[প্রথমপাতা]

 

 

 

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এটিএম শামসুজ্জামানঃ কপালে থাকলে ঠেকায় কে

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।

এটিএম শামসুজ্জামান অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। অভিনয়ের সীকৃতি হিসেবে চারবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এটিএম শামসুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হবিবুর রহমান

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : বাংলা চলচিত্রের বর্তমান অবস্থা কেমন?

এটিএম শামসুজ্জামান : অনেকটাই ভালো। তবে ষাঁ, সত্তর, আশির দশকের মতো নয়। তখন সব শ্রেণীর মানুষ সপরিবারে স¡তঃসূর্তভাবে সিনেমা হলে যেত। এখন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীই কেবল বাংলা ছবির দর্শক। বাকিরা হলবিমুখ।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : এ অবস্থা কেন?

এটিএম শামসুজ্জামান : এ অবস্থার জন্য দায়ী একটি নিরকর শ্রেণী। তারা এই শিলে পুঁজি বিনিয়োগ করে। অযোগ্য কিছু লোক চিত্র পরিচালনায় আসে। পুরো নব্বই দশক তাদের দখলে চলে যায়। শুরু হয় অশ−ীলতা, মাঝেমধ্যে দু-একটি ভালো ছবি যে হয়নি, তা নয়। তবে বাজে ছবির ভিড়ে সেগুলো হারিয়ে যায়। হলবিমুখ দর্শকদের আর হলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : আপনার চলচিত্রে আগমন কি হিসেবে?

এটিএম শামসুজ্জামান : আমি ১৯৬১ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচিত্রে আসি। ছবির নাম বিষকন্যা।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : খলনায়ক এবং কৌতুক অভিনেতা দুইভাবেই দর্শক আপনাকে পেয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই আপনি সফল। এ বিষয়ে অনুভূতির কথা বলুন।

এটিএম শামসুজ্জামান : আমি অভিনয় শুরু করি ১৯৬৫ সালের দিকে। ছোঁখাটো চরিত্রে অভিনয় করে চলেছি। তখন মানুষ আমাকে তেমন চিনত না, অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট এলো ১৯৭৪ সালে। চলচিত্রকার আমজাদ হোসেন তার 'নয়নমণি' চলচিত্রে একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে আমাকে কাস্ট করেন। পুরোপুরি মন্দলোক। আমি নিজেও খুব নার্ভাস ছিলাম। এতবড় চরিত্র কিভাবে সামাল দেব। যাই হোক আতবিশ্বাসের সঙ্গে মণ-প্রাণ দিয়ে কাজ করলাম। উৎরে গেলাম। ছবিটি মুক্তির পর ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে গেলাম। এরপর নির্মাতারা আমাকে একাধারে মন্দ চরিত্রে কাস্ট করতে থাকলেন। এক সময় মনে হলো আমি টাইপড হয়ে যাচ্ছি। গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করা দরকার। ধীরে ধীরে মন্দলোকের পাশাপাশি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে কাজ করতে শুরু করলাম। এখানেও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে গেলাম। কপালে থাকলে ঠেকায় কে।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : অভিনয় জীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে?

এটিএম শামসুজ্জামান : স্মরণীয় ঘটনা তো অনেক, আচ্ছা একটি ঘটনার কথাই বলি। একবার এক গ্রামে গেছি শুটিংয়ে। শুটিংয়ের ফাঁকে হাঁপাতে হাঁপাতে একটি পুদ্দর পাড়ে এসে পৌঁছলাম। পুদ্দর থেকে কলস ভরে পানি নিচ্ছিল এক মহিলা। পানি নিয়ে মহিলাটি উপরে উঠে এসে আমাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠল, 'আল্লাগো এই শয়তান বেডাঁ এইহানে কি চায়, আমার সারা দিনডাই তো যে আইজ বরবাদ হইয়া গেলো। ওই বেডা দূর হ এহান থেইক্যা।'

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : অভিনয়ের সীকৃতি হিসেবে কি পেয়েছেন?

এটিএম শামসুজ্জামান : প্রকৃত সীকৃতি তো দর্শকদের ভালোবাসা, পাশাপাশি বহু সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার, সেই সঙ্গে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পেয়েছি চারবার।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : আপনি তো কাহিনী ও চিত্রনাট্য রচনা এবং পরিচালনা করেছেন। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

এটিএম শামসুজ্জামান : আমি প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখে 'জলছবি' চলচিত্রের জন্য। সেটা ষাটের দশকের শেষের দিকের কথা। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত তো শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছি। ২০০৬ সালে পরিচালনা করলাম 'এবাদত' নামের ছবিটি।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : পরিচালনার কাজটি অব্যাহত রাখেননি কেন?

এটিএম শামসুজ্জামান : বর্তমানে রুচিশীল প্রযোজকের বড়ই অভাব। এ জন্যই এগুতে পারিনি।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : টিভি নাটকে আসা কিভাবে?

এটিএম শামসুজ্জামান : অভিনয় জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটক করতাম। সত্তর দশকে চলচিত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ছোঁ পর্দার কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। নব্বই দশকে চলচিত্রে অশ−ীলতা এলো। আবার চলচিত্র ছেড়ে টিভিতে চলে যাই এবং নিয়মিত অভিনয় করে আসছি। পাশাপাশি ২০০০ সালের পর থেকে চলচিত্রের অবস্থা আবার কিঞ্চিৎ ভালো হয়ে আসায় চলচিত্রেও নিয়মিত কাজ করছি।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় কোনটি?

এটিএম শামসুজ্জামান : আমার ধারণা, শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা এখনো করা হয়নি। তবে এর জন্য অপেক্ষায় আছি।

কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজ : আপনার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা কি?

এটিএম শামসুজ্জামান : আমি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করে যেতে চাই যাতে আমার মৃত্যুর পরও দর্শক আমাকে মনে রাখে।

 

[প্রথমপাতা]