ওমেগা-৩
সাথী আক্তার
গবেষণাতে দেখা গেছে যে, জাপানিদের গড় আয়ু বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও
এদের খাদ্য তালিকা ভিন্ন কিন্তু একটা জিনিস খুব কমন, এদের সবারই খাদ্য
তালিকায় রয়েছে সমৃদ্ধ মাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। বর্তমানে সবচেয়ে
আলোচিত শব্দ হল ওমেগা-৩ আজ পর্যন্ত এমন কোন ফ্যাটি এসিড নিয়ে এত বেশি
আলোচনা হয়নি যতটা হয়েছে এবং চলছে এই ওমেগা-৩ কে নিয়ে।কি হতে পারে তার কারন?
কেনই বা এত বেশি আলচনা?
ওমেগা-৩
ওমেগা হচ্ছে একধরনের পলিআনস্যাটুরেটেড ফ্যাটি এসিড। একে বলা হয়
অত্যাবশ্যকিয় ফ্যাটি এসিড যা শরীরের জন্য প্রয়োজন কিন্তু মানব শরীর তা
উৎপন্ন করতে পারে না। সুতরাং, খাবারের মাধ্যমে এটি আমাদের গ্রহন করতে হয়।
তিন ধরনের ওমেগা আছে-omega-3, omega-6, omega-9.
এর মধ্যে ওমেগা-৩ সবচেয়ে উপকারি।
EPA(eicosapentaenoic
acid), DHA(docosahexaenoic acid) যা আমরা মাছের তেল থেকে পেতে
পারি। অন্যটি
ALA(alphalinolenic acid)
,এটি পাওয়া যায় উদ্ভিদ থেকে। এই ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের সেল মেমব্রেন
এ থাকে। কোষের ভিতর দিয়ে যেসব জিনিস চলাচল করে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি
সেলের থেকে অন্য সেলের মধ্যকার যোগাযোগ রক্ষা করে। যে সব কোষ এ ওমেগা-৩
বেশি থাকে সেই কোষ বেশি কার্যকর ভাবে কাজ করে। ওমেগা ফ্যাটি এসিড হরমোন
উৎপাদনও নিয়ন্ত্রন করে।
ওমেগা-৩ এর উপকারিতা
• বর্তমানে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ওমেগা-৩ হৃদরোগ রোধ করে এবং
রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে এবং হার্ট এটাক এর ঝুঁকি কমায়; যদি হার্ট এটাক
হয় তবে তা মারাত্নক হবার সম্ভাবনা কমায়। স্ট্রোক এবং অস্বাভাবিক
হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখে। শিশুর মস্তিস্ক
গঠনেও সাহায্য করে । মাছ বাতিত ওমেগা-৩ DHA এর একমাত্র বিকল্প উৎস হচ্ছে
বুকের দুধ ।
• আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ডিপ্রেশন এবং মনোসংযোগ ব্যাঘাত
জনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও কাজ করে। প্রাথমিক কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে ওমেগা-৩
ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার বৃদ্ধির ঝুঁকি
হ্রাস করে। এজমা, এক্সিমা, নেফ্রটিক সিনড্রম, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি রোগের
উপর এর উপকারি ভূমিকা নিয়ে কাজ করে চলছেন গবেষকরা।
• অতিরিক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে
হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্ণলে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে,
অতিরিক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার পুরুষের শুক্রাণুর পরিমান কমিয়ে দিতে পারে।
গবেষণার কাজে অংশ নেয়া পুরুষদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার
খাওয়ায় অভ্যস্থ তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা যারা অল্প ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার
খায় তাদের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসাবে
পাওয়া গেছে খাবারের বহুলাংশে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উপস্থিতি । যাদের খাবারে
বেশি মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে তাদের শুক্রাণু সংখ্যা যারা খুবই কম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার খান তাদের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। তবে ওমেগা-৩
ফ্যাটি এসিড (এক প্রকার ফ্যাট যা মাছ ও উদ্ভিদের তেলে পাওয়া যায়)
শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। যেসব পুরুষ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
সমৃদ্ধ খাবার ( ইলিশ, ভেটকি, পেঁপে, কাঁঠাল সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজি, গম,
ইত্যাদি) খান তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা যারা খান না তাদের চেয়ে ১.৯ শতাংশ
বেশি। ঐ গবেষণায় সুস্থ ও সক্ষম শুক্রাণু তৈরিতে ওমেগা ফ্যাটি এসিডের
ভূমিকার কথা বলা হয়েছে এভাবে যে, যাদের খাবারে এই বিশেষ উপাদানটি থাকে
তাদের শুক্রাণু ডিম্বাণুকে খুব ভাল ভাবে নিষিক্ত করতে সক্ষম।
• মেন্সট্রুয়াল ব্যথা অনেক সময়
Menstrual
হরমোনের কারণে হয়। এই হরমোনের কার্যকারিতা কমানোর ক্ষেত্র ওমেগা-৩
গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।১৯৯৫ সালে ইউরোপীয়ান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল
নিউট্রিশানের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায়
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে তাদের মেন্সট্রুয়াল ব্যথা তাদের চেয়ে কম যারা
নিয়মিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করে না।
ওমেগা-৩ উৎস
তেল যুক্ত মাছ হল সবচে ভাল উৎস ওমেগা-৩ ।সামদ্রিক মাছ ও আর ও অনেক সামদ্রিক
খাবার এ EPA
ও DHA
পাওয়া যায়।অন্য ফ্যাটি আসিড
ALA পাওয়া
যায় উদ্ভিদ থেকে- বাদামভেজিটেবল ওয়েল এবং ওলিভ ওয়েল।
কি পরিমান ওমেগা-৩ প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ৬১০মিলিগ্রাম
EPA
ও DHA দরকার। মহিলাদের ক্ষেত্রে
৪৩০মিলিগ্রাম। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন সামুদ্রিক তেলযুক্ত মাছ খেলে এই পরিমান
ওমেগা-৩ পাওয়া সম্ভব । গবেষণায় দেখা গেছে যে, হৃদ রোগে আক্রান্ত কোন রুগি
ওমেগা -৩ কাপ্সুল খাইলে তার ম্রতুর ঝুকি ২৫% পর্যন্ত হ্রাস পায়। তবে
গর্ভবতী মহিলাদের এই কাপ্সুল খাওয়া নিষেধ।
জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী থেকে প্রকাশিত যে- পুরুষদের দিনে ১.৬গ্রাম (বয়স
১৯-৭০) এবং মহিলাদের ১.১গ্রাম আলফা লিনোলিক এসিড যুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ।
• আমেরিকান পথ্যসম্বন্ধীয় সমিতির মতে দিনে গড়ে ৫০০মি.গ্রা মোট
ডকোসাহেক্যানয়িক এসিড এবং ইকোসাপেন্টানয়িক এসিড সম্ম্রেদ খাবার খাওয়া উচিৎ।
• আমেরিকান হৃদ সমিতি থেকে বলা হয়েছে কমপক্ষে সপ্তাহে দুইটি ফ্যাটি এসিড
যুক্ত মাছ খাওয়া উচিৎ।
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
(WHO) এর মতে
সপ্তাহে ২টি ফ্যাটি মাছ এবং রাতে ২০০-৫০০মি.গ্রা মোট ডকোসাহেক্যানয়িক এসিড
এবং ইকোসাপেন্টানয়িক এসিড থাকবে।
• এবং শিশু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বলেছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য দিনে কমপক্ষে
২০০মি.গ্রা মোট ডকোসাহেক্যানয়িক এসিড এবং ইকোসাপেন্টানয়িক এসিড সমৃদ্ধ
খাবার খাওয়া উচিৎ ।
_______________________________
সাথী আক্তার
৪র্থ বর্ষ, ফার্মেসি বিভাগ,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |