জাপানের গুম্মা তে বর্ষবরণ উৎসব উৎযাপিত
কমিউনিটি রিপোর্ট ।।
এপ্রিল ১৮, ২০১৯ ।।
জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের নববর্ষ উৎযাপন সাধারণত টোকিওতে
আয়োজিত টোকিও বৈশাখী মেলা কেন্দ্রিক | জাপানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব
বাঙ্গালী এখানে সমবেত হয় বৈশাখ উৎযাপনের জন্য |
ভেন্যু সংক্রান্ত জটিলতায় এই বছর ১৪ ই এপ্রিল টোকিও বৈশাখী মেলার পরিবর্তে
২১ শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে |
এদিকে ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন রবিবার থাকাতে গুম্মা , সাইতামা ও
তোচিগি তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা গুম্মা প্রিফেকচার এর ওইজুমি নামক
স্থানে প্রথমবারের মত ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আয়োজন করে " বর্ষবরণ উৎসব
১৪২৬ ও মেলা " | আয়োজক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে প্রায় সবার ছিল টোকিওর
বাইরে বৈশাখ উৎযাপনের প্রথম অভিজ্ঞতা |
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোকিও থেকে আগত বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক,
শিক্ষক, ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ | অনুষ্ঠানের প্রধাণ
আকর্ষণ ছিল জাপানীজ শিল্পীর বাংলা ব্যান্ড " বাজনা বীট " এর শিল্পী মায়ে
ওয়াতানাবে ও শুনসুকে মিজুতানি এর উপস্থিতি |
দুপুর ১২ টায় মোহাম্মদ শাহাদাত ও আয়ান, পিতাপুত্রের কোরআন তেলোয়াত দিয়ে শুরু
হয় অনুষ্ঠান | তারপর উপস্থিত সব শিশু কিশোর বাংলাদেশের পতাকা হাতে মঞ্চে উঠে
আসে এবং তাদেরকে নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেষণ করেন অত্র অঞ্চলের বাঙ্গালী
কম্যুনিটির জনপ্রিয় শিল্পী রাবিতা সুলতানা নওশি |
অতঃপর মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও
বাজনা বীট এর সদস্যদেরকে |
সম্মানিত বিশেষ অতিথিবৃন্দের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট
ব্যবসায়ী জনাব শাহীন চৌধুরী, টোকিও মেলা কমিটির সদস্য জনাব মোহাম্মদ জসিম,
প্রবাসী সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, টোকিও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গুণীজন
মুন্সী রেনু সুলতানা এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা জনাব
আজাদ মুন্সী |
আয়োজকদের মধ্য থেকে বর্ষবরণের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনাব আশফাকুর রহমান
লাকী ও মৌরি বড়ুয়া |
বক্তব্যের পালা শেষে মঞ্চে উঠে আসে বাজনা বীট এর শিল্পী মায়ে ওয়াতানাবে ও
শুনসুকে মিজুতানি এবং একে একে পরিবেষণ করেন "ধন ধন্য পুষ্পে ভরা", "আমি
বাংলায় গান গাই", ব্যান্ড এর মৌলিক গান "তোমার উজ্জ্বলতার ছোঁয়ায়" ও
সর্বশেষ পরিবেষণা কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে "চলো বদলে যাই"|
দারুণ উপভোগ্য ছিল এই দুই শিল্পীর বাংলা সংগীত পরিবেশনার পর উদ্বোধন করা হয়
গুম্মা প্রিফেকচার এর প্রথম ইনডোর বৈশাখী মেলা | বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সাথে
নিয়ে লাল ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধন করেন বাজনা বীট এর দুই শিল্পী |
সীমিত পরিসরের এই ইনডোর মেলায় স্টল ছিল মোট আটটি | বাচ্চাদের খেলনা ও
খাবারের স্টল, মিষ্টির স্টল, জুয়েলারী ও শাড়ির স্টল, আর্ট একজিবিশন এর স্টল
ছাড়াও ছিল কিওদাই রেমিট্যান্স ও গিয়াস ট্যুরস & ট্রাভেলস এর স্টল সমূহ |
মেলার স্টলগুলোতে ছিল অতিথিদের উপচে পরা ভিড় , তার মাঝেও চলতে থাকে উৎসবের
ইভেন্টগুলো |
নাট্যকার সালাহউদ্দিন জাহিদ রচিত বৈশাখের বিশেষ নাটিকা " ভাবী ও বৈশাখ " এ
অনবদ্য অভিনয় করে প্রশংসিত হন সুমনা ভাবী ও ফাতেমা লুৎফর চম্পা ভাবী |
মধ্যাহ্ন ভোজন এ প্রায় ২২০ জন অতিথির জন্য ভাবীদের তরিকৃত মজাদার সব
মেন্যুর মধ্যে ছিল ছিল সাদা ভাত, ইলিশ মাছ, হরেক রকম ভর্তা, কাবাব, মুরগির
মাংস, গরু ও খাসির মাংশ |
১ ঘন্টা মধ্যাহ্ন ভোজন এর বিরতীর পর শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধ | এ পর্বে সংগীত
পরিবেশন করেন কারাওকে মাস্টার হিসেবে পরিচিত জনাব সোহেল জায়েদি, বাপ্পি,
মিন্টু বড়ুয়া, সাবরিনা, রাবিতে সুলতানা নওশি, রাজু, নাঈম ও দৈত্ব সংগীত
পরিবেশন করেন সুমনা ও সোহাগ দম্পতি | অনুষ্ঠানের টোটাল সাউন্ড সিস্টেম ও
কারাওকে ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জনাব সোহেল জায়েদি |আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন
আয়েশা সিদ্দিকা মিতু |
সবার অংশগ্রহণে ছিল আকর্ষণীয় কুইজ | ৪ টি ধাপ অতিক্রম করে প্রায় ১৬০ জনের
মধ্যে তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয় | প্রথম স্থান অধিকার করেছেন আয়েশা সিদ্দিকা
মিতু | বরাবরের মতোই পর্বটি ছিল শিক্ষামূলক ও আনন্দদায়ক |
বয়সভিত্তিক শিক্ষা কার্য্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের ইভেন্ট এ ছিল শিশুদের
সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতা ও খেলা | পরিচালনায় ছিলেন রওশন আফরোজ রুম্পা |বিজয়ী
ছাড়াও উপস্থিত প্রায় ৬০ জন শিশু কিশোরদেরকেই পুরস্কৃত করা হয় |
ভাবীদের প্রতিযোগিতায় ছিল টাই বাঁধা প্রতিযোগীতা | এতে প্রতিযোগিনীরা যার
যার স্বামীর গলায় টাই বেঁধে দেয় | প্রথম স্থান অধিকারিনী শিলা ভাবী |
ভাইদের জন্য ছিল মজার ইভেন্ট দরি টানাটানি ও মোরগ লড়াই | সবাই যেন কৈশোরে
ফিরে গিয়েছিলো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে | প্রথম স্থান অধিকারী মোহাম্মদ
আলম |
নিয়মিত সদস্যদের মাঝে যারা কখনোই মঞ্চে আসেননা তাদেরকে নিয়ে বিশেষ পর্ব
পরিচালনা করেন আয়েশা সিদ্দিকা মিতু | প্রত্যেকের জন্যই থাকে পুরস্কারের
ব্যবস্থা |
যে সমস্ত ভাবীরা কষ্ট করে খাবার ও নাস্তা তৈরী করেছেন তাদের প্রত্যেকের
জন্য এবং যারা নতুন অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করা হয়,
পুরস্কৃত করা হয় অনুষ্ঠানের সবচেয়ে মনোযোগী দর্শক এবং সবার আগে উপস্থিত
পরিবারকেও |
দুপুর ১২ টায় শুরু হওয়া অসংখ্য ইভেন্টে সাজানো এই অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সন্ধ্যা
সাড়ে ৭ টায় |
জাপানের কর্মব্যস্ত জীবনধারায় বাঙ্গালীর অন্যতম জাতীয় এই উৎসবটি বাংলাদেশের
সাথে একই দিনে নতুন পরিবেশে এতো ধুমধামের সাথে উৎযাপন করাটা ছিল সত্যি সবার
জন্য নতুন অভিজ্ঞতা এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে | অতিথিদের অনুরোধে প্রতি বছরই
টোকিওর বাহিরে অত্র অঞ্চলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বর্ষবরণ উৎযাপন করার
সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচিত হলো |
-হাফিজ কবির খান
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |