কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই?
-মঈনুল ইসলাম মিল্টন-
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই ?
আমার ফতুয়া তুলে দেখ, বুকের মাঝ খানটায় হাজারো নাম না যানা পাখির
পালক লেপ্টে আছে ।
ভোরের শিশির ভেজা শেফালীর পাপড়িতে আমার দু চোখ ধোয়া ।
মানুষকে আঘাত করতে নয়,কেবল ভালবাসতে শিখেছি আমি ।
এমনকি ,যে মানুষটি আমার অকল্যান কামনা করে,
তাকে,তাকেও নিভৃতে ভালোবেসে যাই ।
ভালোবাসাই যেন আমার একমাত্র কর্ম ।
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই?
একটি বাদামি পাখির সাথে আমার বন্ধুত্ব
পাখি প্রেমিক কি নিষ্ঠুর হতে পারে কখনো?
অন্তরে গাঢ় মমতার মতো টলটলে দিঘি পুষে রেখেছি তোমাদের জন্য,
আর সেখান থেকে অবিরাম ভালোবাসা উপচে পড়ছে ।
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই?
প্রতিদিন ভোরে জানালা খুলে সাকুরা গাছটিকে বলি,বন্ধু কেমন আছ?
দলবেঁধে চলা কর্ম ব্যস্ত পিঁপড়েদের উপর
আমার দৃষ্টি নিবিষ্ট হয় প্রতিনিয়ত ,ওরা ওতো আমার অতি আপন জন ।
চঞ্চল প্রজাপতির উড়াউড়ি,তাদের রঙিন পাখায়
এখনো আমার শৈশব আটকে আছে
কোন মৃত কাক পরে থাকতে দেখে
হৃদয় জুড়ে বিষাদের ছায়া নেমে আসে ।
এখনো কোন নদীর সামনে দাঁড়িয়ে আমি
স্পষ্ট বুড়িগঙ্গার কল কল শব্দ শুনতে পাই ।
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই ?
প্রতিদিন ভোরে ঘুঘুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আমার
পায়রারা নির্ভয়ে মুষ্টি থেকে খুঁটে খুঁটে খায় শস্য দানা
ফড়িঙের উড়াউড়িতে ,এই বয়সেও
আমার মন উড়ে চলে যায় কোন অচিন পুরে ।
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই ?
রাতে আকাশ না দেখলে আমার ঘুম আসে না
সবগুলো তাঁরা আমার কত পরিচিত
ওদের সকলের আলাদা আলাদা নাম রেখেছি আমি
দূরের চাঁদকে দেখে মার কথা খুব মনে পরে ।
চাঁদের বুড়িকি সত্যিই চড়কা কাটছে?
দেখার চেষ্টা করি আযো সেই ছেলেবেলার মতো
আমার ছোট ঘরে জোছনা খেলা করে
আমার বিছানা, চাদর,চোখের উপরে
সারা রাত ,জোছনা ,চাঁদের লুটুপুটি খেলা ।
সকালের সোনালী অরুন আভা
আমার চোখে চুমু খেয়ে বলে ,সুপ্রভাত ।
আমার নিঃশ্বাস হতে হাছনা হেনার ঘ্রান ঝড়ে পড়ে
কচুরি ফুলের সৌন্দর্য্যে ,বর্ণীল আনন্দে মন
এখনো ভরে যায় আমার ।
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই ?
আমার হাতের মুঠোয় চন্দ্র মল্লিকা ,গলায় নীলপদ্ম মালা
আর অন্তর জুড়ে স্বদেশ প্রেম প্রতিনিয়ত টগবগ করে ফুটে
কি করে বল আমি নিষ্ঠুর হই?
আমাকে, যে যতই আঘাত করুক,আমি আর যাই হইনা কেন
নিষ্ঠুর হতে পারবো না,পারবোনা ফিরিয়ে দিতে ,আঘাতের প্রতিঘাত।
আমি কোলাহলহীন একা,নিভৃতে বসে কেবল করে যাব
শব্দ, অক্ষরের চাষ ,হাজারো পংক্তিমালায়
নিষ্ঠুরের বুকেও ফোটাবো আমি
একটি লাল পলাশ ।
|