প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

তবুও হৃদয় ছুঁয়ে যাও

 

 

সোহেল মাহরুফ
 


: হাই জেনি!
: হাই! কেমন আছো?
: ভালো। তোমার কি খবর?
: এইতো। ভালোই। তুমিতো আমাকে একদম ভুলেই গেছো।
: তাই নাকি! আচ্ছা বলোতো আমাদের ভেতর মনে রাখার মতো কি এমন ছিল?
: কিছুই কি ছিল না?
: হ্যা ছিল-হ্যালো-হাই- কেমন আছো-ভালো- এইতো।
: আর কিছুই না!
: জেনি, একটা সময় পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে যথেষ্ট পাগলামি করেছি। আর কেন!
: মানে?
: জানো, একটা সময় ছিল যখন সকালে বিছানা ছাড়তাম তোমাকে ভাবতে ভাবতে আবার রাতে বিছানায় যেতাম তোমাকে ভাবতে ভাবতে। আর নির্ঘুম রাতের শেষে সকালে যখন ঘুমে ভারী চোখ দুটো নিয়ে ক্লাসে ঢুকতাম- ভাবতাম, ক্লাস শেষেই তুমি বলবে- রাশেদ কাল সারারাত তোমাকে ভেবে ঘুমুতে পারিনি।
: তুমি আসলেই একটা পাগল!
: হয়তো তাই...
এইটুকু বলেই হাসান কেমন উদাস হয়ে যায়।
-হেভী নামিয়েছিস্ তো! কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট কনসেপ্ট...স্টেজে দারুণ আসবে।
মিলার এই কথায় হাসান সম্বিত ফিরে পায়-
-স্টেজে করার জন্য এসব লিখিনি।
-তাহলে?
-এ যে আমার বুকের মঞ্চ নাটক। বছরের বারো মাসই বুকের ভেতর এর মঞ্চায়ন হয়।
-মানে?
হাসান আবার নিজের ভেতর ফিরে আসে-
-না, মানে কিচ্ছু না। মানে, কালরাতে হঠাৎ মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো। বিছানায় গেলাম কিছুতেই ঘুম এলো না। তারপর কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। ভাবলাম অনেকদিন ধরেই নতুন কিছু নামানো হচ্ছে না। যদি কিছু করা যায়। তারপর যা হলো তা তো এই। সকালে উঠে ভাবলাম জিনিসটা কাকে দেখানো যায়। হঠাৎ তোর কথা মনে পড়লো তাই তোকেই ফোন করলাম।
-ওহ্ আচ্ছা! তা সত্যি করে বলতো জেনি নামে তোর জীবনে কেউ কি ছিল?
হাসান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-
-হয়তো ছিল-হয়তো না।
একথা শুনে মিলা মৃদু হাসে-
-তুই আসলেই অদ্ভুত।
-এটা তো নতুন কিছু না। সারাটা জীবন ধরে সবাই আমাকে এ কথাই বলেছে।
-ভুল কিছু বোধ হয় বলেনি। তোকে তো এই ক’বছর ধরে দেখছি। সেই প্রথম যেদিন গ্র“পে ক্লাস করতে এলাম সেদিনই তো তোর সাথে পরিচয়। তারপর থেকে তো দেখছি শুধু নাটক নিয়েই তোর ব্যস্ততা। নতুন একটা নাটক নামানোর জন্যে তোর সে কি ছটফটানি- রিহার্সেলে সে কি সিরিয়াস। মাঝে মাঝে তোর এই একাগ্রতা দেখে তোকে রোবট রোবট মনে হতো। সেই তোর ভেতরও প্রেম ভালোবাসার মতো সিলি ব্যাপার কাজ করে! এও কি ভাবা যায়! তোর সিরিয়াসনেস দেখে মাঝে মাঝে ভাবতাম কি জানিস্? ভাবতাম, তুই বোধ হয় নাট্যকার হিসেবে শেক্সপিয়রকেও ছাড়িয়ে যেতে চাস্।
-খারাপ বলিসনি। আসলে হঠাৎ করে ওর বিয়ের খবর শুনে আমার ভেতরও এরকম একটা ব্যাপারই কাজ করেছিল। ভাবতাম আমাকে খুব বড় কিছু হতে হবে। ওকে দেখাতে হবে আমিও পারি। বাট্ আনফরচুনেটলি এখন মনে হচ্ছে সবই ভুল। বিশেষ করে যখন ভাবি খুব ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি। সেই জীবনে একজন নারীকে ভালো লাগল, ভালোবাসলাম-কিন্তু তাকে তা বলা হলো না। এর কোনো মানে হয়! এখন মাঝে মাঝে ভাবি-জীবনে হয়তো অনেক কিছুই হতে পারবো কিন্তু তাকে না পাওয়ার যে শূণ্যতা তা কখনই পূরণ হবে না।
মিলা যেন পুরোপুরি গল্পের ভেতর ঢুকে গেছে। সে ঘোর লাগা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-তোর ভালোবাসার কথা তাকে বলিস্ নি কেন?
হাসান বুদ্ধিদীপ্ত হাসি হাসার চেষ্টা করে। কিন্তু হাসিতো হয়ই না বরং মুখটা একটু বেঁকে গিয়ে চেহারাটা একটু বিষণœ রূপ ধারণ করে-
-আসলে আমি স্বার্থপরের মতো ভালোবাসতে চাইনি। আমি কখনই ওকে ভালোবেসে ওর আগে আমার সুখ চাইনি। আমি সবসময়ই চেয়েছি ও সুখী হোক। তখন আমার মনে হতো কি জানিস্? মনে হতো, ও সুখী হলেই আমি সুখী হবো। সে ও যেখানেই থাক, যার সাথেই থাক।
হঠাৎ হাসানের কণ্ঠ ধরে আসে- কেমন ছেলেমানুষের মতো হয়ে যায়।
-তা সে এখন কোথায় আছে?
-নিউইয়র্কে। ওর হাজবেন্ডের সাথে-বলতেই হাসানের বুক ভেঙ্গে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
মিলা হাসানকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে-
-হাসান, আসলে যে বোঝে না তাকে বোঝানো যায়। কিন্তু তুই তো সবই বুঝিস্- তোকে আর কি বলবো। ভালোবাসার সেই প্রাচীন প্রবাদটাতো জানিস্। সেই যে-
‘যাকে ভালোবাসো তাকে ছেড়ে দাও। যদি সে ফিরে আসে তবে সে তোমার। আর যদি ফিরে না আসে তবে সে কখনই তোমার ছিল না।’
-মিলা প্রবাদটা আমিও জানি। বাট্ সমস্যাটা কি জানিস্- ঐ যে লাইনটা আছে না ‘যদি সে ফিরে আসে তবে সে তোমার’ ঐটুকু পর্যন্তই বিশ্বাস করি। এরপর আর বিশ্বাস করি না। আমার ধারণা সে একদিন না একদিন আমার কাছে ফিরে আসবেই।
মিলা কিছু বলে না। সে হাসানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে সে নূতন এক হাসানকে দেখতে পায়। এ যেন সেই তরুণ নাট্যকার কিংবা নাট্যকর্মী হাসান নয়- যে কি না প্রতিবার জাতীয় নাট্যোৎসবে নতুন নতুন কাজ দিয়ে নাট্যবোদ্ধাদের চমকে দিতে ব্যস্ত। এ অন্য এক হাসান- শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মতো আরেকটি চরিত্র। তবে একে সৃষ্টির জন্যে এক শরৎবাবুই যথেষ্ট নন আরও কয়েকজন দরকার।
হাসান এখন আর তার ভেতরে নেই। সে যেন কোনো এক নাটকের স্ক্রিপ্টে ঢুকে গেছে। নাটকের ডায়লগ থ্রো করার মতো করেই সে ধরে আসা কণ্ঠে বলতে থাকে-
-আর- আর সে যদি ফিরে আসে, হোক রূপহীন, শ্রীহীন অবস্থায়-ইভেন এ্যাট এইটিজ, আই ওন্ট হেসিটেট টু একসেপ্ট হার। বিশ্বাস র্ক আমি ওর শরীর, ওর রূপকে কখনও বড় করে দেখিনি, আমি শুধু ওকে- ওর ভেতরের মানুষটাকে ভালোবেসেছি। সেদিনও যেমন ভালোবাসতাম-আজও তেমন ভালোবাসি...
মিলা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। হাসানের চোখের গভীর শূণ্যতা দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থাকে তার চোখের দিকে-খুঁজতে থাকে তার শূণ্যতার শেষ সীমা। কিন্তু হাসান নিজেও তার শূণ্যতার শেষ জানে না। তবুও সে এই শূণ্যতাকে বুকের ভেতর সযতেœ লালন করে। ঠিক যেন হেলাল হাফিজের কবিতার মতো-

“যেমন যতেœ রাখে তীর
জেনে-শুনে সব জল ভয়াল নদীর।”

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

  লেখকের আগের লেখাঃ