|
২২তম টোকিও বৈশাখী মেলায় প্রবাসীদের ঢল
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। মে ৩,
২০২৩ ।।
জাপান প্রবাসীদের প্রাণের মেলা টোকিও বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল ২০২৩
আয়োজনে প্রবাসীদের ঢল নেমেছিল । প্রবাসীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক জাপানী সহ
অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও বাংলা নববর্ষের আয়োজনে মেতে উঠেন।
এ বছর রমজান মাসে বাংলা নববর্ষ শুরু হওয়ায় যথা সময়ে এই মেলার আয়োজন করা সম্ভব
হয়নি। বৃষ্টি জনিত বৈরী আবহাওয়া এবং জাপানে চলমান সপ্তাহব্যাপী ‘গোল্ডেন উইক’
এর ছুটির পরও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এবং উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না ।
এবারের আয়োজন ছিল ২২তম । ১৯৯৯ সালে একই স্থানে টোকিও বৈশাখী মেলা নামে জাপান
প্রবাসীদের আয়োজনে মেলাটি শুরু হয়। ২০২০ টোকিও অলিম্পিককে কেন্দ্র করে অবকাঠামো
ঢেলে সাজানো এবং করোনার কারনে জন্য দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে পুনরায় একই
ভেন্যুতে দল মত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতায় আয়োজনটি হয় ।
মেলার উদ্বোধন করা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'এসো হে বৈশাখ' গান
পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর উন্মুক্ত অনুষ্ঠান, জাপানি অনুষ্ঠান, অতিথিদের
অভ্যর্থনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলা শেষ হয়।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল আয়োজক সংগঠন জেবিএস পরিচালিত ‘বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য
পরীক্ষা । প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশীরা এখানে এসে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে
থাকেন। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার নেতৃত্বে থাকেন ডঃ নোরিকো কিনুকাওয়া ।
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
শাহাবুদ্দিন আহামেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত
কিমিনোরি ইউয়ামা, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তোশিমা
সিটি সংস্কৃতি ও বাণিজ্য বিভাগীয় প্রধান শোইচি কোইকে, জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির
প্রেসিডেন্ট মাসাতো ওয়াতানাবে এবং আয়োজক সংগঠন জেবিএস চেয়ারম্যান ওসামু ওৎসুবো।
প্রতি বছরের মতো এবারও টোকিওর তোশিমা সিটি ইকেবুকুরো নিশিগুর্চি পার্কে বসেছিল
জাপান প্রবাসীদের মিলনমেলার হাট। ৩০ এপ্রিল রোববার ইকেবুকুরো এলাকাটি হয়েছিল এক
টুকরো বাংলাদেশ। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়েছিল বাংলা ভাষা, মানুষ দেখেছে
বাংলাদেশিদের পোশাক সংস্কৃতি, স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতির এবং
উপভোগ করেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংস্কৃতি। এদিন বর্ণিল সাজে সেজেছিল শহীদ
মিনার খ্যাত ইকেবুকুরো নিশিগুর্চি পার্ক।
এই পার্কেই স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারি অর্থায়নে দেশের বাইরে প্রথম স্থায়ী
শহীদ মিনার। তাই নতুন কোনো জাপানি যিনি টোকিওর বাইরে থাকেন,তাকে যদি বৈশাখী
মেলার দিন মেলা প্রাঙ্গণে ছেড়ে দেয়া যায় তাহলে নির্ঘাত তিনি দ্বিধায় পড়ে যাবেন
যে, তিনি আসলেই নিজ দেশে আছেন, নাকি বিনা টিকেট, পাসপোর্ট, ভিসাবিহীন স্বপ্ন
দেখার মতো তৃতীয় কোনো দেশে অবস্থান করছেন।
স্থানীয় প্রবাসী সাংস্কৃতিক দল ‘উত্তরণ’ কালচারাল গ্রুপ ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক
দলের সাথে প্রবাসীদের নতুন সাংস্কৃতিক ‘মাদল’ প্রথম বারের মতো বৈশাখী মেলায়
অংশগ্রহণ নিয়ে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় । এছারা জাপানী শিল্পীরাও
সংগীত পরিবেশন করেন । শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটিতে ডঃ তপন কুমার পাল
পরিচালিত শিশু শিল্পী একাডেমীর শিশু শিল্পীদের দলীয় নাচটি ছিল বিশেষ উপভোগ্য ।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই মেলাতে বাংলাভাষা সংস্কৃতির পাশাপাশি খাদ্য সংস্কৃতি পোশাক
সংস্কৃতি ও অন্যান্য কুটির শিল্পের পসরা নিয়ে মোট ১৬টি স্টল ছিল . তার মধ্যে
৭টি ছিল খাবারের স্টল ।
এবছরও মেলায় মহিলা এবং পুরুষদের নামাজের জন্য বিশেষ স্থান বরাদ্ধ রাখা হয় ।
জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই মহা মিলনমেলায় শুধু যে
বাংলাদেশিরা অংশ নিয়ে থাকেন বা আনন্দ উপভোগ করেন তা কিন্তু নয়। স্থানীয়
জাপানিদের বিপুল অংশগ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ এতে অংশ নিয়ে থাকেন এবং
উপভোগ করে থাকেন। আর মেলাটি উন্মুক্ত পার্কে অনুষ্ঠিত হয় বলে অনেক ভ্রাম্যমাণ
দর্শনার্থীরও পদধূলি পড়ে বাংলাদেশিদের এই মেলায়।
টোকিও বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল জাপান প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ মিলন মেলা।
নির্দিষ্ট একটি দিনের জন্য মেলাটি অনুষ্ঠিত হলেও মেলাকে ঘিরে প্রবাসীদের
উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই। আর রেশও থাকে বেশ কয়েকদিন
পর্যন্ত। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা টোকিও বৈশাখী মেলা উপভোগ করেন। এক সময় জাপান প্রবাসী
ছিলেন এখন অন্য দেশে বা বাংলাদেশে বসবাস করেন এমন অনেকেই বৈশাখী মেলাকে ঘিরে
জাপান সফর করেন।
বরাবরের মতো বিদায় বেলায় সবার মুখে একই বাক্য প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়, “দেখা হবে
আগামী মেলায়”।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|