প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ  বর্তমানের কথামালা শিল্প-সাহিত্য

বাংলাদেশ কমিউনিটি

আর্কাইভ

লাইফ স্টাইল

যোগাযোগ

 

 

 

 

বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বিরল চিত্র প্রদর্শনী

 

 

প্রবীর বিকাশ সরকার ।। ডিসেম্বর ২৭, ২০২১ ।।

একটা বিরল ইতিহাস সৃষ্টি হলো আজকে জাপানে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাইতামা-প্রিফেকচারস্থ কাওয়াগুচি শহরে অবস্থিত কাহাল আর্ট গ্যালারিতে উদ্বোধন হলো বঙ্গবন্ধুকে চিত্রিত একটি বিশেষ চিত্রপ্রদর্শনী। উদ্বোধন করেছেন জাপানস্থ বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ।

প্রদর্শনীর আয়োজক কাহাল গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা জাপান প্রবাসী তরুণ চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান লিপু। তারুণ্যে টগবগে স্বল্পভাষী শিল্পী লিপুর আমন্ত্রণে প্রদর্শনী দেখার সৌভাগ্য হলো। তাকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ এবং সাধুবাদ। প্রদর্শনীতে বিশিষ্ট শিল্পীর ৩২টির মতো চিত্র স্থান পেয়েছে, এবং প্রতিটি চিত্রকর্মই অসাধারণ। চিত্রগুলোতে শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুকে নানা অভিব্যক্তিতে সমুজ্জল করেছেন, যা না দেখলে এই বৈচিত্র্যময়তা দর্শন করা সম্ভব নয়।

বাঙালি কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এই ধরনের প্রদর্শনী জাপানে এই প্রথম। দেড় বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে এমন একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। তাকে প্রাণঢালা অভিবাদন জানাতেই হয়। প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত বঙ্গবন্ধুকে অঙ্কিত তার নিজের আঁকা বৃহৎ আঙ্গিকের অসামান্য সুদর্শন একটি চিত্রকর্ম আগত সকলকেই অভিভূত করেছে। ছবিটি অবশ্যই বাংলাদেশ দূতাবাসে সংরক্ষিত হওয়ার দাবি রাখে। হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধুর এই চিত্রটি দেশি-বিদেশি যেকোনো মানুষের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

করোনার বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও প্রচুর প্রবাসী বাঙালির সমাবেশ ঘটেছে। বয়োজ্যেষ্ঠ বিশিষ্ট প্রবাসীদের মধ্যে আবদুর রহমান, মুন্সি কে.আজাদ, রেণু আজাদ উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং উদ্যোক্তা শিল্পীকে উৎসাহিত করেন। উপস্থিত ছিলেন এপিএফএস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী বিদেশিবান্ধব জাপানি নাগরিক য়োশিনারি কাৎসুও এবং রিক্কিয়ো বিশ্ববিদালয়ের জনৈক অধ্যাপক। প্রদর্শনী কক্ষ সরগরম করে তুলেছেন বাংলাদেশি সমাজের অনেক পরিচিতমুখ সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রশিল্পী, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, ব্যবসায়ী।

প্রদর্শনীর কল্যাণে কতিপয় পুরনো বন্ধুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে গেল অনেক বছরের ব্যবধানে। ছবির দেখার ছলে নানা স্মৃতিচারণও হয়ে গেল। ভালো লাগলো আরও এই যে, স্বল্প পরিসরে হলেও একজন তরুণ বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীর প্রচেষ্টায় একটি চিত্র প্রদর্শনী স্থল এই দেশে স্থাপিত হয়েছে দেখে। এটা নিতান্তই সামান্য কিছু নয়। প্রত্যাশারও অধিক পাওয়া। এখন থেকে নিয়মিত চিত্র প্রদর্শনী হবে বলে কর্ণধার শিল্পী কামরুল হাসান লিপু জানালেন।

এই নবউদ্যোগের মধ্য দিয়ে জাপান-বাংলা শিক্ষা-সংস্কৃতির শতবর্ষ পুরনো ভাববিনিময়কে আরও এক ধাপ এগোলো বলেই আমার বিশ্বাস। যার সূচনা হয়েছিল ১৯০২ সালে কলকাতায় জাপানি মনীষী ও শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ ও বন্ধুত্বের স্থাপনের মধ্য দিয়ে। জাপানে বাঙালি চিত্রশিল্পীর প্রথম চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে, রবীন্দ্রনাথের প্রথম জাপান ভ্রমণের সময় উয়েনো সংলগ্ন ইয়ানাকা শহরে অবস্থিত জাপানের প্রথম আর্ট ইনস্টিটিউট “নিহোন বিজুৎসুইন” প্রতিষ্ঠানে, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওকাকুরা তেনশিন।

উপরোক্ত ধারা ধরে দুই দেশে চিত্রকলার ভাববিনিময় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গভীর এবং জোরালো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেই ওকাকুরার দুই শিষ্য এবং খ্যাতিমান চিত্রশল্পী একাধিক যেমন, য়োকোয়ামা তাইকান, হিশিদা শুনসোও, কাম্পো আরাই, কোওসেৎসু নোওসু, কাৎসুতা শৌকিন প্রমুখ কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন, তাঁদের চিত্রকর্ম প্রদর্শিতও হয়েছে। বাংলা অঞ্চল থেকে জাপানে এসেছেন চিত্র মুকুলচন্দ্র দে, নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। যুদ্ধের পর ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের একক চিত্রকর্মের বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউনেসকোর সহযোগিতায়। ষাটের দশকেই জাপানে প্রদর্শিত হয়েছিল বিখ্যাত চিত্রশিল্পী আচার্য জয়নুল আবেদীনের একক চিত্র প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার জাপানে কম বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী শিক্ষালাভ উপলক্ষে আগমন করেননি! আনোয়ারুল হক, কালিদাস কর্মকার, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, এমএইচ কবীর জাপানে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন। এই পর্যন্ত জাপানে বাংলাদেশি অনেক চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। চিত্রশিল্পী লিপুর প্রচেষ্টায় এই সুযোগ যে আরও সম্প্রসারিত হবে এই আশাবাদ জাগিয়েছে উক্ত প্রদর্শনী। উল্লেখ্য যে, এবারের “কাহাল সম্মাননা” প্রদান করা হয়েছে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে। শিল্পীকে জানাই অভিনন্দন। শিক্ষকের প্রতি বা অগ্রজর প্রতি শিষ্য বা অনুজের এই যে সম্মান প্রদর্শন, এটা প্রবাসে অবশ্যই শিক্ষামূলক ও উৎসাহব্যঞ্জক বলে প্রতীয়মান।

জাপান-বাংলা মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক।

টোকিও ২৬.১২.২১

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]