প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

"গ্রামে মৃতদেহ গুলো আকাশ থেকে বৃষ্টির মত পড়ছিলো"

 

 

অ‌্যান্টন জাভারেভ

প্রথমে বড় ধরনের একটি বিস্ফোরণের শব্দ হল, প্রচন্ড শব্দে ঘরবাড়ী গুলো সব কাঁপতে শুরু করলো। এরপরই মৃত শরীর গুলো আকাশ থেকে পড়তে লাগলো। একটি এসে পড়লো ঘুমিয়ে থাকা এই গ্রামটির ইরিনা তিপুনোভা'র নড়বড়ে ছাদে। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ১৭ পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়া পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে বিস্ফোরিত হওয়ার ঠিক পরের ঘটনা এটি।

"প্রথমে একটি প্রচন্ড গর্জনের শব্দ এবং সবকিছু কাঁপতে শুরু হলো। এরপর টুকরো গুলো আকাশ থেকে পড়তে আরম্ভ করলো", ৬৫ বছরের পেনশনভোগী তিপুনোভা জানালেন। "এরপর আমি একটি শব্দ শুনলাম, এক নারীর দেহ আমার রান্না ঘরের ছাদের উপর পতিত হয়েছে, আঘাতে ছাদ ভেঙে গেছে।" ঘরের বাইরে সংযুক্ত করা রান্না ঘরের ছাদ ছিদ্র হয়ে মহিলার দেহটি তার রান্না ঘরের ভেতর পতিত হয়।

ঘরের ভেতর বিছানার কাছে বস্ত্রহীন এক নারীর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। এখান থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে তিপুনোভা'র বাড়ি। আরো কয়েক ডজন মৃতদেহ পড়ে আছে গম ক্ষেতে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারান ২৯৮ জন।

ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে তিপুনোভা'র চোখ এখনো ভিজে ওঠে। "মৃতদেহটি এখনো সেখানেই রয়ে গেছে কারণ তারা আমাকে বলেছে বিশেষজ্ঞরা এসে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশোর্ধ্ব আরেক নারী বললেন, বিস্ফোরণের শব্দে তিনি ঘর থেকে ছুটে বাইরে চলে আসেন। "আমি দরজা খুলেই দেখি মানুষজন আকাশ থেকে পড়ছেন। একটি এসে পড়লো আমার সবজির মাচায়।"

শুধুমাত্র যে মৃত মানুষরাই পড়ছিলেন তা নয়, লোহার টুকরো, মানুষের মালপত্র এবং অন্যান্য নানান জিনিসপত্র সব এই কৃষি জমির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগলো। স্থানটি রাশিয়ার সীমান্ত হতে ৪০ কিঃমিঃ ভেতরে অবস্থিত।

বিমানের সম্মুখ ভাগ পড়েছে একটি সূর্যমুখীর ক্ষেতে, তিপুনোভা'র বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ দূরে। ধ্বংসাবশেষ, মৃতদেহের টুকরো ইত্যাদি সব কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।

উদ্ধারকর্মীরা বেশিরভাগ মৃতদেহই খুঁজে পেয়েছেন, তাদের কোনো কোনোটি প্রায় অক্ষত রয়ে গেছে, অন্যান্য গুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায়। কোনো কোনো মৃতদেহ একসাথে স্তুপাকারে পড়েছে, কাঠির মাথায় কাপড় বেঁধে স্থান গুলোর চিহ্ন রাখা হয়েছে।

কোনো কোনো মৃতদেহ গুলোকে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়, কোনা গুলোকে পাথর বা মাটির টুকরো দিয়ে চেপে রাখা হয়। পলিথিনের ফাঁক দিয়ে অনাবৃত পা দু'টো বেরিয়ে এসেছে অনেকের ক্ষেত্রে। অন্ততঃ একজনের পায়ের উপর কালশীটের দাগ রয়েছে।

নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে, এদের মধ্যে ককপিটের ঠিক পেছনে পড়ে রয়েছে ১০ বছরের এক বালকের দেহ, তার ছোট্ট শরীরকে ঢেকে রাখা হয়েছে একটি পলিথিন দিয়ে।

বিমানটি ভূপাতিত করার ২৪ ঘন্টা পর বেশির বিমানের বেশির ভাগ টুকরো গুলোই এদিক-ওদিক পড়েছিলো। পরিত্যাক্ত জুতো, ঔষধ, খালি স্যুটকেস এবং কাপরচোপড় চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে পড়েছিলো।

হত্যাকান্ডের ছাপ মুছে ফেলতে মৃতদেহ গুলো যেখানে পড়ে ছিলো সে সকল স্থান থেকে পরিস্কার করে ফেলা হয়, সাথে সরিয়ে ফেলা হয় বিমানের মূল কাঠামোর অংশ এবং মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের লাল-নীল লোগো সম্বলিত ডানা।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার অল্প ক'জন উদ্ধারকর্মীই সেখানে পৌঁছান, শুক্রবারে লটবহর পৌঁছায় সেখানে। তারা বড় দু'টি তাবু গাড়েন।

যুদ্ধরত গেরিলারা সতর্কতার সাথে অগ্রসর হচ্ছিলো। ইউক্রেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে বিমানটি ভূপাতিত করার অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদেরকে বাধা না দেয়ার অংগীকার করেছে।

দূরে অব্যাহত মর্টার আর গোলাগুলির আওয়াজ সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। রয়টার্স।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]