প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশে জাপানী হত্যা: জাপানে সহকর্মী জাপানীদের সাথে আমার দুঃসহ একদিন

 

 

 

-কাজী ইনসানুল হক,



অফিসে চা-বিরতি। প্রতিদিনের মতো সহকর্মীদের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলা আর কফি খাওয়ার অবসর। কিন্তু আজ জাপানিরা কেন যেন উসখুস করছে। ওরা নিজেরা কী যেন বলাবলি করছে। আমার কাছে কিছু একটা লুকাচ্ছে বুঝতে পারছি।

ডেস্কে যেতে হবে তাই সরাসরি আমার জুনিয়র সহকর্মীকে বললাম, কি হয়েছে বলো। সে তার মোবাইল অপশনে ইংরেজি করে দেখাল, japanese national gunned down in Rangpur, Bangladesh.

চমকে উঠলাম। দ্রুত আমার মোবাইলে বাংলাদেশের চার-পাঁচটি অনলাইন কাগজ দেখে আরও শিহরিত হলাম। সবাই চলে গেছে কাজে। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে। সব রিপোর্ট পড়ছি।

আজ দুপুরেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে আমরা অনেক কথা বলেছি। বাংলাদেশ প্রসঙ্গও এসেছিল। ইদানীং বাংলাদেশের কোনো খবর হলে সেটা তারা শেয়ার করে। ওদের মুখে পজিটিভ বাংলাদেশের কথা শুনলে বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।
মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি, জাপান ৪ অক্টোবর রোববার টোকিওর ওয়ামা বুনকা সেন্টারে ইদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করছে। প্রতি বছর আমি তাদের দাওয়াত করি। আজ দুপুরেও দুজন অনুষ্ঠানে যাবেন বলে আমার কাছে ঠিকানা নিয়েছেন। এই ঘটনা হয়তো সব বদলে দিল।
এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় গণসংবর্ধনা নিচ্ছেন আর আমি অফিসের ডেস্কে মাথা নত করে কাজ করছি। কাজ করতে পারছি না, কাজ করার ভান করছি। দেড় যুগের চিরচেনা সহকর্মীদের দিকে তাকাতে চাইছি না, অপেক্ষা করছি কখন পাঁচটা বাজবে, অফিস ছুটি হবে, দুঃসহ মুহূর্তের সাময়িক মুক্তি হবে।
জাপানিরা বহির্বিশ্বে অবস্থানরত জাপানিদের নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি মাত্রায় সতর্ক। ইতিমধ্যেই তারা হয়তো বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল জাপানিদের সঙ্গে ম্যান টু ম্যান যোগাযোগ শুরু করেছে। তাদের প্রতি সতর্কতা জারি করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি হটলাইন খোলা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে সব মিডিয়ায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সম্ভাবনা নিয়ে নানান পর্যালোচনা, সরকারি গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত, চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। কিন্তু একজন জাপানপ্রবাসী হিসেবে আমাকে এ লজ্জার দায় নিয়েই তাদের মুখোমুখি হতে হবে।
এ রকম হত্যাকাণ্ড বহু দেশেই হয়। কিন্তু দেখার বিষয় তা প্রতিরোধে আইন রক্ষাকারী বাহিনী কতটা যোগ্য, সরকার কতটা তৎপর। পুলিশ সিজার তাবেলার হত্যা রহস্যের এখনো কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি, তার মধ্যে কুনিও হোশি হত্যা!
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অতীতের মতো দায়সারা মন্তব্য করেই খালাস। উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম আরও দায়িত্বহীন মন্তব্য করে হাসির পাত্র হয়েছেন।
কাজ শেষে ফিরব, বেরোবার পথে আমাদের এক্সপোর্ট সেকশনের সবে কাজে যোগ দেওয়া তরুণ কর্মীর প্রশ্ন, হক, রংপুর কি তোমার বাড়ির কাছে? বুঝলাম ওরা অনেকটাই জেনে ফেলেছে। আঘাতটা এল এরপর। দুই সহকর্মী যখন আমার গাড়ির কাছে এসে চিরন্তন জাপানি কায়দায় বললেন, হক সরি, আমরা কাল ওই অনুষ্ঠানে যাচ্ছি না। এ অপমান সহ্য করা কঠিন।
একজন বাংলাদেশি হিসেবে একজন জাপানিকে নিরাপত্তা না দেয়ার দায় নিয়েই তাকিয়ে আছি যেন হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়। জাপান যেন কোনো মারাত্মক সিদ্ধান্ত না নেয়। তাহলে আমাদের সব উন্নয়ন বিলম্বিত হবে। বহির্বিশ্বে আমরা পাকিস্তান আফগানিস্তানের কাতারে শামিল হতে চাই না।



কাজী ইনসানুল হক,
kaziensan@gmail.com

 

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ