শরীর খারাপ
হলে আমরা কী করি?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ গ্রহণ করি। অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ
গ্রহণ অতি সহজ কাজ, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। এখানে আমরা নিজেরা রোগী।
নিজেরাই চিকিৎসক। আর উপদেশ দেয়ার মানুষেরও অভাব নেই আমাদের সমাজে। ঠাণ্ডা
লাগার কারণে সর্দি, কাশি বা জ্বর নিয়ে কেউ চিকিৎসকের কাছে গেলে অবশ্যই
চিকিৎসক রোগীকে সর্দির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, কাশির জন্য কফসিরাপ ও একটি
ব্রোড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিবেন নির্দ্বিধায়। এসব ছোটখাটো
রোগের চিকিৎসার জন্য আজকাল আর কেউ সচরাচর চিকিৎসকের কাছে যায় না। আমাদের
দেশে এ সব সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা নিজেরাই করতে জানি। আমরা সবাই এ সব
রোগে মাঝেমধ্ যে আক্রান্ত হই। কিন্তু কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিৎ না।
বেশির ভাগ ক্রেতা ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিশন ছাড়াই ওষুধ কেনাকাটা করছে।
যাকে বলে ওটিসি ওষুধ। বাংলাদেশে ওটিসি (ওভারদ্যকাউন্টার) ড্রাগ ও
প্রেসক্রিপশন ড্রাগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশে সব ওষুধই ওটিসি
ওষুধ। এখানে কোনো ওষুধ কিনতেই প্রেসক্রিপশন লাগেনা। অনেক দোকানে কোনো
ফার্মাসিস্ট নেই। অথচ লাইসেন্স প্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো ওষুধের দোকান
লাইসেন্স পেতে পারেনা। বিপুল সংখ্যার ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া সাধারণ লোক বা
পাবলিকের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু আপনি যদি নিজেই এই ওষুধ নিয়ে থাকেন,
তবে আপনার জানা উচিত আপনি কি খাচ্ছেন, কেন আপনি এটা খাচ্ছেন, এটা কি রকম
কাজ করে, এবং কিভাবে এই ওষুধগুলো ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়।
যারা চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেতে চান তাদের জন্য আমাদের ভালো মানের
ফার্মা কোম্পানি আছে যারা দক্ষ ফারমাসিস্ট দ্বারা ওষুধ বানান এবং সঠিক
নির্দেশনার প্রচারপত্র দিয়েদেন। এখন ওষুধ কেনার সময় আপনাকে যেটা মেনে চলতে
হবে তাহলোঃ
১। সব সময় ওষুধের লেবেল এবং রোগীর লিফলেটের বা প্রচার তথ্য পড়বেন এবং
নির্দেশ গুলো ভালোভাবে মেনে চলবেন। লেবেল গুলোতে ওষুধের সক্রিয় উপাদানের
নাম ও পরিমাণ, সাবধানতা এবং নিরাপদ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নির্দেশন্স দেখে
নিবেন।
২। ওষুধ বাছাই করার সময়, উপাদান গুলোর নাম জানুন এবং জেনেরিক ওষুধ কেনার
চেষ্টা করুন। জেনেরিক ওষুধে ব্র্যান্ড ওষুধের মত একই সক্রিয় উপাদান থাকে,
কিন্তু সাধারণত এগুলোর দাম কম হয়।
৩। লেবেল নেইএ মন কোন কনটেইনার বালেবেল পড়া যায় না এমন কনটেইনার থেকে কখন
ওকোনো ওষুধখাবে না বা কিনবেন না।
৪। যদি সম্ভব হয় তবে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি (একের ভেতর অনেক) ওষুধের
বদলে এক টাস ক্রিয় উপাদান দিয়ে তৈরি ওষুধ বেছে নিন। কেন আপনি যেসব ওষুধের
দরকার নেই সেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেবেন?
৫। ট্যাবলেট বা বড়ি কখনও কখনও “খাবারের নালী” -তে আটকে যেতে পারে। এটা যাতে
না ঘটে সেজন্য অবশ্যই অন্তত: আধা গ্লাস পানি পান করবেন এবং ওষুধ গেলার পর
কয়েক মিনিটের জন্য সোজা হয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন।
৬। যদি আপনার একই রকমের অসুখ হয়ে থাকে তবুও অন্য কারো জন্য প্রেসক্রাইব করা
ওষুধ, বা আগের অসুস্থতার সময়ের বেঁচে যাওয়া ওষুধ খাবেন না।
৭। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিজে নিজে ওষুধ ঠিক করে খাওয়ার আগে অবশই
আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিৎ।
৮। ওষুধ এর মেয়াদ আছে কিনা সেটা ভালো করে দেখে নিবেন। বেশিরভাগ ওষুধ দুই
থেকে তিন বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় এবং নষ্ট হওয়ার তারিখ ওষুধে উল্লেখ করা
থাকে।
ওটিসি ড্রাগের ক্ষেত্রে আত্মচিকিৎসা গ্রহণযোগ্য হলেও সম্ভাব্য পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখতে হবে। আত্ম চিকিৎসা যদি অনিয়ন্ত্রিত ও
অযৌক্তিকহয়, তবে তা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে
প্রেসক্রিপশন ড্রাগ গুলো সম্পর্কে আমাদের ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ড্রাগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ
অসুস্থ হওয়া ছাড়াও মৃত্যুবরণ করে প্রতি বছর। তাই যে কোনো ওষুধ গ্রহণের আগে
ওষুধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিন, তারপর ওষুধ গ্রহণ করুন। তাহলেই শুধু আপনি
নিরাপদ থাকবেন।