|
রনলাঃ উত্তরণের মনোমুগ্ধকর সংগীত সন্ধ্যা
কাজী ইনসানুল হক ।। জুন ২১, ২০১৫ ।।
মনিষীত্রয় বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম, সাইজি
ফকির লালন শাহ -এর গান নিয়ে উত্তরণের এ আয়োজনটি ছিলো এক কথায় চমৎকার।
বিদ্রোহী কবি "যার বদন খানি মলিন হলে" রবীন্দ্রনাথ "নয়ন জলে ভাসে" ধর্ম,
বর্ণ, গোত্র সম্পর্কে নির্বিকার, জাতভেদকে উপেক্ষা করে লালন বলেন "সব লোকে
কয় লালন কি জাত সংসারে"।
কোলকাতার জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথ, চুরুলিয়ার নজরুল আর ছেঁউড়ির লালন -এই
তিনজন মরমীর বানীকে এক মঞ্চে পরিবেশনার জন্যে উত্তরণকে অভিনন্দন জানাতেই
হয়।
গত ১৪ জুন রোববার সন্ধ্যায় জাপানের সাইতামা অঞ্চলের "সেজাকি" কমিউনিটি
সেন্টারের প্রবাসীদের পরিচিত হলটাকে সাজানো হয়েছিলো বিশেষ আদলে আধো আলো,
আধো অন্ধকারের নৈব্যক্তিক পরিবেশ, মঞ্চ পরিহার করে গায়ক, গায়িকা ও
আমন্ত্রিত অতিথি সবাই হলের মেঝেতে মুখোমুখি বসে গানের "স্বাদ" গ্রহণের
ধারণাটা ছিলো চমৎকার। সাউন্ড সিস্টেমের সামান্য ত্রুটি যদিও একটা সমস্যা
ছিলো কিন্তু গান আর গায়কীর কারণে দর্শকরা সেটাকে পাত্তাই দেননি।
শুরুতেই মৌটুসি দত্ত মৌ -এর কবি পরিচিত তারপর তিনপর্ব সাজানো সংগীত
পরিবেশনাটা ছিলো কোরাস দিয়ে। রবীন্দ্র পর্বে কোরাস "হারে রে রে রে রে আমায়
ছেড়ে দেরে দেরে" পরপরই সীমার কন্ঠে "গ্রাম ছাড়া এই রাঙামাটির পথ", ববিতা
পোদ্দারের গলায় "মোর বীনা ওঠে কোন সুরে বাজি", সীমার কন্ঠে দ্বিতীয়বার "এসো
নীপবনে ছায়াবিথী তলে এসো", ইমরানা জাকরিনের "ঝড়ে যায়, উড়ে যায়, আমার বুকের
আঁচল খানি" গানের রেশ না মিলাতেই মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিন আবৃত্তি করলেন
রবীন্দ্রনাথের "সনধা ও প্রভাত"।
নজরুল পর্বের কোরাস "তোরা সব জয়োধ্বনি কর", এরপর বিশ্বজিৎ দত্ত বাপ্পার
আবৃত্তি বল বীর বল উন্নত মন শীড় নিলঞ্জনা দত্ত ছুটি "তুমি ফিরাবে কি শুণ্য
হাতে?" গান গুলো শেষ না হতেই মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনের কবিতা "বিরহ বধুয়া"
আবৃত্তি। এরপর নিলঞ্জনা দত্ত ছুটির "এতো জল ও কাজল চোখে", যেরম গোমেজের
গলায় "নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে", মামুনের পরিবেশনায় "পড়ি জাফরানী ঘাগড়ী",
ইমরান জাফরিনের "এলো শ্যামল কিশোর", যেরম গোমেজের দ্বিতীয় গান "আজো কাঁদে
কাননে কোয়েলিয়া" এই পর্বের শেষ গান ইমরান জাফরিন ও সহশিল্পীদের কন্ঠে "আমার
সাম্পান যাত্রী না লয় -ভাংগা আমার তরী"।
লালন পর্বের প্রথম কোরাস "মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি" ববিতা
পোদ্দার "ক্ষম ক্ষম অপরাধ" সুলতানা দিলরুবা জলির "দু'বারু যে পায় সে রতন" ও
"কয় দমে হয় দিন রজনী"। সবশেষে খন্দকার ফজলুল হক রতনের কন্ঠে তিনটি গান "যার
যার ধর্ম", "কাছের মানুষ ডাকছো কেনো শোর করে" ও "কে যাবি পাড়ে"।
এর মধ্যে উপস্থিত দেশ বরেণ্য কন্ঠশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ও দ্বীপ্তি
রাজবংশীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং প্রবাসীরা করতালীর মাধ্যমে তাদের বরণ করে
নেন।
শিল্পীদ্বয় চমৎকার বক্তৃতা ও গানে উপস্থিত সবাইকে মোহিত করেন। দূতাবাস
কর্মকর্তা জনাব সাকলায়েনের স্ত্রীও অনুরোধে দু'টো চমৎকার গান গেয়ে আসর
জমিয়ে ফেলেন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই ধুমকেতুর মতো আবির্ভুত হন সুদূর বাংলাদেশ
থেকে -উত্তরণের সদস্য ইমতিয়াজ কোরশী বাবু । বাবু অদ্ভুত ভালো বাঁশি বাজান।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হলে এলেও সংগে বাঁশি আনা হয়নি। তাই
দর্শকরা তার সম্মোহিত বাঁশির সুর থেকে বঞ্চিত হলেন।
শুরু থেকে পানীয় আর হালকা স্ন্যাক ও অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাবারে সবাইকে
আপ্যায়িত করা হয়। মঞ্চ পরিকল্পনা ডিটু ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা সঞ্জয় দত্ত।
রনলা -রবীন্দ্, নজরুল ও লালনের সমস্ত অনুষ্ঠানটি ছিলো মনোমুগ্ধ কর এবং
উপস্থিত সবার কাছে তা হয়ে ওঠে উপভোগ্য ও আনন্দময়।
ভিন্ন কথা: অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের হাতে রঙিন পানীয় ধরিয়ে দেয়ার
বিষয়টি সামগ্রিক পরিবেশনার মানদন্ডে কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে ভিন্ন মতামত
পাওয়া গেছে। গান-বাজনার সাথে পানীয়র যোগ-সংযোগ সেই কাল থেকেই তবে তা সত্বেও
রাখঢাক থাকাটাই প্রথাসিদ্ধ। অনুষ্ঠানের পোস্টারে এই পানীয়র বিষয়টি ঘটা করে
প্রচার করায় এই প্রতিবেদক গত দু'টি অনুষ্ঠানে ইচ্ছে করেই উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানটি কেবলমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে -পোস্টারটি দেখে অনেকটা
আঁতেলপানা বলেই প্রতীয়মান হয়েছিল। যারা বলেন জাপানে পানীয়টা কোন বিষয় নয়
তাদের কাছে প্রশ্ন অনুষ্ঠানটি জাপানি সাংস্কৃতির নয় -চিরায়ত বাংলা গান ও
সাংস্কৃতির। আর যারা অনুষ্ঠানের আয়োজক, দর্শক-শ্রোতা সকলেই বাঙালী -জাপানি
নন। দর্শকরা পানীয়র আমেজে একটু আধটু কথা বলবেই -সেটাই স্বাভাবিক। সেটা
অনুষ্ঠানের শিল্পীদের পরিবেশনায় কতটা বিঘ্ন ঘটায় সেটাও বিবেচনা করা উচিত।
গানের অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হলে পানীয় ও খাওয়ার পর্বটি শুরু করা যায়না?
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly
prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|