প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ  বর্তমানের কথামালা শিল্প-সাহিত্য

বাংলাদেশ কমিউনিটি

আর্কাইভ

লাইফ স্টাইল

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

জাপানে ৬ষ্ঠ আশিকাগা পিঠা উৎসব

 

 

 

এস এম নোমান ।। ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ ।।

পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙ্গালীদের শীতকাল এলেই মন খুশিতেমেতে উঠে। তার কারণ হলো শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয় বাংলাদেশ। পিঠা ছাড়াবাঙালির সে যেন পরিপূর্ণ হয় না। শীতকালের পিঠা হলো ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি অংশও । পিঠাখেতে ভালোবাসা না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসিদের অনেকেই এই পিঠা খাওয়ার আনন্দথেকে বঞ্চিত হয়। সেই জন্য জাপানে বসবাসরত প্রবাসীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ৬ষ্ঠ আশিকাগাপিঠা উৎসবের। গত ১১ ডিসেম্বর রোববার তোচিগি কেনের আশিকাগা সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটিকিতা কানতোর পক্ষ থেকে সুইয়ামা লুবনার উদ্যোগে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বরাবরের মতইএই আয়োজনের মুল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসীদের পিঠা খাওয়ার অতৃপ্তি কিছুটা দূর করার পাশাপাশিআমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরাও।জাপানের বিভিন্ন শহরের ৯০টিপরিবারের সদস্য সহ মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন এই পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পিঠা উৎসবটিজাপানের বাঙালিরদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। নারীদের সবার পরনে ছিল একই রং এর শাড়িআর পুরুষদের পরনে ছিল বাঙালির প্রিয় পোশাক পাজামা-পাঞ্জাবি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিলটি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাচ্ছাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।বিভিন্নবয়সের মোট ৬০ জন প্রতিযোগী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে।সকল প্রতিযোগীকেই পুরুস্কারদিয়ে উৎসাহিত করা হয়।বাচ্চাদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরন করেন বাংলাদেশ কমিউনিটির জনপ্রিয় মুখশিক্ষক আজাদ মুনশী, মোঃ নাসিরুল হাকিম,রেনু আজাদ ও রওনক জাহান
পর্বটি পরিচালনা করেন সাবরিনা জাহান।
মধ্যাহ্ন ভোজনে বড়দের জন্য ছিলও বিফ বিরিয়ানি, তোন্দরি চিকেন এবং ছোটদের জন্য ছিল বাটারচিকেন। সবাই খুবই তৃপ্তি সহকারে মধ্যাহ্ন ভোজ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল পিঠা প্রতিযোগিতা , কেক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে্র শুরতেই মহিলাদের সমাবেত সঙ্গীত “সূর্যদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি।”তারপরেই ছিলপুরুষদের সমাবেত সঙ্গীত “তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর”।এরপর পবিত্র কোরান শরীফ হতে সুরা পাঠকরে নাবা,আকিয়ার রহমান।ছোট বাচ্চাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়দিহান,তিরানা,আমিরা, প্রতিভা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করেন রেইন কারিম,নিপুণ তাবিয়া, নাঈম , সাবরিনা জাহানও শ্বপন মিয়া।
নৃত্য পরিবেশন করে আজরিন কারিম নাবা ও কেয়া।বরাবরের মতই সবাই দারুন উপভোগ নৃত্য গুলো।
এরপর ছিল একটি বিশেষ পর্ব। এই পর্বে সদ্য সিআইপি পদক প্রাপ্ত জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ওবাংলাদেশ কমিউনিটির জনপ্রিয় মুখ বাদল চাকলাদার ও টোকিও বৈশাকী মেলার অন্যতম সমন্বয়কারীবাংলাদেশ কমিউনিটির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ মোঃ খন্দকার আসলাম হীরাকে বিশেষ সম্মানে ভুষিতকরা হয়।এই পর্বটি পরিচালনা করেন লেখক-সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক।সম্মাননা প্রাপ্ত দুইজনেরহাতে পদক তুলে দেন স্বরলিপি কালচাকার একাডেমির পরিচালক মোঃ নাসিরুল হাকিম, মুনশীআজাদ, আল আমিন খাঁন ও নোমান সৈয়দ।
এই পর্বে আরো পুরুষ্কৃত করা হয় আজরিন কারিম নাবাকে। সম্প্রতি নাবা বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াই।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর আরম্ভ হয় ফারজানা বুটিকস এর সৌজন্যে ৬ষ্ঠ আশিকাগা পিঠা উৎসবেরনতুন সংযোজন কেক প্রতিযোগিতা।কেক প্রতিযোগিতায় মোট ১০ জন প্রতিযোগি অংশগ্রহন করেন।সবার তৈরী মনমুগ্ধকর কেক গুলো সবার মন জয় করে নেয়।কেক প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন সমাজসেবক জেসমিন সুলতানা কাকলি ও বহ্নি সানি। কেক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় খাদিজা তমা, ১ম ও২য় রানাস আপ হয় যথাক্রমে পিউলি ও সীমা। ৪র্থ স্হান অর্জন করেন রাফা।
বিজয়ীদের হাতে পুরুষ্কার তুলে দেন ফারজানা বুটিকস এর কর্ণধার ফারজানা আঁখি।
এরপর আরম্ভ হয় নিপুণ তাবিয়া পেইজের সৌজন্যে আসিকাগা পিঠা উৎসবের সব চাইতে আকর্ষণীয়পর্ব পিঠা প্রতিযোগিতা।
নিজ হাতের তৈরি পিঠা নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ১৬ জন প্রতিযোগী। পিঠাপ্রতিযোগিতায় ছিল তিনটি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের জন্য ছিল আলাদা আলাদা নম্বর।বিচারকেরদায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কমিউনিটির পরিচিত মুখ লেখক-সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, টোকিও বৈশাকী মেলার অন্যতম সমন্বয়কারী মোঃ
আসলাম খন্দকার হিরা, শিক্ষিকা মুনশী রেনু আজাদ ও শিল্পী, লেখিকা ও চিত্রকর রওনক জাহান।

প্রতিযোগিতা শেষে বিচারকরা যখন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছিল তখন পুরো হলে পিন পতননিরাবতা নেমে আসে। প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন পাপিয়া।তিনি তৈরি করেন দুধ চিতই পিঠা। গজা পিঠা তৈরি করে প্রথম রানারআপ নির্বাচিত হন নিগারসুলতানা দিনু, মালপোয়া পিঠা তৈরি করে দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হন ফারজানা দোলন।মুগপাকন পিঠা তৈরি করে চতুর্থ স্থান আধিকার করেন রাফা।৫ম স্হান অধিকার করেন লিজা হুসনা।তিনিতৈরি করেন যথাক্রমে গজা পিঠা।
বিজয়ী ৫ জনের হাতে পুরুস্কার পুরুস্কার তুলে দেন এর নিপুণ তাবিয়া পেইজের কর্ণদার নিপুণ তাবিয়া।
পুরুস্কার হিসাবে ছিল নিপুণ তাবিয়া পেইজের পক্ষ হতে বেশ কিছু কসমেটিক। চ্যাম্পিয়ন পাপিয়াকে মুকুটপড়িয়ে দেওয়া হয়।মুকুট পরিয়ে দেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন খাদিজা আক্তার মুক্তা।
কেক ও পিঠা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের জন্য ছিলো আয়োজকদের পক্ষ ট্রফি।
পিঠা প্রতিযোগিতা, কেক প্রতিযোগিতা সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন সুইয়ামা লুবনা।
এরপর ছিল সবাই আধির আগ্রহে থাকা পিঠা ভোজন। মজাদার প্রায় ২৫ রকমের পিঠা দিয়ে সাজানোহয় পর্বটি। উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল ভাপা, বিবিখানা, পাটিসাপটা, মুগপাকন, চিতই পিঠা,ফুলঝুড়ি, তেলের পিঠা, নারিকেলের পুলি, গোলাপ, মালপোয়া,জিলাবী পিঠা,নারিকেলের পাকন ওসুজির রস মঞ্জুরি পিঠা। মিষ্টান্নের মধ্যে ছিল বাসুশা ও ঝাল আইটেমের মধ্যে ছিল ঝাল পুলি।
পিঠা উৎসবের সব শেষে ছিল অন্যতম আকর্ষণ ছিল র‍্যাফেল ড্র। র‍্যাফেল ড্র চলার সময় সবার মধ্যেছিল চরম উত্তেজনা। র‍্যাফেল ড্রতে আয়োজকদের পক্ষ হতে ছিল ৫টি আকর্ষণীয় পুরুস্কার।
এন বি এলিগেন্টের পক্ষ হতে ৩টি পুরুষ্কার ও গিফট ফ্যাশনের পক্ষ হতে ৩টি পুরুষ্কার।

বর্ণাঢ্য এই পিঠা উৎসবে উপস্হিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসী ব্যবসায়ী, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা। সাউন্ড সিস্টেম ও মিউজিকেরদায়িত্ব পালন করেন জাহেদি সোহেল।
অনুষ্টান শেষে সুইয়ামা লুবনা অনুষ্ঠানে সবাইকে দূর দুরান্ত হতে আসার জন্য এবং যারা সার্বিক ভাবেসহযোগিতা করছেন তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার জন্য অনুরোধজানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]