[প্রথমপাতা]
|
গুপ্তঘাতক অ্যানেন্সেফালিঃ গর্ভশিশুর অবধারিত মৃত্যু রোগ
-ডাঃ স্বপন কুমার মন্ডল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্ ও গাইনী বিভাগের
চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, ফলিক এসিড এর অভাবে এ রোগ
বেশি হয়। তাই বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করার তিন মাস আগে থেকে এবং
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস বেশি করে ফলিক এসিড সেবন করতে হবে। তিনি আরো
বলেন, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এ রোগের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নাই।
বারডেম কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ খাজা নাজিম উদ্দিন
বলেন, গর্ভধারন করার তিন মাস আগে এবং গর্ভকালীন সময়ে অভূক্ত অবস্থায় রক্তে
সুগার এর পরিমান ৫ মিলিমোল/লিটার, খাবারের দুই ঘন্টা পর ৭ মিলিমোল/লিটার
এবং হিমোগ্লোবিন এ১সি ৭ মিলিমোল/লিটার এর নীচে থাকতে হবে। নইলে নবজাতক এর
দেহ অঙ্গ, দেহ গঠন বৈশিষ্ট্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের হরমোন বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.
রুহুল আমিন বলেন, ডায়বেটিস রোগীদের দেহ অঙ্গ, দেহ গঠন বৈশিষ্ট্যে
অস্বাভাবিকতার চান্স সাধারন রোগীদের চেয়ে ৫ গুন বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার জরীপে দেখা গেছে, ডায়বেটিস মায়ের নবজাতকের প্রতি এক হাজারে তিন
জনের দেহ অঙ্গ, দেহ গঠন বৈশিষ্ট্যে অস্বাভাবিকতার ছাপ থাকে।
অ্যানেন্সেফালি কি?
গর্ভাবস্তায় শিশুর মারাত্মক রোগ। মাথার খুলি, মস্তক, মেরুরজ্জুবিহীন
অসম্পূর্ণ নবজাতকের জন্মের পরই অবধারিত মৃত্যু হবে। এ রোগকে বংশগত বলে মনে
করা হয়। যাদের বংশে এক বা একাধিক এ রকম বাচ্চা জন্ম হয়েছে তাদের পরবর্তী
বংশে এ রকম বা”চ্চা আরো হতে পারে। একই পরিবারে আগের বাচ্চা যদি এ রকম হয়,
তাহলে ৩-৪% ক্ষেত্রে পরবর্তী বাচ্চাও আবার সে রকম হতে পারে। পৃথিবীতে গড়ে
দশ হাজারের মধ্যে একটি শিশু অ্যানেন্সেফালী রোগে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে
দিন দিন এ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কখন/কিভাবে এ রোগ হয়?
গর্ভাবস্থায় প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহে নারীর জরায়ুতে দেহ জন্মের তিনটি লেয়ার
বা স্তর তৈরী হয়, এক্টোডার্ম বা উপরের স্তর, মেসোডার্ম বা মাঝের স্তর এবং
এন্ডোডার্ম বা ভিতরের স্তর। এই তিন স্তর এর মধ্যে এক্টোডার্ম থেকে তৈরী হয়
নিউরোএক্টোডার্ম --এখান থেকে তৈরী হয় নিউরাল টিউব--যা থেকে গর্ভাবস্থার
বার-তের সপ্তাহে ব্রেন (মস্তক), স্পাইনাল কর্ড (মেরুরজ্জু) আর মেসোডার্ম
থেকে স্কাল (মাথার খুলি) তৈরী হওয়া শুরু হয়। কিন্তু এক্টোডার্ম ও মেসোডার্ম
যদি ডিফেক্ট হয় বা কোন কারনে তৈরী না হয় বা সামান্য তৈরী হয়, তাহলে ব্রেন,
স্পাইনাল কর্ড, স্কাল তৈরী হবে না বা সামান্য তৈরী হবে। ভাবুন এবার, কেমন
হবে শিশুটা? আকৃতিটা না হয় বাদই দিলাম, ফ্রনটাল লোব, সেরিব্রাম--যা
মস্তিষ্কের অংশ, যদি তৈরী না হয় বা সামান্য অংশ তৈরী হয়, তাহলে নবজাতক
জন্মের পরই কার্ডিওরেসপিরেটরী এ্যারেস্ট বা হৃপিন্ড-শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা
যাবে।
লক্ষণ কি?
এ রকম রোগের ক্ষেত্রে জরায়ুতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। মাথার খুলি, মস্তক,
মেরুরজ্জুবিহীন অম্পূর্ণ বাচ্চা সাধারনত মিসকেরিস বা এ্যাবরসান হয়ে মাতৃ
গর্ভ থেকে বের যায়। নবজাতক জন্ম হবার পর বোবা হয়, অজ্ঞান থাকে, বড় বড় দুটি
চোখ থাকলেও চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পায় না, ব্যাথায় কোন সাড়া দেয় না এবং
জন্মের কয়েক ঘন্টা থেকে এক দিনের মধ্যে কার্ডিও-রেসপিরেটরী এ্যারেস্ট বা
হৃপিন্ড-শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
কারণ কি?
এ রোগের প্রকৃত কারণ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা যায়নি। তবে যে সব মহিলারা
ইপিলেপসি বা মৃগি রোগের ঔষধ সেবন করেন এবং যে সব মহিলারা তাদের ডায়বেটিস
নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিনের উপর নির্ভর করেন তাদের বাচ্চার এ রোগ হতে
পারে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনী বিভাগের চেয়ারম্যান
অধ্যাপিকা সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, ফলিক এসিড এর অভাবে এ রোগ বেশি হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের হরমোন বিদ্যা বিভাগের
বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রুহুল আমিন বলেন, ডায়বেটিস রোগীদের নবজাতকের দেহ অঙ্গ
বা দেহ গঠন বৈশিষ্ট্যে অস্বাভাবিকতার চান্স সাধারন রোগীদের চেয়ে ৫ গুন বেশি
থাকে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরীপে দেখা গেছে, ডায়বেটিস মায়ের
নবজাতকের প্রতি এক হাজারে তিন জনের দেহ অঙ্গ, দেহ গঠন বৈশিষ্ট্যে
অস্বাভাবিকতার ছাপ থাকে।
কি পরীক্ষা করব?
গর্ভাবস্থায় বার-তের সপ্তাহেই আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে বাচ্চার ব্রেন
(মস্তক), স্পাইনাল কর্ড (মেরুরজ্জু), স্কাল (মাথার খুলি) এর অনুপস্থিতি
দেখে অ্যানেন্সেফালি বা অস্বাভাবিকতা বুঝা যায়। এছাড়াও রক্তের
আলফা-ফেটোপ্রোটিন এর পরিমাণ পরীক্ষা করেও অস্বাভাবিকতার বুঝা যায়।
কিভাবে প্রতিরোধ করব?
অধ্যাপিকা সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, নার্ভাস সিস্টেম ( ব্রেন, মেরুরজ্জু
ইত্যাদি) তৈরীতে ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাচ্চা নেওয়ার
পরিকল্পনা করার তিন মাস আগে থেকে এবং গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস বেশি করে
ফলিক এসিড সেবন করতে হবে। এ রোগে নবজাতকের মৃত্যু হবেই। তাই পরিকল্পনা ও
প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে। বারডেম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক
ডাঃ খাজা নাজিম উদ্দিন বলেন, গর্ভধারন করার তিন মাস আগে এবং গর্ভকালীন সময়ে
অভূক্ত অবস্থায় রক্তে সুগার এর পরিমান ৫ মিলিমোল/লিটার, খাবারের দুই ঘন্টা
পর ৭ মিলিমোল/লিটার এবং হিমোগ্লোবিন এ১সি ৭ মিলিমোল/লিটার এর নীচে থাকতে
হবে।
ARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|