প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রনে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরঃ প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশ

 

 

-কাজী ইনসানুল হক

 

 

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে'র আমন্ত্রনে দ্বি-পাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফরে ১০৯ জন সফর সংগী নিয়ে ৪ দিনের জন্যে জাপানে এসেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫মে থেকে ২৮মে, ২০১৪, -মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত থাকবেন জাপান বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আলোকে পূর্ব নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আয়োজিত নানান আনুষ্ঠানিকতায়। সময় করে তার স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্যেও কিছুটা সময় রাখা হয়েছে, জাপানের উন্নত চিকিৎসার উৎকর্ষতার প্রতি তার আগ্রহের কারণে।

৫ জানুয়ারি ২০১৪র আলোচিত নির্বাচনোত্তর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় দফা দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তাঁর প্রথম দ্বি-পাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফর। ১৯৯৭, ২০১০ এর পর এটি হচ্ছে তার ৩য় জাপান সফর। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা'র গত ২১-২৩ মার্চ ঢাকা সফরের সময়েই জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে'র আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রন পত্রটি হস্তান্তর করলে এই সফরসূচিটি চুড়ান্ত করা হয়।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন "আকাসাকা প্রাসাদ" এ প্রধানমন্ত্রী সফরের পুরো সময়টি অবস্থান করবেন। রোববার সন্ধ্যায় ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ এর সাথে নৈশ ভোজ রয়েছে। সোমবার গার্ড অব অনারের আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাপানে স্বাগত জানানো হবে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও জাপান বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি লিগের সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।সম্রাট আকিহিতোর সাথে দেখা করবেন তাঁর ইম্পেরিয়াল প্যালেসে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ডিনারে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও স্মারক চুক্তি সাক্ষর হবে। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী জাপানের মর্যাদাবান ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের "এডুকেশন ফর এনপাওয়ারমেন্ট অফ ইউথ" বিষয়ে বক্তৃতা করবেন। সেখানকার বাংলাদেশি ও জাপানি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথেও তাঁর সাক্ষাৎ হবে। ১৯৯৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রধানমন্ত্রী সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী এনএইচকে'তে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার সরাসরি প্রচার করা হবে। এ ছাড়াও জেট্রো সদরদপ্তরে ব্যবসায়িক সেমিনার, জেবিসিসিইসি প্রধানের সাথে তার সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে।

জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাপানের সাংবাদিকরা প্রথম তার সফরের কথা জানতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎসহ প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু আয়োজনে আমাদের উপস্থিত থাকবো।

১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান প্রথম জাপান সফর করেন। তারপর থেকে জাপান বাংলাদেশকে নানা ভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর উন্নয়ন অংশিদার হলো জাপান। ১৯৭২ থেকে আজ অব্দি জাপান বাংলাদেশকে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহযোগিতা দিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি সহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে তুলতে যথেষ্ট সহায়তা করতে পারবে বলে আশা করা যায়। জাপানি ঋণ সাধারণ ভাবে ৪০ বছর মেয়াদী পরিশোধ যোগ্য এবং ঋণ হার মাত্র ০.০১%।

সম্ভাবনাঃ

জাপান প্রতিবছর ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বস্ত্রসামগ্রী আমদানি করে থাকে। চীন থেকে আসে তার বেশির ভাগ অংশ। চীনে বর্তমান মজুরি বেড়ে যাওয়ায় জাপান -ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমান, ভিয়েতনাম, লাওসের কাছ থেকে আমদানি করছে। গার্মেন্টস ক্ষেত্রে পশ্চিমে বাংলাদেশ অধিক রপ্তানি করলেও জাপানে আমদানির পরিমাণ অনেক কম। বাণিজ্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পশ্চিমমুখী নীতি এখন থেকে পূর্ব দিকে ফেরাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা মন্তব্য করেছেন। রেডিমেড গার্মেন্টস ও চামড়াজাত পণ্য জাপানের প্রধান আমদানিকৃত পণ্য। সেক্ষেত্রে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি।

জাপানের বেসরকারি সংস্থার বিনিয়োগও বেশ বেড়েছে। ২০১২ সালে মোট ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। ২০০৭ সালে যেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী জাপানি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ৬১টি, সেটি এখন বর্তমানে ১৭৬টিতে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবনঃ

২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধামন্ত্রী তাঁর ২য় জাপান সফরের সময় বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এতোদিনে সেখানে আমাদের দূতাবাস চালু থাকার কথা। সেই দূতাবাস ভবনের কনফারেন্স রুমেই প্রধানমন্ত্রী তার নানান আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারতেন। কিন্তু সেটি ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের মধ্যেই থমকে গেছে। কেন, সেটির কোনো জবাব আমাদের জানা নেই।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনঃ

 

এ নিয়ে জাপানের মনোভাব অনেকটাই স্বাভাবিক। সরকারের সাথে কাজ করতে তাদের তেমন কোনো আপত্তি নেই। যদিও জাপান মনে করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগন স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, তাই গ্রহণীয় একটি নির্বাচন হওয়া জরুরি। তবে সাম্প্রতিক খুন-গুম নিয়ে জাপান অনেকটা শংকিত। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবে ইমেজ সংকটে পড়েছে বলে মনে করে। এখন পর্যন্ত জাপান মনে করে অতীতে বাংলাদেশ এ ধরণের সংকট মোকাবেলা করেছে -এবারও হয়তো উৎরে যাবে।

 

পদ্মা সেতুতে জাপানের 'না', দ্বিপাক্ষিক মুক্ত চুক্তিতেও 'না':

পদ্মা সেতুতে জাপান আর এগুবে না এ ব্যাপার নিশ্চিত। পদ্মা সেতুতে ৬১৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ফিরিয়ে নেয়। তবে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে তারা উৎসাহী। নিজের কৃষি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বাংলাদেশ থেকে কৃষি পণ্য আমদানি করতে জাপান কখনো বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করবে না।

জাপানের কাছে প্রধানমন্ত্রী কী চাইবেনঃ

একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, গঙ্গা বাঁধ নির্মাণ, যমুনা নদীর নীচ দিয়ে বহুমুখী টানেল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল আরেকটি সেতু, ইস্টার্ন বাইপাস ও ঢাকার চারিদিকের নদী উদ্ধার প্রকল্পে জাপানের সরাসরি বিনিয়োগ ও বড় অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ জাপানের সহায়তা চাইবে বলে জানা গেছে।

নাগরিক সম্বর্ধনাঃ

জাপানে প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেয়ার আয়োজন চলছে। আশার কথা জাপান আওয়ামী লীগের বিবাদমান দু'টি গ্রুপের মধ্যে কলহ, দুরত্বের রেশ প্রধানমন্ত্রীকে আপততঃ সমঝোতার পথে আসছে। দু'টি প্রস্তাবিত কমিটি আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেয়া যায় তার জন্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২০১০ সালে নাগরিক সম্বর্ধনার আয়োজনের উদ্যোগে তখনকার কমিটি সফল হয়নি। অনুষ্ঠানটিকে শেষ পর্যন্ত লেজে গোবরে করে ফেলা হয়েছিলো, প্রবাসীরা তাতে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত ছিলেন। এবার আশা করবো আওয়ামী লীগের জন্যে নিবেদিত কর্মীরা দলের মর্যাদা রক্ষার্থে সবাই মিলে একসাথে আয়োজন করবে -এবার অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না।

বিএনপি জাপানের প্রতিবাদ কর্মসূচিঃ

অতীতে জাপানে বিরোধী দল গুলোর মানববন্ধন ও কালো পতাকা দেখানোর মতো কর্মসূচি হয়েছে এবারও হয়তো জাপান শাখা বিএনপি ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচন, দেশে হত্যা ও গুম, সরকারের স্বৈরশাসন ইত্যাদি নিয়ে মানববন্ধন ও কালো পতাকা দেখানোর মতো কর্মসূচি নিতে পারে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর এটি রাষ্ট্রীয় সফর তাই জাপান সরকার তুলনামূলক ভাবে কঠোর থাকবে এটিই স্বাভাবিক।

প্রধামন্ত্রীর এই সফরটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা দাবি করে। যখন প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে আসেন তখন তিনি ব্যক্তি থাকেন না। তিনি হয়ে ওঠেন আমাদের সকলের প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও তিনি আমাদের সম্মানিত অতিথি। তাই সকল প্রবাসী তাঁকে স্বাগত জানান। এর মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রসর হোক এটিই প্রত্যাশা।

কাজী ইনসানুল হক,
উপদেষ্টা সম্পাদক
কমিউনিটি নিউজ
ইমেইলঃ kaziensan@gmail.com

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ