|
অ্যাপেনডিসাইটিসঃ প্রয়োজন শৈল্যচিকিৎসা
ডা. স্বপন কুমার মন্ডল
সহকারী অধ্যাপক
শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ
অ্যাপেনডিকস কী, অ্যাপেনডিসাইটিস কী?
অ্যাপেনডিকস হল খাদ্যনালির বৃহদান্ত্রের অংশ, অঙ্গটি পেটের নাভির ডান দিকে
অবস্থিত। এটি দেখতে অনেকটা কৃমির মতো। রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা আছে বলে
ধারণা করা হয়। তবে এটি না থাকলেও শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। আর
অ্যাপেনডিসাইটিস মানে অ্যাপেনডিকস নামক ক্ষুদ্র অঙ্গটির প্রদাহ। প্রদাহিত
অ্যাপেনডিকস কখনও-কখনও ফেটে গিয়ে পেরিটোনাইটিস হয়ে যায়।
কারণ
শক্ত মল বা মলের নুড়ি, হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ যেমনÑ টমেটো, পেঁয়াজ, আলুর
খোসা দ্বারা অ্যাপেনডিকসের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়। ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার
দ্বারা ইনফেকশন হয়ে অ্যাপেনডিসাইটিস হতে পারে।
কীভাবে বুঝব?
প্রথম লক্ষণ হল ব্যথা। ব্যথা সাধারণত নাভির চারপাশে শুরু হয়, পরে ধীরে-ধীরে
ডানে সরে গিয়ে তলপেটের ডানপাশে স্থায়ী হয়। এ স্থানে চাপ প্রয়োগ করলে ব্যথা
বেশি অনুভূত হয়। চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে একসময় হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে ব্যথা আরও
বেশি অনুভূত হয়। কাশি দিলেও ওই স্থানে ব্যথা লাগে। বমি ভাব থাকে, কখনও বমি
হতে পারে। নাড়ির গতি দ্রুত হয়, সঙ্গে থাকতে পারে জ্বর। ক্ষুধামন্দা,
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে। পেটের পেশিশক্ত হয়ে যায়।
কী পরীক্ষা করব?
করলে নাভির ডান দিকে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করবে বা ব্যথার জন্য ধরাই যাবে
না। রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণগুলো থেকেই ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ নিরূপণ করা
হয়। অ্যাপেনডিসাইটিস নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করতে কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার
প্রয়োজন হয়। এ প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন,
তলপেটের ডান পাশে ব্যথা অ্যাপেনডিসাইটিস ছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমনÑ
এন্টরাইটিস, রেনাল কোলিক, প্যানক্রিয়েটাইটিস, আলসার পারফোরেশন, টেসটিকুলার
টিউমার, মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ, একটোপিক প্রেগন্যান্সি,
এন্ডোমেট্রিওসিস, ওভারিয়ানসিস্ট ফেটে যেতে পারে। এ রোগগুলো থেকে
অ্যাপেনডিসাইটিসকে আলাদা করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। রক্তের
সিবিসি, মূত্রের রুটিন পরীক্ষা, এক্সরে কেইউবি রিজিয়ন ও আলট্রাসনোগ্রাম
পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা
দ্রুত শৈল্যচিকিৎসা। শৈল্যচিকিৎসায় জটিলতা থাকলে মেট্রোনিডাজল ও
সিপ্রোফ্লুক্সাসিন বা সেফুরক্সিমজাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন। ব্যথার ৩
দিনের মধ্যেই অপারেশন মঙ্গল। অন্যথায় সুস্থ হওয়ার দেড় মাস পর অপারেশন।
অপারেশন না করলে কী ক্ষতি হতে পারে?
চাকা (লাম্পা) হয়ে যেতে পারে। যা কি না ভালো হতে ২-৩ সপ্তাহ লেগে যায় এবং
খরচও অপারেশনের চেয়ে বেশি হয়। ফোঁড়া বা এবসেস হয়ে যেতে পারে। গ্যাংগ্রিন,
ফুটো বা বার্স্ট হয়ে যেতে পারে এবং জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যত
দ্রুত সম্ভব অপারেশন করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
কিছু তত্ত্ব
সাধারণত ৫-৪০ বছরের মধ্যে অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার
অধিক। গড়ে ২৮ বছরে এর হার সর্বোচ্চ। নারী অপেক্ষা পুরুষ এর অধিক
ভুক্তভোগী। নিম্ন-আয়ের মানুষের মধ্যে এর প্রবণতা লক্ষণীয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শহরে বসবাস করেন, তারা গ্রামের মানুষের তুলনায়
শাকসবজি কম খান। ফলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন তুলনামূলক বেশি হয়।
যাদের কনস্টিপেশন বেশি হয় তাদের অ্যাপেনডিসাইটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণে
বেড়ে যায়। অ্যাপেনডিসাইটিস থেকে বাঁচতে হলে আপনার শিশুকে বেশি-বেশি শাকসবজি
খেতে দিন, নিজেও খান।
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|