প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

মনের দুয়ার খুলে দেয় “জীবনের গল্প”

 

--- দিলরুবা খান---

 


সময় এবং জীবন। এই দুটোকে ধারণ করে সৃষ্টি হয় আমাদের গল্পগুলো। যে সময়ে সভ্যতা ধুমকেতুর মতো করে ছুটে চলে উদ্ভাবনের দিকে, ঠিক সেই সময়েই ভিন্ন একটি মঞ্চ সৃষ্টির সকল মাধ্যম থেকে, প্রযুক্তি থেকে, আধুনিকতা থেকে বহু-বহুক্রোশ দূরে ধুঁকে ধুঁকে মরে। “চারদিকে যখন বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উদ্ভাবনে উল্লসিত বিশ্ববাসী, দেখতে দেখতে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের আচরণগত,ভাবগত,ভাষাগত পরিবর্তন,বৈজ্ঞানিক-সাংকেতিক-ব্যঙ্গাত্মক ব্যবহারের বিস্ফোরণ অবিরত, ঠিক সেই সময়ে ছুটেচলা ধুমকেতুরূপী সমাজ ও সভ্যতা থেকে ছিটকে পড়া কোন এক নিভৃত গ্রামের নিভৃত ঘরের ছোট্ট স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার মেঝেতে ফুটন্ত একহাড়ি গরম পানি, পুরনো ময়লা বিবর্ণ ন্যাকড়া, মরচেপড়া কাঁচি ব্লেড নিয়ে অনভিজ্ঞ এক ধাত্রীর অবিরত প্রচেষ্টা।” মেহেরুন নেছা রুমা তার জীবনের গল্প বইয়ের ‘বিবর্ণ কুসুমকলি’ গল্পে অতি চমৎকারভাবে একই সময়ে বর্তমান দুটো জীবনের ভিন্নধারা বর্ণনা করেছেন। যে জীবনে রয়েছে ধনী-গরীব বৈষম্য,আছে দীর্ঘদিনের লালিত কুসংস্কার, আছে নারীর প্রতি লাঞ্চনা, প্রবঞ্চনা। এত অল্প পরিসরে জীবনের এত গভীরতা কীভাবে তার লেখনিতে উঠে এসেছে সেটি একটি বিষ্ময়।
জীবনের গল্প-এ আছে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা সীমান্তের সব হারানোর মর্মবেদনা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন জন্মস্থানের প্রতি তার বিমুখতা। কেন এই বিমুখতা?‘ যুদ্ধ জয়ের অপেক্ষায়’ গল্পে চপলা তার স্বামী সীমান্তর সাথে শহরে গিয়ে বসবাসের আয়োজন করে। তখন সীমান্তের মা বলেন,“ ঘরের মধ্যে আমরা দুই দুটি মানুষ থাকতে তৃতীয় একজন কী করে একা হতে পারে?’ বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতা বড় একা। একসময় সীমান্ত দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী চপলাকে রেখে যায় পিতা-মাতার কাছে। সেখানে চপলার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ পরিণতি। একটি ছোটগল্পে একটা সময়কে ধারণ করে বর্ণনার এত গভীর উপলব্ধি দেখে প্রশংসা না করে পারা যায় না। অসাধারণ একটি ভালোবাসার গল্প ‘অনবদ্য এক সুখ’। প্রকৃতির এত নিঁখুত বর্ণনা যেন প্রতি লাইনে লাইনে মুগ্ধতা। গল্পটি পড়ার সময় আমিও যেন হেঁটে যাচ্ছিলাম পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথ ধরে, সবুজে ঘেরা নির্জন বাংলোর ছোট্ট করিডোরে বসে ঝুম ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ শুনছিলাম, দিগন্তের ওপাড়ে পাহাড়ে হেলে পড়া শেষ বিকেলের সূর্যের ঘরে ফেরার দৃশ্যখানি যেন নিজ চোখে দেখতে পেয়েছি। দিপীকা যেন আমার পরিচিত সেই মেয়েটি,যে ওই নির্জন সবুজ পাহাড়ের বুকে ভালোবাসার এক অনবদ্য সুখ আবিস্কার করেছিল।
জীবনের গল্প বইতে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের মোট বিশটি গল্প রয়েছে। যেখানে লেখক তুলে ধরেছেন তার জীবনের কথা, মানুষের জীবনের কথা।“সপ্নীল পৃথিবীতে স্বাপ্নিক হয়ে আমিও কখনো কখনো স্বপ্নের মাঝে বিচরণ করি”। এ লেখকের স্বপ্ন। তবু তার দেখা স্বপ্নেরা লাশ হয়ে আসে। অদ্ভুত তার প্রকাশের ভঙ্গি। এই বইটি না পড়লে বুঝতে পারতাম না তার জীবনের গল্পটা কত বৈচিত্রময়। যেখানে সে লিখেছেন তার বেড়ে ওঠা ,বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে কিভাবে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। একটি শিক্ষিত আধুনিক পরিবার কেমন করে পুরুষতন্ত্রের যাঁতাকলে তার জীবনকে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করেছে।
“আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে মনের মত একজন মানুষ পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। আর সেটা কেউ পেয়ে গেলে সবকিছুর বিনিময়ে তাকে রক্ষা করা উচিত।”অপূর্বই মোহিনীর সবকিছু। তবু দিন শেষে দুটি পাখিকে দ’ুদিকে ফিরতে হয়। একই আত্মা, তবু বিচ্ছিন্ন তাদের বসবাস। হ্্রদয়ের পরতে পরতে মিলনের হাহাকার, তবু পাস্পরিক নির্ভরতা। ‘নিষিক্ত প্রেম’ গল্পে ভালোবাসাবাসির দুটি মানুষের কষ্ট আমাদের চোখের জল ফেলতে বাধ্য করে। এত প্রেম তবু এত বিষাদ! অপূর্বর জন্য মোহিনী একের পর এক বিয়ের পাত্রী ঠিক করে। অবশেষে একজনকে যখন পছন্দ করা হয় তখনই অপূর্বর ডায়রীর লেখাগুলো দুজনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। গল্প বাঁক নেয় অন্যদিকে।
মানুষের ছোট্ট এই জীবন। সেই জীবনে রচিত হয় কত শত গল্প। কিছু গল্প ব্যক্ত হয়, কিছু রয়ে যায় অস্পষ্ট, অব্যক্ত। লেখক এই বইয়ে সেই ধরনের গল্পের কথা বলেছেন, যা আমাদের মনের দুয়ার খুলে দেয়। মেহেরুন নেছা নি:সন্দেহে একজন স্বার্থক গল্পকার। তার ছোটগল্প গ্রন্থ “জীবনের গল্প” আমাদের মনের উপর দীর্ঘ ছায়া বিরাজ করে আছে।
বইটি প্রকাশ করেছে অক্ষর প্রকাশনী।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন-ধ্রুব এষ।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]