আমাদের দেশে একটা কাজ মানুষ খুব ভালো ভাবে
করতে পারে আর তা হল অন্যের দোষ খুজে বেড়ানো। যেমন কারো প্রতিবন্ধি বাচ্চা
হলে সেটা বাবা মার পাপের ফল বলা হয়, কিন্তু কেন? শিশু তো শিশু সে কেন বাবা
মার পাপের ফল হতে যাবে, সে সর্বদাই নিস্পাপ ভাবেই জন্ম নেয় এবং তার মধ্যে
কোন পাপের রেশ মাত্র থাকে না। তবে কেন এই ভ্রান্ত ধারানা তার একটাই কারন
আমাদের সমাজে সবার মাঝে এখন শিক্ষার অনেক অভাব। শারিরীক প্রতিবন্ধি বা
বুদ্ধি প্রতিবন্ধি নামে যে শব্দ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় শিশুর এই
সমস্যাকেই সেরেব্রাল পালসি বলে।
সেরেব্রাল পালসি কি:
আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশ আছে যার নাম সেরেব্রাম। সেরেব্রামের কাজ হলো
বুদ্ধিমত্তা, বিচার শক্তি, মাংসপেশির ঐচ্ছিক কাজ করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করা।
যদি কোন কারনে শিশু জন্মের আগে, জন্মের সময় বা জন্মের ২ বছরের মধ্যে
মস্তিষ্কের এই অংশটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে শিশুর শারিরীক বা বুদ্ধি জনিত এই
সমস্যাটা দেখা দেয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেরেব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুর শারিরীক এবং বুদ্ধি
জনিত দুইটি সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় শারিরক সমস্যার তুলনায় বুদ্ধিজনিত
সমস্যা কম থাকে আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশুটির শারিরীক সমস্যা থাকলেও
বুদ্ধিজনিত সমস্যা নাও থাকতে পারে।
সেরেব্রাল পালসি হওয়ার কারন সমূহ:
• নির্দিষ্ট সময়ের আগে ডেলিভারী করালে
• জন্মের পর শিশুটি যদি মস্ত্মিষ্কের কোনো ইনফেকশনে ভোগে। য়েমন:
এনকেফালাইটিস, মেনিন্জাইটিস ইত্যাদি।
• জন্মের সময় শিশুর মাথায় আঘাত পেলে; বিশেষ করে ফোরসেপ ডেলিভারীর সময়
• শিশুটি পড়ে গিয়ে বা কিছু দ্বারা মাথায় আঘাত পেলে
• গর্ভাবস্থায় মা অপুষ্টিতে ভূগলে
• গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্ডিস হলে
• গর্ভাবস্থায় মায়ের কিডনিতে বা পস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে
• মা যদি গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন
করে
• জন্মের সময় শিশুটি যদি অক্সিজেনের অভাবে ভোগে
• শিশুটির জন্মের ১ সপ্তাহের মধ্যে যদি খুব বেশি জন্ডিস হয়
সুতরাং পরিবারের সবার সহযোগিতা ও সঠিক যত্নের দ্বারা শিশুর অনেক জটিল
সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শিশুর শারিরীক সমস্যা দুর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে
আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা ও অপরিসীম। তবে ফিজিওথেরাপি'র
নামে শুধূমাত্র মেশিন যেমন: হিট, ভাইব্রেশন, ইলেকট্রিক্যাল ষ্টিমুলেশন
ইত্যাদি ব্যবহার করে যে অপচিকিৎসা দেয়া হয় তা থেকে বেঁচে থাকাই ভালো। তাই
কোন প্রতিবন্দী বা বিকলঙ্গ শিশুকে পরিবারের বা সমাজের অভিশাপ বা বোঝা না
ভেবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন দিয়ে শিশুর সুস্থ জীবন নিশ্চয়তা আমাদের
কেই করতে হবে কারন আজকের শিশুরাই আমাদের আগামীদিনের ভবিষ্যৎ।
______________________________
সাথী আক্তার
শিক্ষার্থী, শেষ বর্ষ
ফার্মাসি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি