|
জাপানে দুর্গাপূজা ২০২০ পালিত
কমিউনিটি রিপোর্ট ।।
অক্টোবর ২৭, ২০২০ ।।
যে যে ধর্মই পালন করুক না কেন বাঙালী ভৌগলিক এবং আদর্শগত ভাবেই ধর্মপ্রাণ
এক জাতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে বৈশ্বিক মহামারী কোন কিছুই
বাঙালীর ধর্ম পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোভিড ১৯ সাড়া বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে
মহামারি হিসেবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ভেদাভেদ, ভৌগলিক অঞ্চল কোন কিছুই
রেহাই পায়নি করোনার ছোবল থেকে।
এতদ সত্বেও ধর্মপ্রাণ বাঙালী জাতি সৃষ্টিকর্তার কৃপা লাভের জন্য নিজ নিজ
ধর্ম পালনে সদা সচেষ্ট থাকেন। হউক না তা প্রবাসে।
করোনার প্রভাব পড়েছে জাপানেও। স্বাস্থ্যবিধি জাপানে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশী
মেনে চলা হয়। তাই , যে কোন সামাজিক আয়োজনে বেশ কিছু বিধি নিষেধ মেনে তবেই
আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়। ধর্মীয় আয়োজন ও তার বাইরে নয়।
তাই , জাপানে সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান আয়োজিত এবারের দুর্গা পুজা পালনের
আয়োজনটি ছিল কেবলই ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং শুধু মাত্র ধর্মীয় আচার পালনের
জন্য। দুর্গোৎসব না করে পালন করা হয়েছে ঘোট পূজা । করোনার এ সময়ে যতটা
সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শাস্ত্রমতে যা যা বলা হয়েছে শুধু তা -ই করা
হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশে দুর্গাপূজা ৫ দিন ধরে হলেও বিভিন্ন কারণে জাপানে একদিনে
সমস্ত আচার পালন করার মাধ্যমে নিকটবর্তী রোববার দিন পালিত হয়ে থাকে।
এবছর ২৫ অক্টোবর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সাথে
সামঞ্জস্য রেখে জাপানে পালিত হয়েছে দুর্গাপূজা ২০২০।
টোকিওর কিতা সিটি আকাবানে কিতা ফুরেয়াইকান-এ দিনব্যপী দুর্গা পূজা পালন করা
হলেও ধর্মীয় আচার ঠিক রেখে অনুষ্ঠান সূচীতে ব্যাপক পরিবর্তন রাখা হয়।
জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা
পূজায় প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। তবে
, পূজারী এবং অতিথীদেরকে ফল ফলাদি দেয়া হয়।
অতি সম্প্রতি জাপানে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন
আহম্মেদ , মিনিস্টার ও দুতালয় প্রধান ডঃ জিয়াউল আবেদিন এবং কাউন্সেলর মোঃ
জাকির হোসেন পূজায় উপস্থিত থেকে প্রবাসীদের আয়োজনে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের প্রবাসী
নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত থেকে পূজারীদের উৎসাহ প্রদান
করেন।
উল্লেখ্য , জাপানে নিয়োগ পাওয়ার পর এই প্রথম রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন
আহম্মেদ প্রবাসীদের কোন আয়োজনে অংশ নিলেন।
হিন্দু শাস্ত্র মতে দুর্গা নামের বুৎপত্তিগত অর্থ যিনি দুর্গ অর্থাৎ সঙ্কট
হতে ত্রাণ করেন। শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটির একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তাতে বলা
হয়েছে ‘দুর্গা’র ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক,
‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও ‘আ-কার’ ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ
ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
এ বছর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আশ্বিন মাসে। পঞ্জিকার
হিসাবে এবার আশ্বিন মাস 'মল মাস', মানে অশুভ মাস। কারণ মল মাসে পূজা-অর্চনা
কিংবা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় না। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর
পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। পূজা হচ্ছে কার্তিক মাসে। সেই হিসাবে এবার দেবী দুর্গা
'মর্ত্যে আসছেন' মহালয়ার ৩৫ দিন পরে।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের আশা মতে অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গার আরাধনার
মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে দূর হবে সকল পাপ। সমাজে ফিরে আসবে শান্তি। এবছর দেবী
দুর্গা আসছেন ঘোটকে। এতে রবি শস্য ভাল হবে। দেবী বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চরে।
এতে দূর হবে সকল অসুখ বিসুখ। দেবীর যাত্রার সময় সকল অসুখ বিসুখ ধূলোর সঙ্গে
উড়িয়ে নিয়ে যাবেন ।
তাই , এবছর বৈশ্বিক মহামারী এবং সমাজের সব অনাচার দূর করে সর্বত্র শান্তির
বার্তা নিয়ে আসার কামনা করে প্রার্থনার মাধ্যমে প্রতীকী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে
দুর্গাপূজার সমাপ্তি হয় ।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|