প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

সুতোর টানে-২

 


 

সুলতান সালাহ্উদ্দীন আহমেদ
 

 


জীবন জিজ্ঞাসা


আব্বা ভেড়ামাড়াতে ওয়াপদার পাবলিক রিলেশনস অফিসার ছিলেন। তার পুরো নাম বদরুদ্দিন আহমেদ। সেই সময় ওখানে একটা স্কুল করা হয়েছিল। ভেড়ামারা প্রাইমারি স্কুল। সেখানকার শিক মোক্তার মাস্টার আমাকে হাতেখড়ি দেন। তখন আমরা চট্টগ্রাম থেকে ওখানে এসে থাকতাম। ভেড়ামাড়াতে আমরা তিন বছর ছিলাম। স্কুলের কথা শুধু এটুকুই মনে আছে ওখানে মার্বেল, ডাংগুলি খেলতাম।

পরবর্তী সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিউ কলোনিতে এসে আমররা উঠি। বাসার নাম্বার ১৪/১০। আমার জীবনে এই বাসাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের স্মৃতি বহন করে। এই বাসায় ছোট্ট দুটি ঘরে মামা-খালাসহ আমরা থাকতাম। ওই এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই কোমর পর্যন্ত পানি উঠে যেতো। বই-খাতা মাথায় নিয়ে চলতে হতো। নিজে নিজে পড়াশোনা করতাম তখন। প্রাইভেট টিউটর রাখার কোনো প্রশ্নই ছিল না। সম্ভবও ছিল না।

আমি সেখানে লালমাটিয়া স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে ছিল কোএডুকেশন অর্থাৎ ছেলে মেয়ে একসঙ্গে পড়ানো হতো। লালমাটিয়া স্কুলে জাফর নামে আমার এক বন্ধু ছিল। এক পর্যায়ে আমরা ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি হবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন ল্যাবরেটরি স্কুল খুব নামকরা ছিল। আমরা ক্লাস সিক্সে পড়ি এসময়। ল্যাবরেটরি স্কুলে ঢোকার জন্য জন্য যে ভর্তি পরীক্ষা হতো সে পরীক্ষায় পাশ করে আমরা ঢুকতে পেরেছিলাম যেটা আমাদের জন্য বিরাট তৃপ্তির ব্যাপার ছিল। চাচার দুই ছেলে, আমি আর আমার ভাই আমরা মোট চার ভাই ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়তাম। স্কুলে খেলাধুলা করতাম। ক্রিকেট ভালো খেলতাম।

আব্বা তখন থাকতেন দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলে। মা থাকতেন ঢাকায় আমাদেরকে নিয়ে। আমরা যখন বড় হচ্ছি তখন বাসায় টেলিভিশন আসলো। আমাদের কলোনিতে কিছু বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। আমরা তখন তাদের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে টেলিভিশন দেখতাম। তারপর বাড়িতে এসে মার খেতাম। বাসা থেকে বলতো, কেন তোরা গেলি টেলিভিশন দেখতে?

আমরা অন্যের জানালায় উঁকি দিয়ে যখন টেলিভিশন দেখতাম তখন তারা জানালা বন্ধ করে দিত। তবে টেলিভিশনটা না থাকাতে একদিক থেকে খুবই ভালো হয়েছে। আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়নি।

বাড়ি থেকে কোনো সময় রাগ করে বেড়িয়ে গেলে আব্বা জানতেন কোথায় যাবো। কারণ আমার পালানোর একটাই জায়গা ছিল সেটা হলো লাইব্রেরি। তাই আব্বা আমাকে লাইব্রেরিতে খুঁজে পেতেন।

আমার মধ্যে পড়াশোনার একটা স্বভাব গড়ে উঠেছিল। স্বভাব বলছি এ কারণে যে তখন একটা ইন্টেলেকচুয়ালভাব এসে গিয়েছিল। ল্যাবরেটরি স্কুলে হায়দার আলী খান নামে এক ছাত্র ছিল সে এখন আমেরিকায় থাকে। আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। হায়দার মেট্রিক পাশ করার পর স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় চলে যায়। আরেক বন্ধু আনিস যার পুরো নাম আহমদ আনিসুর রহমান আমাদের মতোই নিউ কলোনিতে থাকতো।

আনিস আর আমি তখন একটা কাজ করতাম। যে কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলে তার সাইকোলজি বিশ্লেষণ করতাম। তারপর হতো কী অনেকটা হাত দেখে ভবিষ্যত বলার মতো কথাবার্তা বলে আনন্দ পেতাম। মোহাম্মদপুর বাজারে হাটের মধ্যে বসে চা খাওয়া ছিল আরেকটা আনন্দের বিষয়। আনিসের আবার হোমিওপ্যাথির ডাক্তারের কাছে যাওয়ার একটা রোগ ছিল। হোমিওপ্যাথির ডাক্তারের বাড়িতে তার মেয়ে হয়তো সুন্দরী ছিল সে জন্যই যেতো।

যখন লালমাটিয়া স্কুলে পড়ি তখন ওখানে সমস্ত জায়গাতে কোনো বিল্ডিং ছিল না। বাসার সামনে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে মুখ ধুয়ে আমরা স্কুলে যেতাম। লেখার জন্য কাগজ কলম বেশি ছিল না। যে কাগজের ওপর লিখবো তাতে প্রথমে পেন্সিল দিয়ে লিখতাম পরে তার ওপর কলম দিয়ে লিখতাম। এতে একই কাগজে দুইবার লেখা যেত। এগুলো করতাম কাগজ বাঁচানোর জন্য। কাগজগুলো আনতাম প্রেস থেকে। প্রেসের নাম মনে নেই তবে সেখানে যে কাগজ বাঁচত সেগুলো আমরা নিয়ে আসতাম।

বন্ধু বাবুলের কাছ থেকে আমি বই নিতাম। আর আমার বইগুলো লিটন নিত। আমাদের ছোট বাসায় এমনও দিন গিয়েছে পড়তে যে বসব, তার জায়গা পাওয়া যেতো না। তখন রাস্তায় যে বাতি আছে ওখানে এসে পড়তাম। আমাদের বাড়িতে কোনোদিন দরজা বন্ধ থাকতো না। ফকির আসত কিন্তু চুরি হবে এ কথা তখন আমরা চিন্তাই করতে পারতাম না। ক্ষুধা লাগলে নিজের বাড়িতে যেভাবে যাই অন্যের বাড়িতেও সেভাবে চলে যেতাম। আমি আনিসের বাসায় যেতাম। আনিস আমার বাসায় আসত। সব বাড়ির দরজা সবসময় খোলা থাকত। খাবার নিয়ে কোনো ক্ষুন্তাই করতে হতো না। একজন হয়তো আর একজনের বাসায় খেয়ে আসতো। মনে হতো সবাই মিলে এক বিরাট সংসার। সত্যি কথা বলতে কী আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের পরে কলোনি ছেড়ে মোহাম্মদপুরের নিজের বাসায় চলে আসি তখন আমার মন খুব খারাপ ছিল। কারণ আমি দেখলাম আমাদের পাশের বাড়ির সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

 

 

[লেখক পরিচিতি

আমেরিকার নোভা সাউথইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামিসহ বেশ কিছু ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ডা. সুলতান সালাহ্উদ্দীন আহমেদ মানব সেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসা পেশাকে বেছে নেন। দেশে এবং প্রবাসে তিনি তার পেশায় আন্তরিকতা এবং সততার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।

তিনি কলেজ ছাত্র অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দী শিবিরে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিযুদ্ধে তার উদ্ভাবিত হাতে তৈরি সাইক্লোস্টাইল মেশিনে মুক্তিযুদ্ধের অনেক জরুরি এবং গোপন তথ্য নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এই মেশিন পরবর্তী সময়ে তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। গবেষক ও আবিষ্কারক হিসেবেও দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। একজন মানুষের জীবন কতোটা বৈচিত্র্যময় হতে পারে তার একটি চমৎকার উদাহরণ হতে পারে এই বইটি। জীবনের দুঃসময়ে ভেঙে না পড়ে তা কাটিয়ে ওঠার প্রেরণা হিসাবে বইটি কাজ করবে। জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভাবার অনেক উপকরণ ছড়িয়ে আছে সীমিত কলেবরের এই বইটির পাতায় পাতায়। ব্যক্তিজীবনে সুলতান সালাহ্উদ্দীন আহমেদ একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মায়ামিতে বসবাস করেন।]


 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]