|
দিল্লীর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা এবং আমাদের রাজনীতি
দিল্লীর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়
ইতিমধ্যে ৪২ জনের প্রাণ গিয়েছে এবং কয়েকশ মানুষ আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন,
হয়েছে ধন-সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি, হিংসার আগুনে পুড়েছে হৃদয়ে ধারনকৃত পরম
শ্রদ্ধা-বিশ্বাসের আকড়স্থল মসজিদ-মন্দির, অর্জনটা কার ?
সন্তানহারা হিন্দু বা মুসলমান মাকে জিজ্ঞেস করুন আপনার সন্তান ধর্মীয়
উন্মাদনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে প্রাণ কেঁড়ে নিয়েছে অন্য ধর্মীয় বিশ্বাসী মায়ের
সন্তানের, আপনার অনুভূতি কি ? আমি নিশ্চিত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে কোন মা এই
ধরনের বর্বরতায় গৌরবান্বিতবোধ করবেন না, কম-বেশী লজ্জ্বাতাড়িত শোকাচ্ছন্ন
ভাগাবেগে তাড়িত হবেন ।
নালা-নর্দমায় পাওয়া যাচ্ছে মানব সন্তানের মরদেহ, মানবতা-মানবিক মূল্যবোধ
কোথায় ? আমরা কোন বিশ্বে বসবাস করছি ? ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতার কারনে আমরা
কি পারি অন্য ধর্মালম্বীকে পিটিয়ে হত্যা করতে, তাদের বাড়ী-ঘর, ধর্মের
পবিত্র স্থান মসজিদ-মন্দির এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করতে
? সাধারন শান্তিপ্রিয় মানুষ এই সমাজ-রাষ্ট্র চায় না । কিন্তু আমাদের ধর্মীয়
রাজনীতির মহাজনরা চলেন সম্পূর্ন উল্টোপথে । পরিবারগুলোর স্বজন হারানোর
হাহাকার, ব্যক্তি-রাষ্ট্রের সম্পদহানি এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠানের অবমাননা
ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতবিদদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না । বরং এই সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার ধামামাকে বজায় রেখে রাষ্ট্র ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখা বা ভবিষ্যত
রাজনীতি এবং রাষ্ট্র ক্ষমতাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় ।
এই দাঙ্গা দমনে মোদি সরকারের ব্যর্থতা সর্বমহলে সমালোচিত হচ্ছে । কিন্তু
মোদি সরকার এই দাঙ্গা সৃষ্টিতে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীদল গুলোর নাগরিকত্ব
আইন নিয়ে বিভ্রান্তি এবং উস্কানী মূলক বক্তব্যকে দায়ী করছেন । বাস্তবতা কি
তা প্রমান করে ! বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন, মোদি সরকারের বিভিন্ন
নেতা-মন্ত্রী বিশেষ করে অমিত শাহের বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতি আন্দোলনরত জনতাকে
বিক্ষুব্ধ করে । তাছাড়া এই আন্দোলনকারী জনতার মিছিলে প্রথমে আক্রমন করে
ক্ষমতাশীন দলের গেঁড়ুয়া বাহিনী, এরা মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্তদের ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ী-ঘর এবং মসজিদে আগুন দিয়ে ধবংস যজ্ঞে লিপ্ত হয় । আইন
শৃংঙ্খলা বাহিনীর নীরবতার সুযোগে এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ পরিগ্রহ করে
। হিন্দু-মুসলিমরা পারষ্পরিক বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ-মন্দিরে
আগুন দেয় এবং পারষ্পরিক প্রাণনাশি হামলায় লিপ্ত হয় ।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে,
এটা একান্তই স্বাভাবিক । পারষ্পরিক হামলায় নিহতদের মধ্যে হিন্দু
ধর্মালম্বীদের সংখ্যা বেশী হওয়ায় আমাদের ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক নেতারা জেহাদী
বক্তব্য নিয়ে মাঠে থাকলেও কিছুটা মৃয়মান, নিহতদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা
বেশী হলে বা শুধু মুসলিমরাই মারা গেছেন, এমনটা হলে বাকীটা আমরা সহজেই কল্পনা
করতে পারি । একটু কল্পনা করুন একটা হিন্দু প্রধান রাষ্ট্রের মধ্যকার ধর্মীয়
দাঙ্গায় নিহতদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা বেশী, এর পরেও এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েনি
পুরো হিন্দু প্রধান ভারতজুড়ে । কারন ভারতবাসী জনগনের মধ্যে দীর্ঘদিনের
অসাম্প্রদায়িক ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি চর্চার মনোস্তাত্ত্বিক প্রভাব এখনো
ভূমিকা রাখছে । কিন্তু বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক দলের ক্রমাগত উত্থান
ভারত-বাংলাদেশ তথা আমাদের উপমহাদেশীয় ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং
সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ । তবে এই দাঙ্গা-বিক্ষোভের মধ্যেও আশার আলো হচ্ছে
দাঙ্গা চলাকালিন সময়ে দাঙ্গারত মুসলিম প্রধান অঞ্চলে ইতিপর্বে আয়োজিত প্রায়
লগ্নভ্রষ্ট হিন্দু মেয়ের বিয়ের নিরপত্তা বিধান করে লগ্নরক্ষা করেন এলাকার
মুসলিম তরুণ ছেলেরা । অন্যদিকে দাঙ্গারত হিন্দু প্রধান অঞ্চলের মসজিদের
নিরাপত্তা দিয়ে শুক্রবারের জুমআর নামাজের ব্যবস্থা করেন হিন্দু তরুণরা ।
সময় এসেছে ব্যক্তি জীবনের ধর্ম পালন ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির মাধ্যমে ধর্ম
পালনের মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে প্রচার মাধ্যমে ভূমিকা রাখার । ব্যক্তিজীবনে
ধর্ম পালন ধর্ম মানুষকে বিনয়ী, সত্যবাদী, নম্র-ভদ্র এবং সংবেদনশীল মানুষে
পরিণত করে । আবার ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রভাবে ধর্ম পালনের ফলে ঐ ব্যক্তিই
হয়ে ওঠেন হিংস্র, বর্বর এবং জন্তু-জানোয়ারের চাইতে অধিকতর পৈচাশিক মানবে,
হলি আর্টিজেনসহ সাম্প্রতিক বিশ্বে আই এস এবং তালেবানদের দ্বারা সংগঠিত
হত্যাকান্ডের ভিডিও চিত্রগুলো দেখলে তা প্রমান করে । আমাদের উচিত ধর্মাশ্রয়ী
যে কোন রাজনীতিকে না বলা এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
মানবিক সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা ।
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
ওয়ারাবি,সাইতামা,জাপান।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|