|
জাপানে বাংলাদেশী হালাল ফুড ব্যবসায়ীদের কাছে সবিনয় অনুরোধ-
নান্নু এমডিএস ইসলাম
আজকে আমার এই লেখায় কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ , হিংসা কিংবা বিদ্বেষ থেকে নয়।
বরং , একজন ব্যবসায়ী হিসেবে , একজন সমাজকর্মী , একজন সচেতন নাগরিক ,
শুভাকাঙ্ক্ষী এবং একই সাথে একজন ভোক্তা হিসেবে জাপানে ভোক্তা অধিকার
সম্পর্কে তাদের অবহিতকরনসহ সতর্কতা মূলক ম্যাসেজ হিসেবে গ্রহন করলে তারাই
উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস ।
জাপানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কম হলেও একসময় জাপানে হালালফুড ব্যবসাটা
পাকিস্তানিদের দখলেই ছিল । বর্তমানে একদিকে যেমন মুসলীম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা
যেমন বেড়েছে তেমনি একই সাথে অর্থ , বুদ্ধি এবং মেধার সমন্বয়ে জাপানব্যাপী
হালালফুড ব্যবসার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশীরা।
এতদসত্বেও অতীব দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি অতি সম্প্রতি হালাল ফুড
ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাহাড়সম । অভিযোগ গুলি যে অসাড় তা কিন্তু
নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য প্রমান স্বচিত্র অভিযোগ আমি সহ আমার জানামতে
অনেক সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।
অভিযোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কয়েকটি হলো মাংসে হাড় এবং মাংসের
আনুপাতিক হার , মাছের সঠিক পরিমাপ উল্লেখ না থাকা এবং বারবার স্পাইস এর
মেয়াদ রদবদল নিয়ে।
মাংস সাধারনত দুই ভাবে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। হাড় সহ এবং হাড় ছাড়া ।
হাড়সহ মাংস অর্থ মাংসে হাড় ও থাকবে। আনুপাতিক একটা হারও থাকবে। কিন্তু
অতীব দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে হাড়সহ মাংসে হাড়ের পরিমান এতোই
বেশী যে হাড়ের মাঝখান থেকে মাংস খুঁজে নিতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন
হাড় থাকে যার সাথে মাংসের কোন সম্পর্কই থাকেনা, যদিও উল্লেখ করা থাকে
‘বোনলেস’ এবং ‘উইথ বোন’ যার অর্থ হাড়সহ। মাংসের সংযোগ ছাড়া হাড় নয়।
কোয়ালিটির কথা না হয় বাদই দিলাম।মাছের প্যাকেটের গায়ে পরিমান উল্লেখ
থাকে না। নিয়ম অনুযায়ী প্যাকেটের ভিতরে মাছের পরিমানের কথা উল্লেখ থাকার
কথা। অনেকেই প্যাকেটের ভিতর এক কিলোগ্রাম বা ৫০০ শত গ্রাম মনে করে কিনে
থাকেন। কিন্তু ভিজানোর পর খুবজোর ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের স্পাইস এর প্যাকেটের উপরের মেয়াদ উত্তীর্ণের লেবেল যে
কয়েকবার রদবদল করা হয়ে থাকে তা সহজেই অনুমেয় ।
আর এর সবগুলোর গায়েই প্যাকেটজাতের দিন তারিখ এবং ব্যবহারের সময় সীমা
উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা উল্লেখ থাকেনা। কিছু
কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারের সময় উল্লেখ থাকলেও কোন এক অজানা কারনে তা বদল হয়ে
নতুন তারিখ বসানো হয়ে থাকে । নতুন তারিখটা ভালভাবে পড়া গেলেও অন্যান্য
লিখা পড়তে নাসার টেলিস্কোপের প্রয়োজন হতে পারে , এমন অভিযোগ প্রায়শই
শুনা যায় ।
আমি ঢালাওভাবে সবার বিরুদ্ধ্বে অভিযোগ করছিনা । যারা এসব কাজের সাথে জড়িত
তাদের জ্ঞ্যাতার্থে জানাচ্ছি, জাপানের ভোক্তা অধিকার আইন কিন্তু খুব
শক্তিশালী । যদি জানা না থাকে তাহলে এখনই জেনে নিন প্লিজ ।
জাপানে কাস্টমার কে বলা হয় “কামিসামা”। অর্থাৎ খদ্দের হচ্ছে দেবতা তুল্য।
তাদের কল্যাণেই ব্যবসা খদ্দের না থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকবেনা। তাই ,
খদ্দের হচ্ছে দেবতা, আর এই কারনেই ভোক্তা অধিকার আইন এবং তার প্রয়োগ এতো
শক্তিশালী ।
এর ব্যত্যয় ঘটলে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। ব্যক্তি সম্পর্ক , হয়তো
মুখ চেনা কিংবা দেশের সুনামের কথা চিন্তা করে কেহ তা করেন না। কিন্তু এভাবে
আর কতোদিন ? স্বার্থে আঘাত লাগলে , মানুষের পীঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন
আর ব্যক্তি সম্পর্ক ব্যক্তি সম্পর্কে থাকে না। ব্যক্তি সম্পর্কের কথা ভুলে
গিয়ে একদিন ঠিকই সঠিক স্থানে নালিশ জানাবে। আর তখনি হবে বিপত্তি । এমন কি
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপও বেড়িয়ে আসতে পারে। আর তখন নিজের সন্মানহানীর
খেসারত যে গুনতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা । সাথে দেশের সন্মান
ভূলুণ্ঠিত হবে। ভবিষ্যতে কোন বাংলাদেশী যদি হালাল ফুড ব্যবসার সাথে জড়িত
হ’তে চান তবে তাকে অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ।
কাজেই সময় থাকতে সাধু সাবধান হয়ে যান। নিজেকে নিরাপদে রেখে দেশের সুনাম
অক্ষুন্ন রাখার জন্য অনুরোধ জানাই। ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার একজন
শুভাকাঙ্ক্ষী, একজন সচেতন নাগরিক , একজন সমাজ কর্মী এবং একজন ভোক্তা হিসেবে
আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ। আমার এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে যদি নিজেকে
সঠিক পথে পরিচালিত না করে হালাল ফুড ব্যবসা কে হারাম ব্যবসায় অবিরত থাকেন
তাহলে একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
আর আমি যদি না-ও যাই তবে , কেউ না কেউ অবশ্যই যাবে বলে সার্বিক বিবেচনায়
আমার বিশ্বাস ।
বি,দ্র - এত দ্বারা এ-সংক্রান্ত কারোর কোন অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে
প্রমান সহ পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানাই,
ইমেইল করবেন :
nannumd@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|