|
যেন পিতার
সান্নিধ্যে
কাজী ইনসানুল হক, টোকিও থেকে
চলে গেলেন সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক।এই
মূহর্তে কূড়িগ্রাম থেকে এডভোকেট লিংকন জানালো কূড়িগ্রামের জেলা
প্রশাসক,সাবেক সাংসদ ও প্রশাসক,কূড়িগ্রাম সরকারী কলেজের প্রিন্সিপাল সহ
কূড়িগ্রামের সবাইকে নিয়ে তারা নির্ধারিত কবরের যায়গায় উপস্হিত
আছেন।চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার কদিন আগে তিনি সস্ত্রিক কূড়িগ্রামে যেয়ে
মৃত্যুর পর তার দেহ কূড়িগ্রামের মাটিতে স্সমাধীর ইচ্ছা প্রকাশ
করেন।কূড়িগ্রাম সরকারী কলেজের গেটের পাশের নিদৃস্ট জায়গার জন্য সরকারী
অনুমোদন ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে।জানা গেল সকল প্রস্তূতি সম্পন্য
হয়েছে।ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে তার মরদেহ এলেই শেষ জানাজা শেষে তার ইচ্ছে
অনুযায়ী স্হানেই তাকে কবর দেয়া হবে। সেবার তিনি কুড়িগ্রামে তার
স্মৃতিবিজরিত প্রতিটি স্হানে যান,পরিচিত জনদের সাথে সাক্ষাৎ করেন,নিজের
পিতা মাতা ও মরহূম কাজী ইমদাদুল হকের কবর জেয়ারত করেন। সরকারী পি পি
এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন কূড়িগ্রামে তার এই শেষ যাত্রার সমন্ময় করেন।
সৈয়দ হক ও আমার জন্মশহর কূড়িগ্রাম।
আমাদের পরিবারের সাথে তাদের সম্পক্য বহূদিনের।মনে পড়ে একেবারে ছোটবেলায়
মাঝেমধ্যে আমার মা যেতেন সৈয়দ হকের বাসায়,সেখানে থাকতেন তার মা।রিকশার
সামনে শাড়ী টাংগিয়ে মার পাশে বসে যেতাম,তিনিও আসতেন।দূই বিধবা সুখ দু:খের
আলাপ করতেন।কূড়িগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক করে যখন ঢাকায় পড়াশূনা করতে আসলাম
তখন ঢাকায় সৈয়দ হক ভাইদের পুরোনো ঢাকার ঠিকানাটা সযত্নে ধরিয়ে দিয়েছিলেন
আমার মা। একাত্তরে বিবিসি বাংলা বিভাগে তার ভরাট কন্ঠ শূনেছি।পরবর্তিতে
বিচিত্রায় 'হৃদকলমের টানে,সংবাদে 'মার্জিনে মন্তব্য' কিংবা বিটিভি তে
সাহিত্য অনুস্ঠানে তার দূর্দান্ত উপস্হাপনা ।দূর থেকে দেখে ভাবতে ভালো
লাগতো ,ঐ যে আমাদের সৈয়দ শামসুল হক। দেশে থাকতে দূরত্ন ছিল,দূরত্ব কমলো
জাপানে।পর পর কবার তার সাথে দেখা হলো বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক
ফোরাম,জাপান আয়োজিত সাহিত্য সমাবেশে,গল্প -আড্ডায়,দূতাবাসের অনুস্ঠানে।দূটো
সমাবেশে তাকে নিয়ে যাওয়ার ও হোটেলে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পড়েছিল আমার
উপর।একান্ত সান্নিধ্যে তাকে চিনলাম নতূন পরিচয়ে,জন্মশহর কূড়িগ্রামকে নিয়ে
তার ভালবাসা,দেশকে নিয়ে আর বাংলাভাষা নিয়ে তার অহংকার নিয়ে।
জাপানে সাকূরার য় ঢাকা তামাগাওয়া পার্কে
তার সান্নিদ্ধে প্রথম আলোর বন্ধূসভার অনুস্ঠানে তিনি বেশ আসুস্হ
ছিলেন,কাশছিলেন,মনে হয় মরনব্যাধী ইতিমধ্যেই তাকে আপন করে নিয়েছে।আমাদের
জুয়েল তাকে নুরলদিনের সারাজীবন আবৃতি করে শোনালো,মিল্টন,শাওন কবিতা
পড়লো,এন এইচ কের ওয়াতানাবে,কাজল রকি,আমি,প্রিনস আনিস সহ অনেকে বক্তব্য
রাখলাম।ছোট্ট আনুসুয়াকে জড়িয়ে ধরে কবি আবৃতি করলেন...তুমি আমার কতটা ও
কি...বন্ধূবর আরিফের অনুরোধে তার ভরাট গলায় শুরু করলেন ..পরানের গহীনের
ভেতরে...সবশেষে সেই অহংকারী কন্ঠে শুরূ করলেন ..উঠায়া নিলে সবকি উঠানো
যায়...দাগ একটা থাইকা যায়। পরম মমতায় আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,আমার ঘাড়ে
মাথাটা রেখে কিছুক্ষনের জন্য চোখ বূঝলেন,এই পরম মূহত্যটি ক্যামেরাবন্দী
করলো প্রবাসী কবি মিল্টন। কূড়িগ্রামের আমি,ঘাড়ে সব্যসাচি লেখ্ক সৈয়দ
হকের ক্লান্তির নি:শ্বাস।মনে হচ্ছিল আমি যেন বহূদিন পরে শিশূকালে হারিয়ে
যাওয়া বাবার সান্নিধ্যে....
সৈয়দ শামসুল হক জাপানে এক সভায় জাপান
প্রবাসী কাজী ইনসানূল হককে জড়িয়ে ধরে স্মৃতিচারন করে বলেছিলেন ,কাজী
ইনসানূল হকের পিতা কূড়িগ্রামের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,দীর্ঘ ৩৫ বছরের
অবিভক্ত বাংলা ও সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের জন প্রতিনিধি, " টাইগার অব
বেংগল"খ্যাত মরহূম কাজী ইমদাদুল হক ই তার ডাক্তার বাবাকে কোলকাতার নিশ্চিত
আয়েশী জীবন ছেড়ে কূড়িগ্রামের আর্ত মানবতার সেবায় এনেছিলেন, সে কারনেই তিনি
এখন বাংলাদেশের পরিচিতি বহন করতে পারছেন।তিনি গর্বিত,তিনি বাংলাদেশেরএকজন
।কূড়িগ্রাম তার জন্ম শহর,এই শহরের মাটিতেই যেন তার শেষ ঠিকানা হয়।
kaziensan@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|