|
শ্বেতী
সাথী আক্তার
অসচেতনতার
কারণে শ্বেতী রোগীদের সামাজিক জীবন সীমিত হয়ে পড়ে। রং তৈরি করার কোষ
অকার্যকর হলে ত্বকের রং বিবর্ণ হয়ে যায়, এটাই শ্বেতী।
শ্বেতী হলে তা
শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে বিরূপ প্রভাব ফেলে না। করমর্দন, আলিঙ্গন বা অন্য
কোনোভাবে এই রোগ সংক্রমিত হয় না। কুষ্ঠ ও
শ্বেতী এক বা একই ধরনের রোগ নয়।
কুষ্ঠ ছোঁয়াচে। কুষ্ঠ হলে ত্বক মোটা হয়ে যায়, আঙুলে অনুভূতি কমে যায়।
তবে শ্বেতী হলে ত্বক পাতলা হয়ে যায়, অনুভূতির কোনো সমস্যা হয় না।
কারনঃএতে সর্বপ্রথম সাদা বিন্দুর দাগ পড়ে এবং ধীরে ধীরে অধিক স্থানজুড়ে সাদা
হয়ে পড়ে। স্কিনের মেলানিন তথা পিগমেন্ট যখন কমে সাদা প্যাচ বা সাদা অংশ তৈরি
হয় তখন তাকে শ্বেতী বলে। ঠোঁট, মুখমণ্ডল, গ্রিবাদেশ, হাত ও পায়ের স্কিনে
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ প্রকাশ পায় এবং দাগগুলো চাকা চাকার মতো হয় বা
এবড়ো থেবড়ো হয়ে বাড়তে থাকে। যদি শরীরের সর্বত্র এই রূপ স্কিনের বিকৃতি ঘটে
তবে একে অ্যালর্বিনোম বলে। কারণ, শ্বেতী-সাদা রোগের কারণ নিশ্চিত করে বলা
সম্ভব নয়।
লক্ষণঃ বাচ্চা, স্ত্রী-পুরুষ যে কারোই হতে পারে। তেমন স্বাস্থ্যহানি হয় না,
শুধু স্কিনের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট হয়। জীবননাশের তেমন কোনো আশঙ্কা থাকে
না, মানসিক কষ্টটা বর্তমান থাকে। রোদ ও আগুনের তাপ সহ্য করতে পারে না।
প্রথমে ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যায়। কিছু দিনের মধ্যেই দাগগুলো মিলে
বৃহদাকার ধারণ করে। যে স্থান আক্রান্ত হয় সে স্থানের লোম ঠিকই থাকে। কিন্তু
সাদা হয়ে যায়। ঠোঁট, চোখের পাতা, নাকের ডগা, যৌনাঙ্গ এবং মিডিকাস যেমন,
ব্রেনেও শ্বেতী দেখা যায়। মায়ের গর্ভ থেকেও পুরো শিশুটি ধবল হতে দেখা যায়।
চিকিৎসাঃরোগ এর বয়স এবং রোগীর বয়স কম হলে এই রোগ সহজেই সারিয়ে তোলা সম্ভব।
প্রাথমিক পর্যায় হলে হোমিওপ্যাথিতে এর সফল চিকিৎসা আছে। রোগের বয়স দীর্ঘ
বা ক্রনিক হলে দীর্ঘ দিন ওষুধ সেবন করতে হয়। হোমিও মতানুসারে শ্বেতী
একদৈশিক/ওয়ান সাইডেড ডিজিজ। তাই অত্যন্ত কম লক্ষণ। নিম্নলিখিত মেডিসিনগুলো
শ্বেতী রোগে পরীক্ষিত আরোগ্য দান করে আসছে লক্ষাণানুসারে-
সোডিনাম, রেডিয়াম ব্রোমাইড, সিফিলিনাম, সালফার আইড, আর্সেনিক সালফ
ফ্লেবাম, পাইপার মিথিটিকাম, নেট্রাম কার্ব, নাইট্রিক এসিড, চেলডোনিয়াম,
ইত্যাদি মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা যায় এবং ওয়েল বুচি, বাবাচি
বাহ্যিক প্রয়োগে হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ আরগ্য হয়ে থাকে। চিকিৎসক ও রোগী
দু’জনকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়।
করণীয়ঃকোষ্ঠকাঠিন্য দোষ থাকলে দূর করতে হবে। দুধ, ছানা, মাখন, স্নেহজাতীয়,
ফলের রস ও অন্যান্য পুষ্টির খাদ্য হিতকর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ভালো।
নিষেধঃ ধূমপান, এলকোহল সেবন, উগ্রমশলাযুক্ত খাবার বর্জনীয়। কেউ কেউ বলে
থাকেন- সাদাজাতীয় খাবার খাবেন না। যেমন- দুধ, ডিম, ছানা ইত্যাদি, তা
সম্পূর্ণ কুসংস্কার।
শ্বেতী নিয়ে ভাবনা এখন আর ততটা নেই। একটা সময় অবশ্য ছিল যখন মানুষ শ্বেতী
বা ধবল সমস্যাটাকে অন্য ১০টা রোগের মতো মনে করত। একে অভিশাপ মনে করত।
একবার শুরু হলে বুঝি আর শেষ নেই। তাই এর নাম শুনলেই আঁৎকে উঠত। এমনকি শ্বেতী
রোগীর সাথে ওঠা-বসা, চলাফেরা, বৈবাহিক বন্ধন থেকে বিরত থাকত। বর্তমান
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিরলস সাধনায় অনেকটা নিরাময়যোগ্য ওষুধের আবিষ্কার
হয়েছে।
_______________________________
সাথী আক্তার
শিক্ষার্থী
শেষ বর্ষ, ফার্মাসি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|