প্রতিরোধ
-মঈনুল ইসলাম মিল্টন-
আবার কাল শকুনের ছায়া দেখি এ বাংলায়
আবারো ধারালো তরবারির আঘাতে
রক্তাক্ত এ বাংলাদেশ ।
এ স্বাধীন ভূমে, হিংস্র হায়না আর নরপশুর বিচরণ
আমি চাই না ।
ফিনকী দেয়া তাজা রক্তে পা রেখে জল্লাদের উল্লাস
আমি দেখতে চাই না ।
কিশোরীর দেহ নিয়ে,শেয়াল কুকুরের তাণ্ডব, টানাটানি
আর আর্তনাদ ,আমি আর দেখতে চাই না
বর্ডারে আমার অসহায় বোনের ঝুলে থাকা লাশ
আমি আর দেখতে চাই না ।
রাস্তার পাশের ফুটপাথে ,ঘিঞ্জি গলি কিংবা বস্তিতে
ক্ষুধার্ত ন্যাংটো শিশুর মুখ
আমি আর দেখতে চাই না।
খাদ্য,বস্ত্র ,বাসস্থান কিংবা চিকিৎসার অভাবে
আর কোন মায়ের হাহাকার,দীর্ঘশ্বাস ও ক্রন্দন
আমি আর দেখতে চাই না।
শিক্ষার নামে অশিক্ষা ,ধর্মের নামে অধর্ম
আমি আর দেখতে চাই না ।
মানুষগুলোর আজ কি হলো ?
তাঁরা কি ভুলে গেছে,ত্রিশ লক্ষ প্রান আর দুলক্ষ
মা,বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে -এ বাংলাদেশ ।
এ দেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়
এ দেশ তোমার,আমার,আমাদের সকলের ।
যেখানে অন্যায় ,সেখানে প্রতিবাদ ,যেখানে অন্যায় সেখানে প্রতিরোধ ।
যে মানুষ অন্যায় দেখে মাথা নিচু করে থাকে
আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
পিতৃ হত্যার অথবা ধর্ষিতা বোনের বিচার চেয়ে
যে সন্তান কিংবা ভাই ফুঁসে উঠতে জানেনা
আমি তাঁকে ঘৃনা করি
যে ডাক্তার ,চিকিৎসক নামধারী ব্যবসায়ী
আমি তাঁকে ঘৃনা করি
সরকারী কুর্দি পরে ,যে পুলিশ অপকর্মে লিপ্ত
আমি তাকে ঘৃনা করি ।
যে বিচারক বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত
আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
যে কর্মকর্তা ,কর্মচারী কিংবা কেরানী
লাল ফিতায় ফাইল বন্ধী রেখে উৎকোচ গ্রহন করে
মানুষের অসহায়ত্ব দেখে মজা লোটে
আমি তাঁদের ঘৃণা করি ।
হাজারো অন্যায়,অবিচার আর সমাজের অধপতন দেখেও
যে যুবকরা কুলসিত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলার
ব্রতী না লয়ে,প্রেমালাপ আর ধোঁয়া তোলা
চায়ের টেবিলে ,আড্ডায় মত্ত থাকে
আমি তাঁদের ঘৃণা করি ।
যে যোদ্ধা ,যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পিছু হটে প্রান বাঁচিয়ে
কাপুরুষের মতো প্রেয়সীর আঁচলে মুখ লুকায়
হাঁসতে হাঁসতে যে যোদ্ধা অকুত ভয়ে প্রান বিসর্জন
দিতে জানে না ,আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
যে কবি প্রতিদিন দালাল হয়,অন্যায়,অত্যাচার আর
নিপীড়ন দেখেও যে কলম ধরেনা
সে কবি নামের কলঙ্ক ,আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
যে সাংবাদিক সামান্য অর্থ লোভে,কোন বিশেষ গোষ্ঠী
কিংবা দলের কাছে বিবেক জিম্মি রেখে,নিজকে বিকিয়ে দেয়
আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
মানুষ গড়ার কারিগর নামধারী যে শিক্ষক
শিক্ষাথীর অন্তরে মানবিকতার বীজ বপন করতে ব্যথ
আমি তাকে ঘৃণা করি।
যে যুবক,দলীয় ক্ষমতার দম্ভে,টেন্ডার বাক্সে লাথি মেরে
অবৈধ্য উপায়ে কাজ আদায় করে
আমি তাঁকে ঘৃণা করি।
যে নেতা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ছিনতাই করে
আমি তাঁকে ঘৃণা করি ।
ফিরে পাক মানুষ তাঁর হারিয়ে যাওয়া
ভাত ও ভোটের অধিকার ।
পুলিশ আর মিলিটারির বুটের তলায় গনতন্ত্র ও মানবতা
পৃষ্ঠ হতে পারে না ।
মিথ্যা মামলা, হামলা আর রিমান্ডের নামে
ইন্টারোগেসন সেলে বন্দি রেখে
চাপকে চাপকে দেহ থেকে রক্ত বেরকরার অত্যাচার বন্ধ হউক
অন্ধকার হাজত খানায়,গোঙানীর শব্দ,
আর্তনাদ এবং কান্নার অবসান হউক ।
মানবতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত হউক
মানুষের অন্তরে আবার নজরুল ,সুকান্তের আবির্ভাব ঘটুক
এই আত্ম বিশ্বাসী দুর্দান্ত সাহসী বাংলায় ।
প্রতিটি ঘরে ঘরে ,আবার অগ্নিবীনা হাতে তুলে নিয়ে
জেগে উঠুক বাংলার দামাল ছেলেরা ।
প্রতিটি ঘরে গান কবিতায় আন্দো লিত হউক মানুষের মন,মনন
মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হউক , পশুত্ব নিপাত যাক
জালিমের জুলুম থেকে মুক্তি পাক আমার সোনার দেশ ।
কৃষক ,শ্রমিক ,মজুর তথা সমস্ত মানুষের শক্ত হাত গুলো
উওোলিত হউক দেশ গড়ার কাজে
কৃষাণির উঠুনে ছড়িয়ে পড়ুক সোনালী স্বপ্ন ।
বহু কালের জমানো দীর্ঘশ্বাস ও হতাশার কালো মেঘ ঝেড়ে ফেলে
উঠে দাঁড়াক বাংলার প্রতিটি যুবক যুবতী।
আবার জেগে উঠুক ঘুমন্ত নগরী ,আবার স্বপ্ন দেখুক মানুষ
সমস্ত রুগ্নতা ঝেরে ফেলে ,বাংলাদেশ হয়ে উঠুক
সুলতানের ছবির মত স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ ।
এসো বন্ধু হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করি
নব প্রজন্মের জন্যে রেখে যাব এক স্বর্গ ভূমী
-যার নাম-বাংলাদেশ ।
|