গুজব আমাদের সমাজে ছিল,আছে, হয়তো থাকবে।
আর অপপ্রচারের মতো মিথ্যাচার আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতিকে
দারুনভাবে কলুষিত করছে প্রতিনিয়ত। গুজবের মাধ্যমে সমাজ ব্যাবস্থায়
মানুষের মনে ভালোকে খারাপ আর খারাপকে মঙ্গলজনক করে তোলার যে ঘৃণ্য
বিষয় তা কুসংস্কারকে উৎসাহীত করে। আর এ কাজটি সবচেয়ে বেশী ক্ষতি
করে যখন ধর্মীয় কোন ব্যাপারে করা হয়। সমাজের অন্য জায়গায় গুজব
বেশীদিন না টিকলেও ধর্মীয় কোন গুজব দ্বীর্ঘদিন আমাদের সমাজে
প্রতিহিংসাকে উসকে দেয়।এমনকি গুজবের শক্তি এতোটাই যে মানুষ হিতাহিত
জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। আবার মানুষের মাঝে তৈরী করে বিভেদ। এ
থেকে শুরু হয় হানাহানি,কখনোবা প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে।
গুজবে কান দিবেন না’কথাটি আমাদের সমাজে
বেশ পরিচিত। কে শোনে কার কথা! মূহুর্তের মধ্যেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে এ
বাড়ী থেকে ও বাড়ী,পাড়া-মহল্লায়,গ্রামে-গঞ্জে-শহরে। আর এখন তথ্য
প্রযুক্তির যোগ। ইন্টারনেট সেবার অপব্যাহার অনেক সময় এসব মিথ্যা
গুজব জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়ায়। বলা হয় অনেক সময়
মিথ্যে গুজব শান্তির সমাজে গজবের মতো ক্ষতি করে।
আর অপপ্রচার একজন মানুষকে আদর্শবান থেকে
মন্দ লোকে পরিগণিত করতে পারে। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে আমাদের দেশে
অনেক সময় সম্মানি ব্যাক্তিকে অসম্মানের মতো দৃষ্টতা দেখানো হয় যা
কোনক্রমেই কাম্য নয়।আমাদের সমাজে
পরিবারে,রাজনীতিতে,শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অপপ্রচার চলতেই থাকে।
স্বার্থে আঘাত লাগলেই বিকৃত মানুষিকতার লোকেরা এ ঘৃণ্য কাজ করে
বিবেক বিসর্জন দিয়ে। অপপ্রচারকারীরা পরিবারের শত্রু,মানুষের
শত্রু,সমাজের শত্রু,রাষ্ট্রের শত্রু সর্বোপরি এরা মানবতার শত্রু।
আমাদের কোন ব্যাক্তি বা বিষয়ের ব্যাপারে অপপ্রচার চালানোর আগে
সত্যতা যাচাই করা দরকার সবার আগে।দুরদর্শিতার অভাবে অনেক সময় এই
অপপ্রচার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলে যা অনাকাংক্ষিত বিব্রতবোধ।সত্য ও
সুন্দরের ভাবমূর্তি বিনষ্টে প্রথমে গুজব,পরে এটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে
অপপ্রচার সমাজ ও ব্যাক্তি জীবনকে এতোটাই ঘোলাটে করে যে তা পুষিয়ে
নিতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়,অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়।
ইদানিং এসব মিথ্যাচার গুজব ও অপপ্রচারে
কিছু অনলাইন এবং নিউজ মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ
হচ্ছে। আবার কেউবা অতি-উৎসাহী হয়ে সামপ্রদায়িক-সম্প্রীতি বিনষ্টে
ইন্ধন যুগাচ্ছে । গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংবাদপত্রের ইতিবাচক ও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও মুক্ত স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছে তাই
প্রকাশ করে রাষ্ট্রে জাতীগত,ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করার
অধীকার নেই।
বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে প্রতিকূল পরিবেশে ঘুরে দাঁড়ানোর অসম্ভব
শক্তি। আমরা শান্তি প্রিয় জনগন অমুলক বিষয়,গুজব ও অপপ্রচারকে ঘৃনা
করি সাথে রুখে দেওয়ার প্রতিবাদী চেতনা ধারন করে সম্প্রীতির
সহাবস্থানে বসবাসের ঐক্যে বিশ্বাসী। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশে
কোন জাতীগত-ধর্মীয় প্রতিহিংসায় গুজবে বিশ্বাস করিনা,আর অপপ্রচারের
বিভ্রাšন্তও হবোনা। এসব থেকে বাঁচতে সঠিক তথ্য জানা এবং শিক্ষার
কোন বিকল্প নেই। সত্য সব সময়ই সত্য,মিথ্যের জয় কোনদিনই হবেনা। তাই
আসুন-গুজবে কান না দিয়ে,অপপ্রচারকে প্রশ্রয় না দিয়ে সঠিক তথ্য
জানার চেষ্ঠা করি। নিজে ভালো থাকি চারপাশের সবাইকে ভালো থাকতে
সহযোগীতা করি।
______________________________________
সফিউল্লাহ আনসারী
সাংবাদিক
|