প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

শীতরাজের হেমন্তরাজ্য দখলের আগাম হুংকার!

 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 


হেমন্তকাল। অগ্রহায়ণের শেষার্ধ। এ সময়ে সাধারনত ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌'এ ভরা বাদর, মাহ ভাদর, শূণ্য মন্দির মোর'--আষাঢ়-শ্রাবণ অথবা ভাদ্র মাসের মত বৃষ্টি হবার কথা নয়, আকাশে মেঘের গুরুম গুরুম হুংকার করার কথা নয়। এ সময়ে কারো মন মন্দির রিক্ত থাকার কথা নয়, কারণ ফসলে ফসলে ছড়িয়ে থাকে মাঠ-ঘাট-পথ। সব পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত থাকে আকাশ-বাতাস-প্রান্তর। কারো কারো উঠোনে হয়তো প্রথম হেমন্তের ফসল উঠেও গেছে। অথচ গত দুই-তিন দিন ধরে ভাটি বাংলার কোথাও কোথাও রয়ে-সয়ে, যেন, মানুষের মনে শীতের আগমন স্মরণ করিয়ে দিতে প্রকৃতির ভালোবাসার বা নিরবতার মাঝে শীতল ছোঁয়ায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে মুসলধারে।

রাজ-রাজাদের আমলে, রাজা যখন রাজদরবারে প্রবেশ করতেন, তার আগমনের আগে গেটের প্রহরী চুঙ্গা ফুঁকিয়ে ঘোষণা দিতেন, মোগলে আযম, হিন্দুস্থানের সম্রাট, দোজাহানের বাদশাহ...এখন রাজদরবারে প্রবেশ করিবেন, সবাই হুসিয়ার--। এ সময় রাজদরবারের ভিতরে ও বাহিরে স্ব স্ব পদ মর্যাদা, অবস্থান অনুযায়ী সবাই প্রস্ততি নিতে থাকে। ঠিক তেমনি করে হেমন্তের প্রথম হলুদ রংয়ের ফসল, আঙিনার মেটে রংয়ের সাথে মিশে শীতের বাওয়াইয়া সুরে যেন, আগমনী গান গেয়ে চলেছে। যেন, আকাশ-বাতাস, নদ-নদী-খাল-বিল, দিন-রাতের প্রানী প্রকৃতিকে জানিয়ে দিচ্ছে, শীতরাজ বা শীত দেবীর আগমণ বার্তা অথবা রাজনীতিগতভাবে বলতে পারি, অসময়ে শীতরাজের হেমন্তরাজ্য দখলের আগাম হুসিয়ার বার্তা !

প্রকৃতি এখন আর নিয়ম মেনে চলে না, চলতে চায় না। আমরা গাছপালা উজার করে, ফসলি জমি ধ্বংশ করে তথা প্রকৃতি উজার করে ঘর-বাড়ি, শিল্প কারখানা গড়ে চলেছি, প্রকৃতির তাপমাত্রা দিনকে দিন বাড়িয়ে চলেছি, ফলে প্রকৃতি তার নিয়ম মানতে পারছে না। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির ফলে আকাশে, গাছে গাছে পাখিদের আনা-গোনা দেখা যায় না । প্রকৃতির পাখিগুলো গাছের ডালে ডালে নিজেদের বাসায় চুপচাপ বসে আছে। বাড়ির পাশের বড়ই গাছের পরজীবী স্বর্ণলতা বৃষ্টির স্পর্শে লাল আভায় চকচক করছে। অসময়ে জলে ভরা ডোবায় ব্যাঙ ডেকে চলেছে অবিরাম। ভিজা বনের শ্যাওলা পথে সাপ ব্যাঙ মুখে নিয়ে চলেছে কোন গুহা পথে। রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা বৃষ্টির জলে ভিজে চুপচাপ হয়ে আছে; মাঝে মাঝে দু'একটা পোকা রয়ে রয়ে ডাকছে। শিয়ালগুলো পাকা রাস্তার অন্ধকারে গোঁড়াডুবা জলের ডোলকলমীর ঝোপে বিপদাপন্ন সুরে ডেকে চলেছে। সেই সাথে রাস্তার কুকুরগুলিও শিয়ালের সাথে অবিরাম ডেকে চলেছে। গায়ের গৃহীনিরা এ পরিবেশকে অসনিসংকেত মনে করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করছে। অনেক ক্ষেতের আলুর পঁচে গেছে। কৃষক মাথায় হাত রেখে প্রকৃতির পানে চেয়ে আছে, মিনতি করছে আর যেন বৃষ্টি না হয়।

প্রকৃতির এ বিরূপ কর্মকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ দেবতারাও সামাল দিতে পারছে না। হাজার বছর ধরে হেমন্তকালে হেমন্তলক্ষ্ণী আর কার্তিক দেবতার কৃপায় অগ্রহায়ণে ফসলে ফসলে মানুষের ভাগ্যলক্ষ্ণী দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যায়। ফসলের ডগার শিশির বিন্দু দিনের প্রথম আলোয় চিকচিক করে উঠে; যেন দিনকে জানিয়ে দেয় সুজলা-সুফলা-শষ্য শ্যামলার আগাম বার্তা। সনাতন জাতি, উপজাতির মাঝে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌'ক্ষেত্তের বত্ত' বা খেত ফসলের দেব-দেবতার পূজা শুরু হয়। হলুদ রংয়ের খড়-নাড়ার বিছানায় মাঠে মাঠে শুরু হয় ওয়াজ মাহফিল। দেশ বা দশের কোন কল্যাণ না হলেও হাজার হাজার বছর ধরে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, মাজার মানত, পূজা-পার্বন, বুদ্ধ বন্দনা, খ্রীস্ট বন্দনা চলছে, চলবে।

 


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

..........[লেখক আর্কাইভ]