প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ  বর্তমানের কথামালা শিল্প-সাহিত্য

বাংলাদেশ কমিউনিটি

আর্কাইভ

লাইফ স্টাইল

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

জাপানের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ৩ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের জীবন নরকে পরিণত

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। জানুয়ারি ২৭, ২০২২ ।।

ইয়ানিতা আনতোকো ইন্দোনেশিয়াতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন তার জাপানে অবস্থানরত স্বামীর সাথে এক হতে। তিনি জাপানের আসার উদ্দেশ্যে নিজের ঘরে তৈরি মশলার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন, তার সব কাগজপত্র প্রস্তুত কিন্তু তিনি আটকা পড়েছেন।

৩০ বছর বয়সী এই নারী জাপানের করোনাভাইরাস সীমান্ত আইনের আওতায় পড়ে নরকের মধ্যে পতিত হওয়া ৩ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মানুষদের একজন। নতুন আগমনকারীদের জন্যে জাপানের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে এবং জি৭ ভুক্ত দেশ সমুহের মধ্যে জাপানের নীতিমালাই সবচেয়ে কঠিন।

অস্ট্রেলিয়ার মত অন্য যেসব দেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিলো তারাও ধীরে ধীরে সীমান্ত খুলে দিচ্ছে, তবে জাপান এখনও পর্যন্ত পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিদেশী কর্মী, শিক্ষার্থী এবং তাদের ডিপেনডেন্টদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।

আনতোকো বলেন "এটি সত্যিই আমাকে চরম বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে" তার স্বামী মধ্য জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। "যখন আপনি বিয়ে করবেন আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন সন্তান নিতে। এটার কারণেই আমরা একসাথে থাকতে চাই।"

কিন্তু কবে এটা বাস্তবে সম্ভব হবে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্টতা নেই।

প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বর্তমান ব্যবস্থার মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন যা জনমত জরিপে তার জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়েছে।

এর ফলে নেপালের নাগরিক ২৮ বছর বয়সী সন্তোশ'কে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি জাপান থেকে ব্যবসার উপর ডিগ্রি নিয়েছেন, জাপানি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান তাকে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিভিশনে নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু তিনি ২০২০ সাল থেকে নেপালেই আটকে রয়েছেন, সেখান থেকে আসার জন্যে অনুমতির অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

"যদি আমি জাপানে কাজ করার পরিকল্পনা ত্যাগ করি তাহলে জাপানে ৬ বছরের পড়াশোনা কোনো কাজেই লাগলো না" সন্তোশ বলেন, "সুতরাং আমি শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষাই করে যাচ্ছি।"

ফরাসি ছাত্র লিলো বোস তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে একই ধরণের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।

২১ বছর বয়সী, যার বাগদত্তা জাপানে, সময়ের পার্থক্যের কারণে তাকে রাতে ক্লাসে অংশ নিতে হচ্ছে।

"এটি একটি দুঃস্বপ্ন" তিনি বলেন ভাষা শিক্ষার ক্লাস শেষ হয় আমাদের এখানে ভোর ৪টায়।

তিনি এখনও একটি জাপানি ব্র্যান্ডের প্রসারের উপর নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ব্যপারে আশাবাদী। তিনি বলেন তার জাপানি বাগদত্তা থেকে আলাদা থাকার কারণে তিনি খালি বোধ করছেন, "যেন আমার অর্ধেক আত্মা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।"

শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা সতর্ক করে বলেছেন জাপান আপোস বিমুখভাবে সীমান্ত বিধিমালা হারাচ্ছে।

জাপানের ইউরোপিয়ান বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ম্রোজেক বলেছেন, কোম্পানিগুলো বিদেশী কর্মী আনতে পারছে না বলে "দক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে"।

জাপানে ইতিমধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, বিধিনিষেধগুলি "কিছু পরিমাণে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে," তিনি বলেন। "এটা প্রায় জেনোফোবিয়া (বিদেশাতঙ্ক) বলে মনে হচ্ছে।"

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা "কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের" পক্ষাবলম্বন করে বলেছেন "ওমিক্রন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাই অন্যান্য দেশের সাথে জাপানার পার্থক্যটা বলে দিচ্ছে।"

কিন্তু জাপানের ব্যবসায়ীক মহলে হতাশার সৃষ্টি হয়েছেন, সোমবার শক্তিশালী ব্যবসায়ীক লবি কেইদানরেন প্রধান ১৭ থেকে ১৯ শতকের স্ব-আরোপিত বিচ্ছিন্নতার সাথে নিয়মের তুলনা করেছেন।

ব্যবস্থাগুলি "বাস্তবতার বাইরে" কিশিদাকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে মাসকাজু তোকুরা বলেছেন।

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠিতে, জাপান-মার্কিন বিনিময়ের সাথে জড়িত পণ্ডিতরাও সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা "জাপানের কূটনৈতিক উদ্দেশ্য এবং আন্তর্জাতিক নেতা হিসাবে মর্যাদাকে হ্রাস করে।"

প্রায় দেড় লক্ষ শিক্ষার্থী সরকারী হিসেবমতে দেশের বাইরে আটকা পড়ে গেছেন

জাপানে বসবাসরত ইতালিয় উদ্যোগতা দেভিদে রোসসি বলেছেন।

তিনি বলেন, "তারা দুই বছর ধরে এই অচলাবস্থায় রয়েছে কিন্তু এখনও তাদের কাছে একটি সময়রেখা বা পরিকল্পনা নেই, যা মোটেই হওয়া উচিত নয়।"

গত বছর অলিম্পিকে জাপানে প্রবেশ করার জন্য হাজার হাজার বিদেশী ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তা এবং মিডিয়া প্রবেশ করার কারণে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।

মানবিক কারণে এখন পর্যন্ত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মাত্র ৮৭ জন শিক্ষার্থীকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

এর কোনো শেষ দেখা না গেলে, অনেক শিক্ষার্থী এখন দক্ষিণ কোরিয়া সহ অন্য কোথাও যাওয়ার পথ খুঁজছে।

হানা, ইরানের প্রথম বর্ষের পিএইচডি ভেটেরিনারি সায়েন্সের ছাত্রী, একটি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে দূর-থেকে-অধ্যয়ন করছে, কিন্তু সে দূর থেকে তার প্রয়োজনীয় ল্যাব গবেষণা সম্পূর্ণ করতে পারছে না।

তিনি অনিচ্ছুকভাবে জাপানে যাওয়ার জন্য এপ্রিলের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।

এর পরে, "আমি অন্য একটি দেশ বিবেচনা করব, সম্ভবত কানাডা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র," ২৯ বছর বয়সী বলেছিলেন। "যদি আমরা প্রবেশ করতে না পারি, তাহলে আমাদের অধিকাংশই জাপান ছেড়ে দেবে।" এএফপি।  

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]