প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ইবতেদায়ী শিক্ষক: অবহেলা আর বৈষম্যের জীবন!

-সফিউল্লাহ আনসারী-

 

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক(প্রাইমারী স্কুল সমমান) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইবতেদায়ী মাদরাসা বলা হয়। ইবতেদায়ীতেও দু‘ধরনের ব্যাবস্থায় পরিচালিত হয় মাদরাসাগুলো।একটিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী ও অন্যটি দাখিল মাদরাসার সাথে সংযুক্ত হিসেবে পরিচালিত হয়। সংযুক্ত মাদরাসার শিক্ষকগন কিছুটা সুবিধা ভোগ করলেও বেতন বৈষম্যে চরম অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগন।দুর্বিষহ কষ্টের মধ্য দিয়ে এসব শিক্ষকগন সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও,সরকারী প্রাইমারী স্কুলের মতো নিয়ম মেনে,শিক্ষার্থীদের সরকার কর্তৃক বিনামুল্যের বই বিতরণ করে,পাঠদান অব্যহত রেখে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে আসছেন। অথচ অতীব দুঃখের এবং পরিতাপের বিষয় এসব ইবতেদায়ী শিক্ষকগন তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার ঘোষিত সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরন হলেও এসব স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অজ্ঞাত কারনে আজো অবহেলিত এবং সরকারের পৃষ্টপোষকতা থেকে বঞ্চিত। ইবতেদায়ী মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা মন্ডলী সরকারের সকল দায়ীত্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা মন্ডলীর মতোই পালন করছেন অথচ তাদের মতো বা সম-পরিমান সুযোগ-সুবিধাও তারা পাচ্ছেন না যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
ইবতেদায়ী মাদরাসা সরকারী করনের দাবীতে বিভিন্ন সময় বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন। গত কিছুদিন ধরেও তারা স্বতন্ত্র ও সংযুক্তরা আলাদাভাবে আান্দোলন করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসব বৈষম্যের স্বীকার শিক্ষকগন দাবী আদায়ের জন্য অবস্থান করছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ এসব শিক্ষকদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।কেউ হতাসায় ভোগে দিশেহারা,আবার কেউ জীবিকার তাকিদে রিক্সা চালাতেও বাধ্য হচ্ছেন।“স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা গেছে বিগত ১৯৮৪ সালে সরকার সারা দেশে ১৮০০০ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে।এরমধ্যে বিগত ১৯৯৪ সালে ১৫১৯টি মাদ্রাসাকে এমপিও ভুক্ত করে সারা দেশে ৬০৭৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সরকারী ভাবে মাসিক ৫০০ টাকা করে অনুদান বা ভাতা প্রদানের ব্যাবস্থা করে। গত ২০১৩ ইং সালের জানুয়ারী মাস থেকে ১০০০টাকা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে মহার্ঘ্য ভাতা হিসাবে ২৫০ টাকা বাড়িয়ে সর্বমোট -১২৫০ টাকা প্রদান করা হয়।এই সামান্য বেতনের টাকা তুলতে শিক্ষকদের নানা প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়। অবহেলিত হওয়ার পরও থেমে নেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গুলোর পাঠ্যদান কার্যক্রম।দ্বীর্ঘদিন থেকে জাতীয় স্কেলে বেতন দাবি করে আসছেন ইবতেদায়ী শিক্ষকরা।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা।কেনো হচ্ছেনা,এমন প্রশ্ন অসহায় করে দিচ্ছে এসব শিক্ষকদের ইচ্ছা শক্তিকে।প্রায় ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জাতীয় স্কেলে বেতনের দাবি জানিয়েছে আসছেন ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর (আলাদাভাবে) বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সংগঠনের শিক্ষকগণ।
সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বিগত দিনে অনেক প্রতিশ্র“তি ও মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্ত থাকলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা হতাশ বলে জানান- আন্দোলনরত শিক্ষকরা।বেতন বৈষ্যমের শিকার হয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন স্বত্বেও শিক্ষকরা নিজ নিজ মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেনী হতে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যহত রেখে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এসব বৈষম্যের স্বীকার ভাগ্যহত শিক্ষকগন দিনের পর দিন,মাস থেকে বছর জ্ঞাণ বিলিয়ে যাচ্ছেন।শুধু শিক্ষকগন যে বৈষম্যের স্বীকার তা নয়,বৈষম্যের স্বীকার অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও।পঞ্চম শ্রেণী শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় স্কুলের শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হলেও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী শেষে শিক্ষার্থীদের কোনো বৃত্তি দেয়া হয় না।ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই খাদ্য কর্মসুচিও।দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
সময়ের সাথে-সাথে বদলায় প্রকৃতি,পরিবর্তন হয় রুপ বৈচিত্রে, সাথে বদলায় মানুষের জীবন যাত্রার মান,কিন্তু বদলায়না ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকা।হায়রে নিয়তি ! আধুনিক সভ্যতার উৎকর্ষতার এই জীবন যাত্রার উন্নতির যুগেও দুর্ভাগ্যের স্বীকার শ্রমদাসের জীবন শিক্ষিত মানুষগুলোর,যাদের ভোর হয় আতংক আর হতাসায় মোড়ানো সময় নিয়ে।নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যাদের তাদের আরেক নাম ইবতেদায়ী শিক্ষক।প্রাইমারী স্কুলের মত প্রথম শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো,একই নিয়মে পরীক্ষা গ্রহন,সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সকল কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষদের মতো সুযোগ প্রাপ্ত হচ্ছেন না স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষকগন।একদেশে দুই নিয়মের শিকার হওয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষক-কর্মচারীর মানবেতর জীবনযাপন করছেন যা কোন স্বাধীন ও সভ্য দেশে কাম্য নয়।এই বৈষম্য থেকে দ্রুত উত্তরণের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সমান মূল্যায়ন ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাথমিক শিক্ষা মাধ্যম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই নীতিমালায় বিন্যস্ত করে বৈষম্য দুর করা সময়ের দাবী।ইবতেদায়ী শিক্ষক-কর্মচারিরা অবহেলা আর বৈষম্যের জীবন থেকে মুক্তি পাবে এমনটাই কাম্য।

_______________________________________

সফিউল্লাহ আনসারী
সাংবাদিক


 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ