প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর: প্রত্যাশার হিসাব নিকাশ

 

 

 

কাজী ইনসানুল হক

উপদেষ্টা সম্পাদক, কমিউনিটি নিউজ
 

 

Image result for sheikh hasina vs Shinzo Abe

তিন দিনের সফরে জাপানে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনযোর আমন্ত্রনে ও ‘ফিউচার অব এশিয়া’বিষয়ক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি।২৮ মে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে জাপান পৌছে সন্ধায় নাগরিক সম্বর্ধনা,২৯ তারিখ প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর সাথে সাক্ষাৎ ও দ্বিপাক্ষীয় আলোচনা ও সম্ভাব্য চুক্তিসাক্ষর।
৩০ মে প্রধানমন্ত্রী ‘ফিউচার অব এশিয়া’ কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেনও জাপান থেকে সৌদি আরব যাবেন। ৩১ মে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ও ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী শহর মক্কায় আয়োজিত ১৪তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। একমাত্র নারী সরকার প্রধান হিসেবে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। সেখানে তার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।সৌদি আরব সফর শেষে ফিনল্যান্ড যাবেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। এ বছর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ঈদ করছেন না।

ওডিএ সহযোগিতা:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপান ৪০তম ওডিএ প্যাকেজের জন্য আলোচনা করছে।’ এই প্যাকেজের আওতায় জাপান বাংলাদেশকে ২২০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে যা মাতারবাড়ি বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যবহার হবে। এছাড়া ম্যাস র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট-এর একটি অংশ বাস্তবায়নে এখান থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে জাপানের অতিরিক্ত এই আড়াই বিলিয়ন ডলার বা ২২ হাজার কোটি টাকা দেয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা সই হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ২৯ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনযোর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে সর্বশেষ জাপান সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফিউচার অব এশিয়া


জাপানের মর্যাদাবান মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিকেই ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও আগামী ৩০ ও ৩১ মে টোকিওতে ‘ফিউচার অব এশিয়া ‘আন্তজার্তিক কনফারেন্সের ‘আয়োজন করছে। এটি ২৫ তম আয়োজন।সেখানে বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের সাথে বিশেষ অতিথী হিসেবে বক্তৃতা করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফিলিপিনসের প্রেসিডেন্ট রডরিগ্রো রোয়া দুতারতে,চারজন প্রধানমন্ত্রী,মালেয়েশিয়ার মহাথির বিন মোহাম্মদ,লাওসের প্রধানমন্ত্রী থংলউন সিসোলিথ,কম্বেডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভিয়েতনাম ও সিংগাপুরের উপ প্রধানমন্ত্রী সহ বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের বক্তৃতায় মুখর থাকবে দুটো দিন।এটি one of the most dignified global conference of Asia হিসেবে পরিচিত।
৩০ মে প্রথমদিন Nikkei Asian Review এর প্রকাশক ও ওসাকা ব্যুরো প্রধান ওয়াতানাবে সোনোকোর সন্চালনে কি নেট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মহাথির মোহাম্মদ ও শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য দ'ুদিনের সম্মেলনে ৬৮৪০০ ইয়েন মুল্যমানের সব আসনই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে যায়।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অতীতের তিনবার জাপান সফরের সময় দূই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও দ্বিপাক্ষিক চূক্তি সাক্ষর অনুস্ঠান কভার করার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে প্রবাসী হিসেবে বিশেষ পাওয়া বলে মনে করি।

একজন প্রবাসী হিসেবে এবং অতিক্ষুদ্র একজন মিডিয়াকর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে আমি আমার প্রিয় বাংলাদেশের জন্য তিনটি প্রত্যাশা আশা করি।

এক:
ভ্রমন সতর্কতা
 

 

রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার পর পর বাংলাদেশে ভ্রমন সতর্কতা জারি করে জাপান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাত জাপানি নিহত হওয়ার পর সেই সতর্কতা পাকাপাকি হয়।ওই সতর্কতা এখনও বহাল রয়েছে।দু:খজনক হলেও বাংলাদেশের অবস্হান আফগানিস্হান ও পাকিস্হানের কাতারে।২০১৬ সালের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু জাপান এখনও ভ্রমণ সতর্কতা বিষয়টি বজায় রেখেছে।ওই সময়ে অনেক পশ্চিমা দেশ ভ্রমণ সতর্কতা জারি করলেও তারা পর্যায়ক্রমে বিষয়টি উঠিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হলেও ওই দেশের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা দেয়নি জাপান। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে তারা কেন যেন এখনও উদ্বিগ্ন। সরকার থেকে বহু চেষ্টা করেও জাপানের সিদ্ধান্ত পাল্টানো যায়নি।গেল বছর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জাপান সফর শেষে জানালেন জাপান অবিলম্বে ভ্রমন সতর্কতা তুলে ফেলার আশ্বাস দিয়েছে।কিন্তু না কিছুই হয়নি।

আশা করি এবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা করা হবে।আমরা বাংলাদেশের এই লজ্জাজনক অবস্হানের পরিবর্তন চাই।

দুই:
জাপানের সম্ভাব্য শ্রমবাজার।
 


জাপানে শ্রমঘাটতি মেটাতে হাজারো বিদেশি শ্রমিককে নিয়োগের সুযোগ রেখে এক নতুন আইন অনুমোদন করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। গত এপ্রিল থেকে দেশটির অবকাঠামো, কৃষি ও নার্সিংয়ের মতো পেশায় বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।বিদেশী শ্রমিক নেওয়ার জন্য সম্প্রতি এশিয়ার নয়টি দেশকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে জাপান। এসব শ্রমিককে তারা অবকাঠামো নির্মাণ, রেঁস্তোরা, কৃষি এবং নার্সিংয়ে নিয়োগ দেবে। এসব খাতে আগামী ৫বছরে জাপানে কমপক্ষে ৩লাখ ৪৫হাজার জনবল লাগবে।জনবল নিয়োগের প্রাথমিক তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো ঃ কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। তবে কোন দেশ থেকে কত শ্রমিক নেওয়া হবে তা এখনও জানানো হয়নি। দূর্ভাগ্যক্রমে এ তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
জাপানের শ্রম বিষয়ক কর্মকর্তাকে আমার দেশ বাংলাদেশ নেই কেন প্রশ্ন করলে উনি এক লাইনের একটা উত্তর দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিলেন। তার উত্তর ...আশিয়ানভূক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের নেওয়ার বিষয়ে আমাদের আগ্রহ ...।
শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশীদের পক্ষে জাপানী ক্ষূদ্র শিল্প মালিকদের পক্ষ পাতিত্থ আছে জানি ।তাই আশিয়ানভুক্ত না হয়েও সামান্য সংখার বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়াতে রাজী করানোটা কি খূউব কঠিন কাজ?
কেন দূদেশের মতো এত সুসম্পর্ক থাকতেও বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে তার কারন কূটনৈতিক ব্যার্থতা বলা কি অন্যায় হবে? প্রবাসে আড়াই যূগের অবস্হান ও জাপানের পূর্ববর্তী রাষ্ট্রদূতদের দু'চারজনের কর্মদক্ষতার প্রতি বিশ্বাস রেখে বলা যায় তারা হয়তো পারতেন।

প্রশ্ন করেছিলাম বাংলাদেশের পরম বন্ধু, একজন জাপানী মানবতাবাদী ব্যাক্তি যিনি প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে ৪০ বছর কাজ করছেন।তার উত্তর ঔ নয়টি দেশের তূলনায় আপনার দেশে মানব শক্তি রফতানীতে সব চেয়ে বেশী দুর্নীতি হয় তাই হয়তো জাপান ঝুঁকি নিতে চায় না!

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বিষয়টি নিয়ে জোড় কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হলে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

তিন:
মেগাপ্রকল্প সমূহ জাপানী কন্টাক্টর নিয়োগ:


 


১৯৯৫ সালের পর, অর্থাৎ প্রায় দুই যুগ পর নির্ধারিত সময়ের আগেই
বাংলাদেশে কোনো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ শিরোনামে প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে শেষ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য যে টাকা বরাদ্দ ছিল, সেই অর্থের চেয়েও কম খরচে নির্মাণ কাজ শেষ করেছে নির্মাণকারী জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এই একটি খবরই প্রমান করে জাপানীদের সততা। তাই সম্ভব হলে জাপানীদের দিয়ে বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলো করানো হোক সেক্ষেত্রে কাজটি তুলনামূলক ভেজালমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত হবে । কমিশন বানিজ্য,ব্যায় বাড়ানো, আমলা, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি সহনীয় মাত্রায় থাকবে বলে
মনে হয়।

নাগরিক সম্বর্ধনা

দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রবাসীরা আনন্দিত হন।মিডিয়ায় নিজের প্রধানমন্ত্রীর নিউজ দেখলে চমকিত হন।দলের পরিচয় ভূলে তিনি হয়ে ওঠেন সবার প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নাগরিক সম্বর্ধনার আয়েজনগুলো হয়ে ওঠে দলীয় সম্বর্ধনায়।জাপানের অতীতের বেশ ক'টা সম্বর্ধনায় উপস্হিত হয়ে সেটাই পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসার আসন নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়,লটারীতেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দু:খ হয় যখন দেখি দলের জন্য নিবেদিত প্রানরা অনেকসময় যোগ্য সম্মান পাননা,হাইব্রিডরা তাদেরকে ছাড়িয়ে যান।
এবার আমন্ত্রিত অতিথীদের লিস্ট করেছেন দুই ভাগে বিভক্ত স্হানীয় দলনেতারা,সেটি কাটছাট করেন দূতাবাস। সেখানে স্হান হয়না মুক্তিযোদ্ধাদের,প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা অজিত বড়ুয়া আমন্ত্রন না পাওয়ার কথা জানলেন এইমাত্র। দুতাবাসকে সমালোচনানাকারী সাংবাদিকরা বাদ পড়েন স্বাভাবিক ভাবে।রাষ্ট্রদূতকে তোয়াজকারীরা আমন্ত্রিত হন,এক্সট্রা কার্ড পান।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরে আমরা যে কোন সিদ্ধান্তকে সাধূবাদ জানাই।কিন্তু দূতাবাসের স্বেচ্চাচারিতা? তার কি জবাব?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার জাপান সফর সফল হোক। শুভ কামনা।
 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]