প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভ্রমণঃ আসিকাগা, তোচিগি প্রিফেকচার, জাপান

 

 

 

-কাজী ইনসানুল হক,

 


 

আসিকাগায় বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি একেবারে হঠাৎ করে। বন্ধু কমল বড়ুয়ার স্কুল সহপাঠি আমিনের সাথে কমলের যোগাযোগ প্রায় ত্রিশ বছর পরে ফেসবূকের কল্যানে। দু'জনের ঠিকানা জাপান কিন্তু তা জানা ছিল না। নূরুল আমিন সপরিবারে আসিকাগায় থাকেন। সফল ব্যাবসায়ী আমিনের নিজস্ব বাড়ী আসিকাগা'তে। ব্যাবসার জন্য বিশাল ইয়ার্ডও পাশাপাশি।

ইতিমধ্যে কমল একদিন যেয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করে এসেছে। দীর্ঘদিন পরে দূই বন্ধুর সেই সাক্ষাৎ এর সময় কমল জেনেছে আমিন আমারও বন্ধু, আমার সাথে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব তাও প্রায় দূই যূগের।
কমলের পীড়াপীড়ি ও আমিনের আমন্ত্রণে একদিন কাজ শেষে রওনা হলাম আসিকাগা'র পথে। কমল আগে থেকেই অপেক্ষা করবে কিতা সেনজু স্টেশনে।
 


প্রবাসে কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা অন্যের উপকার করার জন্য যেন মুখিয়ে থাকেন, বিদেশ বিভূঁইয়ে এ রকম অনাত্মীয়রাই হয়ে যান আপনজন। বন্ধু নুরুল আমিন সেই গোত্রের। দুই যূগ আগে জাপানে এসেছিলাম একটি চিঠি নিয়ে। চিঠিটিতে বাসদ সভাপতি খালেকুজ্জামান ভাই লিখেছিলেন নূরুল আমিনকে -যেন আমাকে সহযোগিতা করেন। উঠেছিলাম এলাকার ছোট ভাই তুষারের ওখানে। নূরল আমিন
শুধুমাত্র আমার সাথে দেখা করতে সুদূর তোচিগি থেকে ছূটে এসেছিলেন টোকিওতে। পরিচয় পর্বের পরপরই তিনি একটি কাগজে তার বাসার ঠিকানা আর কিভাবে যেতে হবে তা বিস্তারিত লিখে দিয়ে বলেছিলেন...

বিপদে আপদে সরাসরি আমার কাছে চলে আসবেন, মনে করবেন আপনি নিজের ছোট ভাইয়ের কাছে যাচ্ছেন..... ভিনদেশে, অজানা পরিবেশে এই অভয়বাণী অভিবাসীদের কাছে কতটা ভরষার তা প্রবাসীরাই কেবল বুঝতে পারবেন। আমিন নিজেও তখন ছাত্র। নিজের ভবিষ্যত তখনও অনিশ্চিত অথচ কি নির্দ্বিধায় অন্যের বোঝা বহন করার মানসিকতা। হ্যাটস অপ।
 


টোকিও থেকে আসিকাগা'র দূরত্ব ৮০ কিমি। নদী, "ওহিরা" পাহাড় আর প্রকৃতির নিসর্গভূমি তচিগি প্রিফেকচার। তচিগি প্রিফেকচারের "নিককো" পর্যটকদের প্রিয় স্থান। জাপানীরা বলে ...কখনও বলবে না "কেককো" (kekko-সুন্দর, অভূতপূর্ব) যতক্ষন না তুমি "নিককো" দেখছো। ছবির মতো ছোট্ট শহর আসিকাগা। আসিকাগা দর্শনীয় স্থান "আসিকাগা ফলাওয়ার পার্ক"। ২০৩ একর জায়গা জুড়ে জাপানের ৪ ঋতুতে ফুটে থাকে লক্ষ কোটি ফুল। সারা বছর ধরে পর্যটকরা ছোটে সেই ফুলের আমন্ত্রণে। আছ বেশ ক'টা উষ্ণপ্রসবণ, তবু স্কাইট্রি লাইনের ট্রেন ছুটছে, তেমন ভীড় নেই। শহর ছেড়ে ছোট ছোট ষ্টেশন ২-৩ জন নামছে, উঠছে। জনমানবহীন ষ্টেশনে একা ষ্টেশন মাস্টার, রাতের নিস্তব্ধতায় ট্রেনের একটানা হুশহুশ শব্দ। মাঝে মধ্যে নিয়ন আলোয় বড় বড় ফ্যাক্টরির নাম, পাচিংকো(জূয়া) কিংবা লাভ হোটেলের মায়াবী হাতছানি। ট্রেনে বিদেশী যাত্রীর সংখ্যাও কম নয়।

সময় মতোই আশিকাগা শি ষ্টেশনে পৌছালাম। আমিন ভাই তার ভাগ্নেকে পাঠিয়েছেন তার গাড়িতেই সরাসরি বাসায়। ঢোকবার সময় কামিনী ফূলের ঘ্রান, জানা গেল ঢোকার প্যাসেজে বাংলাদেশ থেকে আনা কামিনী, বকুল, হাসনেহেনা সহ নানান গাছ লাগানো হয়েছিল, কিছু ফুল ঠিকই ই ফুটছে আবার কিছূ গাছ লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে কিন্তু ফুল ফুটছে না। বাইরে থেকে বোঝা গেল বিশাল আয়োজন,গায়ক গোমেজদা শ্রোতাকূল নিয়ে ভালোই আসর জমিয়েছেন। টোকিও ও আশপাশ থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন অনেকে।

আসিকাগা’য় থাকেন পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হলো।স্বরলিপির সদস্য প্রভাত ও সাদেক ভাই ।পরিচয় হলো সাত্তার ভাই,সাজ্জাদ ভাই, রহমান ভাই ও আমার এলাকার জামাই লিটনের সাথে।
 


উপলক্ষ আমিন ভাইয়ের ছোট মেয়ে আনিশা’র জন্মদিন পালন হলেও মূলত আড্ডা দিতেই দূর-দূরান্ত থেকে সবার ছূটে আসা। বচ্চারা একদিকে, মেয়েরা আলাদা গ্রুপ,আমরা দেশ,রাজনীতির গুস্টি উদ্ধার করছি। আর এই ৫০-৬০ জনের জন্য নিত্য নতুন বাহারী খাবার সরবরাহ করে চলেছেন আমিন ভাবী।পরম মমতায় ক্লান্তিহীন ভাবীকে দেখে বারবার মা-বোনের আদল চোখে ভেসে ওঠে।

 


গল্পে গল্পে ভোর, আমরা ক’জন একটূ বাইরে হেঁটে এসে ঘূমোতে যাই। দোতলার একটা রুমে আমি ঘুমে, হঠাৎ একটা কোমল হাতের স্পর্শে জেগে উঠি। ছোট্ট মেয়ে আনিশা বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে.জন্মদিনের আনন্দে রাতে আমাদের খেয়াল করেনি।নানা প্রশ্ন, কখন এসেছি,কিসে করে এসেছি।যখন ও জানলো আমরা আজ চলে যাবো ওর মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।হাতটা ধরে বলতে লাগলো...আংকেল তোমরা কেন চলে যাবে..আমাদের এখানে থাকো,আমাদের বাড়িতে তো অনেক রুম আছে.....

এক এক জন বিদায় নিচ্ছে আর আনিশার চিৎকার,আমাদের বেলা সেটা মারাত্মক হলো ।ওর বুকফাটা আওয়াজ বহু দূর থেকে শোনা যাচ্ছে-কিছূতেই আমাদেরকে যেতে দেবেনা।
 


আসিকাগা’র অনেক দর্শনীয় স্থান ঘোরা শেষে আমিন ভাইয়ের ফ্যাক্টোরিতে গেলাম, বিশাল আয়োজন, গাড়ি,গাড়ির ইঞ্জিন ও পার্টস রপ্তানি তার মূল ব্যাবসা। শেডের পাশে নানান রকম সবজি আবাদ করেছেন, নিজ হাতে তা ব্যাগ বোঝাই করে দিলেন,এ অঞ্চলে সবার জন্যে তার বাগান উন্মুক্ত। স্টেশনের পাশে একটা কফি শপে শেষ আড্ডা দিয়ে বিদায় নিলাম।কাল থেকে আবার সেই রোবোটিক জীবন।একটা দিন কি আনন্দে কাটলো তবে ট্রেনের শব্দ ছাপিয়ে বারবার মনে পড়ছে শিশু আনিশার মুখটা....আংকেল যেওনা,আমাদের সাথে থাকো।



কাজী ইনসানুল হক,
kaziensan@gmail.com

 

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ