|
জাপানের আসিকাগা শহরে ৫ম পিঠা
উৎসবের আয়োজন
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। ডিসেম্বর ১৬, ২০২১ ।।
পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পিঠা খেতে ভালোবাসা না এমন
লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসিদের অনেকেই পিঠা খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়।
সেই জন্য জাপানে বসবাসরত প্রবাসীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ৫ম আশিকাগা পিঠা
উৎসবের। গত ১২ ডিসেম্বর রোববার তোচিগি কেনের আশিকাগা সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি
কিতা কানতোর পক্ষ থেকে সুইয়ামা লুবনার উদ্যোগে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বরাবরের মতই এই আয়োজনের মুল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসীদের পিঠা খাওয়ার অতৃপ্তি
কিছুটা দূর করার পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
তুলে ধরাও।করোনার কারনে অন্যান্য বছরের তুলনায় করোনার বিধি নিষেধ মান্য করে
কিছুটা ছোট পরিসরেই আয়োজন করা হয় এবারের পিঠা উৎসব। জাপানের বিভিন্ন শহরের ৩৫
টি পরিবারের সদস্য সহ মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন এই পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পিঠা
উৎসবটি জাপানের কানতো অঞ্চলের বাঙালির এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। নারীদের সবার
পরনে ছিল একই রং এর শাড়ি আর পুরুষদের পরনে ছিল বাঙালির প্রিয় পোশাক
পাজামা-পাঞ্জাবি।মহান বিজয় দিবসকে মাথায় রেখে পুরুষদের পাঞ্জাবির রঙ নির্ধারণ
করা হয় সবুজ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন
প্রতিযোগিতা।মোট ২৬ জন প্রতিযোগী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে।সকল
প্রতিযোগীকেই পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করা হয়।
মধ্যাহ্ন ভোজনে বড়দের জন্য ছিলও বিফ বিরিয়ানি, কাবাব, ডিম ও সালাদ। ছোটদের
জন্য ছিল জাপানিজ কারি। মধ্যাহ্ন ভোজন রান্নার দায়িত্বে ছিলেন শিলা আলম, সুইটি
জাকির, সাবরিনা আজিম, মেহেজাবিন ইরা ,দিপা আলম ও লুবনা ।
করোনার বিধি নিষেধ মেনে হলের বাইরে খোলা মাঠে খাবার খাওয়ার ব্যবস্হা করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল পিঠা প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় পর্বের
শুরুতেই আসিকাগা পিঠা উৎসবের পিঠা প্রতিযোগিতার সম্মানিত বিচারক আসলাম খন্দকার
হীরার সুস্ততা কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে্র শুরুতেই ছিল রাফি ও মিমনুনের সুরা পাঠ।এর পর ছিল
মহিলাদের সমাবেত সঙ্গীত ‘সূর্যদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি’।তারপরেই ছিল
পুরুষদের সমাবেত সঙ্গীত ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করেন জাপানের বাংলাদেশ কমিউনিটির গুনি
শিল্পি নিপুণ তাবিয়া, সাবরিনা ও রেইন কারিম।কবিতা আবৃতি করেন সুপরিচিত
আবৃতিকার আয়েশা মিতু ও মেহেজাবিন ইরা। নৃত্য পরিবেশন করে ক্ষুধে শিল্পী আমিরা
তাহরিম, নাবা ও পুজা । বারাবরে মতই সবাই দর্শকরা দারুন উপভোগ করেন নৃত্য তিনটি।
সবার শেষে ছোট্ট সুইয়ামা তিরানা করে জাপানিজ গানের সাথে নাচ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর আরম্ভ হয় জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় "নিপুণ তাবিয়া"
পেইজের সৌজন্যে আসিকাগা পিঠা উৎসবের সব চাইতে আকর্ষণীয় পর্ব পিঠা প্রতিযোগিতা।
নিজ হাতের তৈরি পিঠা নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ১৬ জন প্রতিযোগী।
পিঠা প্রতিযোগিতায় ছিল পাঁচটি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের জন্য ছিল আলাদা আলাদা
নম্বর।বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কমিউনিটির পরিচিত দুই মুখ
লেখক-সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক ও দিদার কচি।বিচারকের একটি আসন মো. আসলাম
খন্দকার হিরার সম্মানে খালি রাখা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিচারকরা যখন বিজয়ীদের
নাম ঘোষণা করছিল তখন পুরো হলে পিন পতন নিরাবতা নেমে আসে। প্রতিযোগিতায়
বিচারকদের রায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন খোদেজা আক্তার মুক্তা।তিনি
তৈরি করেন দুধ ক্ষীর পুলি পিঠা। নারিকেলের পাকন পিঠা তৈরি করে প্রথম রানারআপ
নির্বাচিত হন মারিয়াম সাথী , মেরা পিঠা তৈরি করে দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত
হন নিগার সুলতানা দিনু। ঝাল ফুলি পিঠা তৈরি করে চতুর্থ স্থান আধিকার করেন ঊর্মি
কামাল।৫ম ও ৬ষ্ট স্হান অধিকার করেন আয়েশা মিতু ও ফারজানা দোলন। তাঁরা তৈরি
করেন যথাক্রমে গোলাপ পিঠা ও মুগ পাকন পিঠা।
বিজয়ী ৬ জনের হাতে পুরস্কার পুরুস্কার তুলে দেন এর নিপুণ তাবিয়া পেইজের
কর্ণধার নিপুণ তাবিয়া।
পুরস্কার হিসাবে ছিল বেশ কিছু কসমেটিক। চ্যাম্পিয়ন খোদেজা আক্তার মুক্তাকে
মুকুটও পড়িয়ে দেয় সুইয়ামা লুবনা।এছাড়াও সকল প্রতিযোগিকে বাংলাদেশ
কমিনিউটির পক্ষ হতে পুরুষ্কৃত করা হয়।
পিঠা উৎসবে ছিলো মহিলাদের পিলো গেইম।দারুন উত্তেজনার পিলো গেইমটি স্পনসর করে
জাপানের জনপ্রিয় “মনিকা'স অনলাইন শপ"। পিলো গেইমের প্রথম তিনটি পুরুষ্কার জিতে
নেয় যথাক্রমে ঊর্মি কামাল, মুন হায়দার ও মেহেজাবিন ইরা।পুরুষ্কার হিসাবে ছিলো
দুইটি শাড়ী ও ব্যাগ।বিজয়ী তিন জনের হাতে পুরুস্কার গুলো দেন “মনিকা'স অনলাইন
শপ" এর কর্ণধার মনিকা চন্দ।
এরপর ছিল পিঠা ভোজন। মজাদার প্রায় ২০ রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো হয় পর্বটি।
উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল ভাপা পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, নারিকেলের পাকন পিঠা,
দুধ ক্ষীর পিঠা, মিষ্টি পুলি পিঠা, মেরা পিঠা, পাটিসাপটা, মুগপাকন, চিতই পিঠা ,
ঝাল পুলি পিঠা। এছাড়াও ছিল দুই রকমের কেক, ডোনাস ও জাপানিজ গিউজা। পিঠা গুলো
তৈরি করেন আরেফিন মৌ, পার্সিয়া,আয়েশা মিতু , সাদিয়া, আঁখি, দোলন, ঊর্মি ,
ফারজানা আখিঁ, নীলাঞ্জনা, নিপুন , সাথী , মুক্তা, ডলি ও লুসি। পিঠা উৎসব উপলক্ষে
আসাধারন সুন্দর কেক দুটি তৈরি করেন সীমা ও চৈতী।
পিঠা উৎসবের সব শেষে ছিল অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাফেল ড্র। রাফেল ড্র চলার সময়
সবার মধ্যে ছিল চরম উত্তেজনা। পাঁচজন ছোট সোনামণি রাফেল ড্ররের বক্স হতে পাঁচটি
নাম তুলে।রাফেল ড্রতে পাঁচটি আকর্ষণীয় পুরুস্কারের মধ্যে প্রথম পুরুস্কার জিতে
নেন ইসতিয়াক শুভ।
পিঠা উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কাজী ইনসানুল হক, দিদার কচি ও রেজা মীর।
এছাড়াও উৎসবে উপস্হিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসী ব্যবসায়ী, লেখক, সাংস্কৃতিক
কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা।
বর্ণাঢ্য এই পিঠা উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন সুইয়ামা লুবনা। তাকে
সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করেন শিলা আলম, সুইটি জাকির, সাবরিনা আজিম, মেহেজাবিন ইরা,
দিপা আলম, মুন হায়দার, ফারজানা ইমু, ফারজানা আহমেদ,লুসি আহামেদ,ডলি খাঁন ,মারিয়াম
সাথি, ঊর্মি কামাল ও পার্সিয়া সহ অনেক ভাই ও ভাবিরা।
সাউন্ড সিস্টেম ও মিউজিকের দায়িত্ব পালন করেন এ এম রাহাত। রিসেপসনের গুরু
দায়িত্ব পালন করেন তুহিন তালুকদার,সেজান ও সৈকত।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকদের পক্ষ হতে আমন্ত্রিত অথিতিদের সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়
এবং পরবর্তিতেও সবাইকে পাশে থাকার আহ্ববান জানানো হয়। আমন্ত্রিত অথিতিদের পক্ষ
হতেও ভবিষ্যতেও ধারাবাহিক ভাবে উৎসব চালিয়ে যাওয়ার জন্য আয়োজকদের অনুরোধ
জানানো হয়।
নোমান সৈয়দ (রাজূ)
আসিকাগা সিটি, জাপান
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|