[প্রথমপাতা]
|
মলমী ট্রিটমেন্টে রাজনীতির ক্ষত সারবে কী?
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
সেই তিপান্ন সাল থেকে ব্যবহার করছি -----,কথাটা শুনলেই মনে পড়ে রুমানা
পেইন্ট কোম্পানীর টেকসই সম্পন্ন রংয়ের বিজ্ঞাপন । কথাটা বললাম এজন্য আমাদের
রাজনীতিবিদরা জনগনের ভাগ্য ও জীবন নিয়ে নানান রংয়ে নানান ঢংয়ে খেলেই
যাচ্ছেন, কিন্তু সংকট কাটছে না, সংকটটাই জনজীবনে টেকসই রুপ লাভ করে আছে ।
জানিনা, হয়তঃ রাজনীতিবিদরা সংকট তৈরী করে এবং এনিয়ে খেলে মজা পান, না হয়
অভ্যেস হয়ে গেছে । না হয় নানান রংয়ে একই সংকট ঘুরে ফিরে আসবে কেন ? সংকট
আসে, রক্ত ঝরে, সমাধানও হয়, আবারও ফিরে আসে একই সংকট, এ যেন টেকসই সম্পন্ন
সংকট । চাই বা না চাই ঘুরে ফিরে আসবেই । সংকট>রক্ত>সমাধান>সংকট, অদ্ভূত
ধরনের এক সংকটের সাইক্লিক আবর্তে আটকে গেছে রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনীতি ।
প্রতিবারই একই সংকটের (গ্রহনযোগ্য অবাধ নির্বাচন) ভীন্নধর্মী সমাধানও হয়,
কিন্তু সমাধানটা স্থায়ী বা টেকসই হয় না, সমাধান অনেকটা-যেই লাউ সেই কদুর
মতই, মাঝখানে জীবন দেয় নিরীহ যদু-মধু ।
সংকটের টেকসই সম্পন্ন সমাধান অর্থাৎ স্থায়ী সমাধান যেহেতু হচ্ছে না, ঘাপলা
একটা এখানে নিশ্চিত ভাবেই আছে । হয় সংকটের কারন নির্ধারনে ঘাপলা, না হয়
সমাধানের উপায় নির্ধারনে ঘাপলা । নাকী শস্যের মধ্যেই ভূতের উপস্থিতি, বলাটা
মুস্কিল । এটা ঠিক প্রতিবারই দেখা যায় সংকট নিষ্পুত্তির জন্য দীর্ঘ সময়ধরে
আন্দোলন হয় এবং আন্দোলনের সফলতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সমাধানের ফর্মূলা
নির্ধারনে সময় খুব একটা থাকে না । আন্দোলরত দল আন্দোলনকালিন সময়ে সংকট
সমাধানের ফর্মূলা নিয়ে সুচিন্তিত গবেষনাও করেন না । তাই দেখা যায় শেষ
মুহূর্তে এসে সাদামাটা চিন্তা দিয়েই ঝটপট শর্টকার্ট ওয়েতে সমাধান বের করতে
হয় । যার মধ্যে থাকে না সুগভীর চিন্তা, থাকে না মেধা প্রজ্ঞা ও গবেষনার ছাপ
। মূলতঃ রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রনীতির ভাবনায় মেধার চর্চা না করে নিজের ব্যবসা
বানিজ্য ও লুটপাটের ধান্দায় মাথা খাটান বেশী । তাই দেখা যায় রাষ্ট্রের
অর্থনীতি ও গনতন্ত্রের স্বাস্থ্য খারাপ হলেও রাজনীতিবিদদের ব্যাক্তিগত
অর্থকড়ির স্বাস্থ্য হয় হৃষ্টপুষ্ট ।
এভাবে আর কতকাল চলবে, প্রতিবারই একদিনের নির্বাচনী গনতন্ত্রের জন্য
রক্তক্ষয়, এই সংকট নিয়েই রাষ্ট্রের ৪২ টি বৎসর গেল । মোটা দাগে সংকটের
কারনগুলি চিহ্নিতকরন ও সমাধানে রাজনীতিবিদদের আগ্রহবোধের ঘাটতি কমবেশী
স্পষ্ট । ক্ষমতার পালাবদলের গনতন্ত্র নিয়েই আছেন আমাদের রাজনীতিকরা । এ যেন
ক্ষমতাশীন হয়ে লুটপাটের ক্ষেত্রটি দখলই রাজনীতির মূখ্য উদ্দেশ্য ।
রাষ্ট্রের অন্য সব গনতান্ত্রিক ভিত্তি ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেয়ার আগ্রহ
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুপস্থিত । রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন উপযোগী
প্রশাসন তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন, স্থায়ী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন, দীর্ঘমেয়াদী
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত
রাষ্ট্রের মূলনীতিকে ভর করে মুক্তিযুদ্ধের আকাংখায় রাষ্ট্র পরিচালনার ভাবনা
অনুপস্থিত । এমনকি দল পরিচালনায় গনতান্ত্রিক রীতিনীতি উপেক্ষিত, অথচ বিরোধী
দলে থাকলে রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক চরিত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন
এবং ক্ষমতাশীন হলে বেমালুম ভুলে যান ।
যাইহোক, আমরা যদি বর্তমান সময়ের দুই/চার দিনের পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে দেখি,
মোটা দাগে রাজনীতির দুইটি ক্ষত চোখে পড়বে এবং তা হচ্ছে- একদিকে ক্ষমতাশীন
দলের মন্ত্রী/এমপি/নেতারা (সবাই নন) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নামক আলাদীনের
চেরাগের প্রভাবে পাঁচ বৎসরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এবং অন্যদিকে
স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারনকারী দলটি প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ঘাড়ে ভর করে
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জঙ্গিবাদীরূপ ধারন করে সহিংস রাজনীতিতে সাধারন
মানুষকে পুড়ে মারছে । মোটা দাগে এই দুই দুষ্ট ক্ষতই রাষ্ট্রকে অস্থির করে
রাখছে । গভীরভাবে এই ক্ষত দুইটি সৃষ্টির কারন সমূহ চিহ্নিত করে
পর্যায়ক্রমিক অপারেশন না করে রাজনীতিবিদরা একদিনের ভোটের গনতন্ত্রে যতই মলম
লাগান, সংকটের স্থায়ী সমাধান আসবেনা, ঘুরে ফিরে সংকটের চুলকানী রাষ্ট্রকে
ভোগাবেই । তাই আওয়ামীলীগ-বিএনপি এবং অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহ সহ বিভিন্ন
শ্রেনী পেশার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের
নেতৃত্ব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও দেশের মান্যবর বুদ্ধিজীবি শিক্ষকদের
সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে । এই টাস্কফোর্স প্রয়োজনে
দীর্ঘমেয়াদী সময় নিয়ে রাষ্ট্রের দুষ্ট ক্ষত সমূহ চিহ্নিতকরন ও সমাধানে একটি
পরিকল্পনা গ্রহন করবেন এবং যে দলই ক্ষমতাশীন হবেন তারা ঐ পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকিবেন এবং টাস্কফোর্সের ছোট আকারের কমিটি
প্রতি ছয়মাসে একবার ক্ষমতাশীন দলের সাথে মূল্যায়ন সভায় বসবেন । মোটকথা
অন্যসব গনতান্ত্রিক অধিকারকে জলাঞ্জলী দিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের
নির্বাচনী গনতন্ত্রের মলমী সমাধানে টেকসই সম্পন্ন রাষ্ট্রীয় গনতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা পাবে না । তাই সকল শ্রেনী পেশার সচেতন মানুষদের উচিত হবে
রাষ্ট্রের সর্ব পর্যায়ে টেকসই সম্পন্ন গনতন্ত্র বিনির্মানে রাজনৈতিক
দলগুলিকে অব্যাহত ভাবে চাপে রাখা ।
লেখকঃ জাপান প্রবাসী
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|