বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে টোকিওতে ১৪২১ বর্ষবরণ
কাজী ইনসানুল হক ।। মে ৪, ২০১৪ ।।
বাংলা নববর্ষের সূচনা কে করে ছিলেন এ বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ঐতিহাসিক ঘটনার
নানা যোগসূত্র ঘাটলে মোগল সুবাদার মুর্শিদ কুলি খান'কে বাংলাসনের প্রবর্তক
মনে হলেও তিনি আকবর প্রবর্তিত "তারিক-এ-ইলাহি" সূত্র অনুসরণ করেই বাংলা
অঞ্চলের কৃষকদের খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সনের প্রবর্তণ করেছেন এটি
প্রমাণিত। তাহলে সম্রাট আকবর এই কৃতিত্বের দাবি করতে পারেন।
বাঙালী জীবনে বাংলা নববর্ষ এখন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক বর্ণিল সার্বজনীন
উৎসব। সারা দেশ জুড়ে বাংলা নববর্ষ যেমন সাড়ম্বরে পালিত হয়, বহির্বিশ্বে
বাংলাদেশের মিশন সমূহে নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে তা উদযাপিত হয়। বাংলাদেশ
দূতাবাস জাপানের আয়োজনে গত ৩০ এপ্রিল রোববার টোকিওর মেগুরোস্থ পারসিমন হলে
নববর্ষের আয়োজনটি ছিলো এক কথায় চমৎকার। দূতাবাসে সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সহ বহির্বিশ্বের বেশ ক'জন কুটনীতিক, বন্ধুপ্রতিম
জাপানিরা এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে
জাপান সফররত বিশিষ্ট কবি ও লেখক সৈয়দ শামসুল হকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে
পুরো অনুষ্ঠানটি সবার সাথে উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলাদেশি নানান খাবার দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনাতেই সমস্বরে নেচে-গেয়ে এসো হে বৈশাখ গেয়ে
নববর্ষকে বরণ করা হয়। তারপর বাউল সংগীত 'আমি কোথায় পাবো তারে' গেয়ে
শোনান দূতাবাসের প্রথম সচিব বেবী রাণী কর্মকার। গান
শুরুর আগে তিনি বর্ণনায় কী করে আমাদের জাতীয় সংগীতের সৃষ্টি হলো গগন হরকরার
সেই মর্মস্পর্শী গল্পের অবতারণা করেন। তার পরিপূর্ণ গানের গলা এক কথায়
অপূর্ব।
হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. তোগাওয়া মাসাহিকো লালন, তার
গান ও বাণীর বিশ্বব্যাপী প্রভাবের উপর বিশেষ নিবন্ধ পাঠ করেন। তাঁর বাংলা
বকৃতা শোনাটি ছিলো খুবই আনন্দের। জাপানি এই নৃতত্ববিদ লালনের উপর গবেষণা
করতে গিয়ে বারবার বাংলাদেশে গেছেন আখড়ায় আখড়ায় ঘুরেছেন এবং শেষ পর্যন্ত
লালনের প্রেমে পড়েন, এমনকি দীক্ষাও নিয়ে ফেলেন।
মিলন হবে কত দিনে- লালন
সংগীতের সাথে কলির নাচ ও পরবর্তীতে রেশমী, অহনা, সাবা'র নাচ ছিলো আকর্ষনীয়।
দু'জন জাপানি শিল্পীও অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশন করেন। স্বরলিপি কালচারাল
গ্রুপের শিশুদের নৃত্য ছিলো খুবই উপভোগ্য। সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের
সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন ৫ সদস্যের শিল্পী দল। এরা
হচ্ছেন- চ থুই থ্রু মারমা, রেশমী বন, এ্যা নি দেওয়ান, এলি ত্রিপুরা, ড ওয়াং
প্রু মারমা। আমন্ত্রিত শিল্পীদের একক এবং সম্মিলিত নৃত্য ও পাহাড়ি
সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক নানান কর্মকান্ডের অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
প্রতিভাময়ী এই ৫ জন বিশিষ্ট শিল্পীর প্রতিটি পরিবেশনার মান ছিলো চমৎকার।
মঞ্চ সজ্জার গুরুদায়িত্বটি পালন করেন প্রবাসী শিল্পী লিপু।
শাহনাজ রানুর সাবলিল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি করে। তাকে
সহযোগিতা করেন সাকলায়েন ও মাসাকো সামা। অনুষ্ঠানে কোরিওগ্রাফির দায়িত্ব
পালন করেন আনজুম হুসাইন।
অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন
এর আগে মৈমনসিংহ গীতিকাব্যকে আনা হয়েছিলো এবার পার্বত্য চট্টগ্রামের
শিল্পিরা। ভবিষ্যতে এ রকম অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অঞ্চল ভিত্তিক
মাঠে-ঘাটে-গ্রামে মূল
ধারার সংগীত শিল্পীদের এনে আয়োজন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত
করেন।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |