[প্রথমপাতা]

 

 

 

একটি অতি- অবাস্তব কাহিনী


- তনুজা বড়ুয়া -

 

নীল এর ইদানীং অকাজে ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রথমেই আবৃত্তির রিহারসেল এর জন্য সোজন বাদিয়ার ঘাটের স্ক্রিপ্ট ফটোকপি করতে দোকানে গেলো। দোকানির সাথে বেশ কিছুক্ষণ গপ্প-সপ্পো করলো, এরপর সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটল বাস ধরতে। নাহ! আজ আর বাস ধরা হলো না! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ আর চলন্ত রিক্সা দেখছিলো। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। অগ্যত নীলকে একটা খালি রিক্সা ডাকতে হয়েছে।

- এই যাবে ?
- যাবো ম্যাডাম
(নীল বিব্রত হলো রিকশা চালকের বাচালতায়)
- শিল্পকলা একডেমি ?
- যাবো (এই বলে ব্যস্ত হয়ে গেলো রিকশার হুড নিয়ে)

নীল রিকশায় উঠে গেলো । দুলি- সোজন এর প্রেম কাহিনী ভাবতে ভাবতে রিকশার টুংটাং শব্দ , ঝাঁকুনি সবই অনুভব করলো। শীতের সূর্য ডুবি ডুবি । এমন সময় বাচাল রিকশাওয়ালা তার সমস্ত মনোযোগ নষ্ট করলো !

- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে ?
- হ্যাঁ বলেন ।
- আপনি কি মুসলমান?
-( একটু অবাক হয়ে নীল উত্তর করলো ) নাহ!
- কিছু মনে করবেন না । আপনি একদম মুসলমানের মেয়ের মতন!
- মুসলমানের মেয়েদের কোন বিশেষ গুন আছে ?
- আছে না ! আপনি খুব সুন্দর ! একদম মুসলমানের মেয়েদের মতন।
( নীল একচোট হেসে নিলো! সলজ্জ হাসি )

রিকশাওয়ালা খুব সুন্দর সুরেলা কণ্ঠে কোরানের আয়াত বাংলায় তর্জমা সহ নীলকে শোনাচ্ছিল । বাতাসের ঝাপটায় অনেক অংশ আবছা বোঝা গেলেও শুনতে বেশ ভালো লাগছিলো নীলের। রিকশাওয়ালা আবার পটপট ইংরেজি বলে। নীল আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো -

- এতো সুন্দর করে কথা বলেন, পড়াশুনা করেছেন?
- পড়েছি । মাদ্রাসাতে ক্লাস নাইন পর্যন্ত। আরো পড়ার ইচ্ছা আছে।
- ভালো । চালিয়ে যান।
- শিল্পকলাতে অনেক অনুষ্ঠান হয়। আপনি সেখানে গান করেন?
- নাহ , আমি আবৃত্তি শিখতে যাই।

সে সুর করে ঈশ্বরের স্তুতি করছে আর আপনমনে অনুবাদ করে নীলকে শোনাচ্ছে।
অসতর্কভাবে রিকশা চালাচ্ছিল , এরপরো তার মুখে প্রাণবন্ত হাসি। ভয় ডর নেই নাকি ছেলেটার ! বড্ড বাচাল!

-আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। সকল ধর্মকে সৃষ্টি করেছে। সবার উপরে সত্য,আমরা মানুষ। তাইনা?
-অনেকটাই ঠিক বলেছেন।
- আমি আপনাকে এসব বলছি আপনি কি "মাইন্ড" করছেন ?
- নাহ ভাই। আপনি তো খারাপ কিছু বলছেন না। আমি কিছু মনে করছি না। তবে দেখে রিকশা চালান। নাহয় দু'জনেই মরবো।

রিকশা মন্থর গতিতেই চলছিলো। শিল্পকলার কাছাকাছি পথে এসে রিকশার গতি আর কমলো। রিকশাওয়ালা কিছু বলতে চাইলো নীলকে। সে নীলের উত্তর- প্রতিউত্তর কিছু শুনতে চায়নি। সে চেয়েছে নিজের মনের কথা বলতে। এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো -

- তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে । আমি তোমাকে এতোগুলো কোরানের আয়াত শুনিয়েছি যাতে তুমি বুঝতে পারো দুই ধর্মের হলেও ভালবেসে থাকা যায়। আমি কোনদিন বলবো না তুমি ধর্মান্তরিত হও। তুমি চাইলে আমরা দুজন একসাথে পড়াশুনা করবো। আমার তোমাকে অনেক বেশি ভাল লেগেছে , আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই !

নীল এ ধরনের দৃশ্য সিনেমায় দেখেছে। বাস্তবে এরকম ঘটনার মুখোমুখি নীল কি বলবে ঠিক ভেবে উঠতে পারলো না। সে রিকশা থেকে নামলো। ভাড়া যা ঠিক করেছিলো তার চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি দিলো । শিল্পকলার গেট এর দিকে পা বাড়াতেই , বলল-

- তুমি কি এর মধ্যে বিয়ে করবে?
- নাহ ! কবে বিয়ে করবো তাতো জানিনা । হয়তো এ জীবনে বিয়ে নাও করতে পারি। যাই, ক্লাস আছে।

নীল পড়ন্ত বিকেলে শিল্পকলার গেট পাড় করছে আর ভাবছে গত পনেরো মিনিট ধরে যা হয়েছে - সেটা অসম্ভব এবং অবাস্তব ! সে বোধয় স্বপ্নের ঘোরে ছিলো কিংবা বাংলা সিনেমার রুপালী জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো কিছু সময়ের জন্য!

হৃদয় ভাঙ্গার শব্দ কি শোনা যায়? তবে পড়া যায় চোখের ভাষা ! চোখ তো মিথ্যা বলে না!

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ