ঈদ আনন্দে চেতনার ছোঁয়া
-সফিউল্লাহ
আনসারী-
সিয়াম সাধনা শেষে বিশ্ব
মুসলিমের ঘরে আনন্দের বারতা নিয়ে আগমন ঘটে পবিত্র ঈদুল ফিতরের। ভেদাভেদহীন
সমাজ বিনির্মানে ঈদের ভুমিকা অপরিসীম।ঈদ শুধু নিছক আনন্দ আর ফুর্তির নাম
নয়;এ থেকে আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষনীয় আছে অনেক কিছুই।সাম্য-মৈত্রী-শান্তি
আর মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সওগাত নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় ঈদুল
ফিতর।এদিনে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কোন মানুষের ভেতর আমিত্ব থাকেনা ।ঈদুল
ফিতর উৎসব এবং ইবাদাতের আধ্যত্বিক স্বাদ দিয়ে যায় প্রতিটা মুমিনের মনে।ধর্মীয়
মুল্যবোধে পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনাকে ঈদের আনন্দ চেতনার
ছোঁয়ায় মানবিকতাকে জাগ্রত করা।
ইসলাম শান্তির ধর্ম।ইসলাম শুধুমাত্র ধর্ম নয়;পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাও।ঈদুল
ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় ও জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ উৎসব হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত।পবিত্র রমজান মাসের রহমত,মাগফেরাত ও নাজাতের শেষেই আসে খুশির ঈদ।
পশ্চিমাকাশে উদিত সাওয়ালের রূপালী চাঁদ আনন্দের বারতায় উদ্বেলিত করে আমাদের
মন ও প্রাণ। রোজাদারের মনে এরচেয়ে খুশি ঐ মুহুর্তে আর অন্যকিছুই থাকেনা।
সাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়ার সাথে সাথেই প্রতিটি মমিন-মুসলমানের ঘরে ঘরে
আনন্দের ঢল নামে।নবী কারিম (সা.) বলেছেন-‘প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ রয়েছে এটি
হল আমাদের আনন্দ ‘ঈদ’ মুসলমানদের জন্য এবং ইসলামের আনন্দ ও একটি নৈতিক মান
আছে অন্যান্য উৎসব আর ঈদ এক কথা নয়।ঐসব মেলা তামাশার বদলে ঈদের ব্যবস্থা করা
হয়েছে।ঈদ উৎসবের আনন্দ বস্তুগত নয়, ধর্মীয় গুরুত্বের।ঈদের আনন্দ কেবল
রোজাদাররাই উপভোগ করেন আবেগ উপলব্দীর চেতনায়।বিশ্ব মুসলিমের সার্বজনীনতা এ
উৎসবকে দিয়েছে আলাদা ঐতিহ্য ও আধ্যাত্বিক স্বাদ।
অন্য ধর্মের মতো ইসলাম ধের্মের উৎসবগুলো শুধুই আনন্দ দেওয়ার জন্য
নয়;সওয়াবেরও।ঈদের দিন সকালে ঈদের জামাতের আগেই গরীবদের মাঝে সদকাতুল ফিতর
বা ফিতরা বিতরন দরিদ্রশ্রেণীর ঈদ উৎসব পালনের জন্য সহায়ক হয়,এতে করে খুশির
জোয়ার সকলের মাঝেই বিরাজমান হয়।ঈদের নামাজে ধনী-দরিদ্র বিভেদহীনভাবে
এককাতারে দাড়িয়ে সাম্য-মৈত্রির বারতা দিয়ে যায় প্রতিটা মুসলিমের ঘওে, এমনকি
অন্য ধর্মের মানুষের মাঝেও।
“হিজরীর প্রথম সালে হযরত মোহাম্মদ(স:) মক্কা হতে মদিনা নগরীতে এসে আশ্রয়
লাভ করেন।সেই বৎসরই প্রথম রমজান মাসে রোজা রাখার আদেশ মুসলমানদের উপর
অবতীর্ণ হয়।তখন মদীনা নগরীতে পারসীয় প্রভাবান্নিত নওরোজ ও মিহিরজান উৎসব
প্রচলিত ছিল।নওরোজ উৎসব শরৎ পূর্ণিমায় এবং মিহিরজান উৎসব বসন্ত পূর্ণিমায়
উদ্যাপিত হয়।ঐ পারসীয় উৎসবদ্বয় ইসলামের স¤পর্ক বিবর্জিত বলে হযরত
মোহাম্মদ(স:) আরববাসী মুসলমানদের উহা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেন এবং এর
পরিবর্তে রোজা শেষে ঈদুল ফিতর এবং জিলহজ্জ মাসে ঈদুল আযহা উৎসবদ্বয়
প্রবর্তন করেন।”(সংগৃহিত)
ইসলাম ধর্মের উৎসবগুলো আনন্দের সাথেই ইবাদত হিসেবে পরিগনিত।তেমনি দ্বীর্ঘ
একমাস সিয়াম সাধনার পর এই ঈদুল ফিতর বা ঈদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আনন্দকে
বিলিয়ে দিতে- দান-খয়রাত। সামর্থবান প্রত্যেক মুসলমান(হোক সে শিশু)এর উপর
ফিতরা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য । আর ঈদুল ফিতর নামটির তাৎপর্যও
এখানে।ইসলামের আদর্শ ভ্রাতৃত্ববোধে সকল মানুষ এককাতারে নামাজ আদায়ের সাথেই
ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আÍসমর্পনের মাধ্যমে
পরিপুর্ণ ঈমানদার হিসেবে জীবন যাপন করবে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের
সেই অমর গান-“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে
দে শোন আসমানি তাকিদ...” আসলে প্রকৃত ঈদ ভোগে নয় ত্যাগে । ত্যাগের মহিমায়
নিজেকে মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতেই ঈদ এবং এ ত্যাগই রোজার শিক্ষা।ঈদের
নামাজের মাঠে আগমন কারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন- “বাড়ি যাও আমি তোমাদের
মাফ করে দিলাম”।চির মহানের ঘোষিত সেই মহা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসুন আমরা
পবিত্র ঈদুল ফিতরের গুরুত্বেকে অনুধাবন করে শুধু উৎসব নয় ইহকালিন শান্তি ও
পরকালিন মুক্তির স্বাদ গ্রহনে ব্রতী হই। হিংসা বিদ্বেষ ভূলে নিজের
জন্য,দেশের ও বিশ্বমুসলিম জাতির জন্য আল্লাহর কাজে সাহায্য চাই। আমাদের
ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সকল স্তরে রমজানের শিক্ষা বাস্তবায়িত
করি।ঈদের চেতনায় মানবিকতাকে জাগ্রত করে ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিই সকলের
সাথে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে।
_______________________________________
সফিউল্লাহ আনসারী
সাংবাদিক
|