প্রতিবন্ধীরাও মানুষ,আমাদের আপনজন
-সফিউল্লাহ আনসারী-
একজন প্রতিবন্ধী, একজন
মানুষও। প্রতিবন্ধীরা আমাদের পরিবারের সদস্য,আমাদের ভাই-বোন,সমাজের
মানুষ,রাষ্ট্রের নাগরিক। তাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখার কোন যৌক্তিক কারন নাই।
কিংবা তাদেরকে অবহেলার চোখে দেখারও অবকাশ নেই,কারন তারাও মানুষ।
প্রতিবন্ধীতা সৃষ্টি কর্তার অভিশাপতো নয় ! ইচ্ছে করে কি কেউ প্রতিবন্ধি হয়
? কিংবা তাদের জীবনে এ অবস্থার জন্য কেউ দায়ী ? যদি না হয় হবে তারা কেনো
অধীকার বঞ্চিত হবে ? হবে করুনার পাত্র ! আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে
রয়েছে নানা ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কুসংস্কার। যা স¤পুর্ণ
অমানবিকতার পরিচায়ক। আধুনিক যুগে এমন ধ্যান-ধারনা পরিহার করা সকলের
প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধীতা বলতে স্বাভাবিক ক্ষমতার অভাবকেই বুঝায়। অর্থাৎ স্বাভাবিক
কর্মে অক্ষম,প্রতিবন্ধকতার স্বীকার ব্যক্তিই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী বিষয়ক
জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলতে অসুখে, দুর্ঘটনায়,চিকিৎসা
ত্র“টি বা জন্মগতভাবে যদি কোন ব্যক্তির শারীরিক বা মানুসিক অবস্থা
ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা আংশিক বা স¤পূর্নভাবে লোপ পায় অথবা
তুলনামূলকভাবে কম হয় তা হলে সেই ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী হিসাবে চিহিৃত করা
হয়’। শারীরিক ও মানুষিক ত্র“টির কারনে যাদের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্থ
তাদেরকেই আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। প্রাকৃতিক নিয়মেই কেউ
কেউ নানা প্রকারের সমস্যা বা দায়বদ্ধতায় পতিত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন।
প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা দুরিকরনে আমাদের ব্যাক্তি ও সামাজিক মনোভাবের
পরিবর্তন জরুরী। মানবিক মুল্যবোকে জাগ্রত করে সকলের প্রতি সমান আচরন ও
অধীকার নিশ্চিত করতে হবে। কারন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করা মানে সমাজের আর
দশজনের মতোই অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার নাম। একজন মানুষ জন্ম থেকেই তার
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কিছু অধিকার প্রাপ্ত হয়। আমাদের সংবিধানে রয়েছে
প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন। ধর্মীয়ভাবেও রয়েছে স্বাভাবিক মানুষের মতোই অধীকার।
অধিকার যেহেতু হস্তান্তরযোগ্য নয় তাই যার যার পাওনা অধীকার তাকেই দিতে
হবে,হোক সে সুস্থ,অসুস্থ বা একজন প্রতিবন্ধী। অধীকার বঞ্চিত হবে কেবল
দুর্বলেরা তা হয়না। তবে হ্যাঁ আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় যেখানে
সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের অধিকার সঠিক ভাবে আদায় হয়না,সেখানে প্রতিবন্ধীদের
অধিকার কীভাবে আদায় হবে ? তাই বলে প্রতিবন্ধীদের অধীকার বঞ্চিত করে সামাজে
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠ করা যাবেনা,তেমনি যাবেনা মানবাধীকার সমুন্নত রাখা।
প্রতিবন্ধীরাও মানুষ এ কথা মনে রাখতে হবে।
প্রতিবন্ধীরা স্বাভাবিক ভাবেই অসহায় এবং পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে। নানা
প্রকারের শারীরিক মানষিক ও বুদ্ধিহীনতার কারনে কিংবা শারীরিক দুর্বলতার
কারণে তারা অসহায়ত্ব প্রদর্শন করে থাকে। তাদের অসহায়ত্ব কাটাতে আমাদের
সকলের উদ্যোগী হওয়া উচিত,বিশেষ করে প্রতিবন্ধী পরিবারের। দেশে প্রতিবন্ধী
কল্যাণ আইন ২০০১ এবং প্রতিবন্ধী কল্যাণ বিধিমালা ২০০৮,প্রতিবন্ধীদের অধিকার
প্রদানের চেষ্টা করা হলেও দিুর্বলতা ও সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার কারনে
প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রাপ্য অধীকার বঞ্চিত। অস্বীকার করার জো নেই,আমাদের
সমাজে প্রতিবন্ধীদের অধীকার বঞ্চিত হওয়ার পেছনে-সামাজিক কু-প্রথা,অকারনে
অবহেলা এবং আইনের সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োগের অভাবেই হয়। প্রতিবন্ধীদের প্রতি
সত্যিকারের শ্রদ্ধাশীল,ভালোবাসা,মায়া-মমতা ও ¯েœহশীল হতে আমাদের সামাজিক
দায়বদ্ধ বাড়িয়ে, সকলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। প্রত্যেক প্রতিবন্ধিকে
ভাবতে হবে একজন ভাই-বোন,সন্তানের মতো আপন। আর এ ভাবনাই জাগিয়ে তোলবে আমাদের
মানবিকতা ও মানবিক মুলবোধ।
আমরা প্রতিবন্ধীদেরকে সম্মানজনক শব্দে যেনো ডাকি, যাতে তারা অসম্মানিত না
হয়।সম্মানজনক সম্বোধন করে, উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের
সহজভাবে সহ অবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। এসব প্রতিবন্ধী মানুষকে
খাটো করে না দেখে সুস্থ শিশুদের মতো শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ করে দিয়ে
তাদেরকেও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলে সামাজিকভাবে পুর্নবাসন করা আমাদের নৈতিক
কর্তব্য। প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের যোগ্যতা অনুসারে কাজের ব্যাবস্থা ও
চাকুরিতে নিয়োগ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের
পরনির্ভশীলতার দায় থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। মনে রাখা দরকার প্রতিবন্ধীরা
সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ,তাদের বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রীক উন্নয় সম্ভব নয়। তারা
আমাদের পর নয়,বন্ধু-স্বজন,বোঝা নয় আপনজন। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর
প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা না ভেবে তাদের পাশে
দাড়ানোর সুযোগ গ্রহন করে এবং তাদের প্রাপ্ত সম্মান ও অধীকার আদায়ে সোচ্চার
হওয়া আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
_______________________________________
সফিউল্লাহ আনসারী
সাংবাদিক
|