ৩ কি ৪ তারিখ ছিল -তখনও আমি জিয়াউর রহমানের নাম জানিনা। তাছাড়া
দেখুন, মাত্র ১০ মেগাওয়াটের এক সম্প্রচার কেন্দ্রের ঘোষনা কদ্দুর পর্যন্ত
যেতে পারে?
কমিউনিটিঃ আমাদেরকে সময় দেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
[প্রথমপাতা] |
|