টোকিওর বাইরে বিজয় দিবস উদযাপন
হাফিজ কবির খান নাঈম ।।
ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮ ।।
মাত্র তের হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী দেশ জাপান | এখানকার বাঙালী সাংস্কৃতিক
পরিমন্ডল শুধুমাত্র রাজধানী টোকিওকে ঘিরে | কিন্তু স্থায়ী ভাবে বসবাসরত নতুন ও
শিক্ষিত জেনারেশন ছড়িয়ে আছে জাপানের ৪৭ টি প্রিফেকচারে |
তারা চায় জাপানীজ স্কুল-কলেজে পড়ুয়ারত তাদের সন্তানদেরকে তাদের
ধর্ম-কৃষ্টি-কালচার ও ভাষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে দুর পরবাসে থেকেও নব
প্রজন্মকে শিকড়ের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরী করে দিতে চায় |
সেই লক্ষ্যে গত ১৬ ই ডিসেম্বর তোচিগি জেলার আশিকাগায় গুন্মা , তোচিগি ও সাইতামা
অঞ্চলের কিছু অদম্য প্রতিভাবান ও সংস্কৃতমনা ভাই বোনদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়
বিজয় উৎসব ২০১৮ |
বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্তিতে প্রবাসে থেকে পরিবার সহ বিজয় দিবস উৎযাপন করাটা ছিল
ভীষণ উপভোগ্য ও অনেকের জন্যই প্রথম অভিজ্ঞতা |
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
অনুষ্ঠানের প্রতিটি ইভেন্ট ছিল চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয় |
সর্বপ্রথম ছোট বন্ধু
হৃত্বিকার কোরআন তেলোয়াত দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনাব
মিন্টু বড়ুয়া এবং আসমাউল হুসনা লিজা|
তৎপরবর্তী বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাপানীজ বিশ্ব বিদ্যালয়ে কর্মরত, বিশিষ্ট
সংগীত শিল্পী জনাব সোহেল জায়েদি, টোকিও বৈশাখী মেলার সদস্য মোঃ জসিম, টোকিওর
বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনে সক্রিয় মুখ জনাবা মুন্সী আর সুলতানা ওরফে মিসেস রেনু,
শ্রদ্ধাভাজন লেখক ও সাংবাদিক জনাব প্রবীর বিকাশ সরকার | প্রধাণ অতিথির বক্তব্য
রাখেন শ্রদ্ধাভাজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জে ও সি ভি / জাইকা এর বাংলা ভাষা
শিক্ষক, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমী জাপান এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান
উপদেষ্টা জনাব আজাদ মুন্সী |
বক্তব্যপালা শেষ হবার পরপর
মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দেয়া হয় | অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে
সম্মাননা জানানোর পর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় দুই গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা
সন্তান মালিহা পারভীন জয়ী ও ফারহানা আফরুজ মিতু'কে | পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন
আয়েশা সিদ্দিকা মিতু |
তারপর, বিজয়ের গান " এক নদী রক্ত পেরিয়ে " নিয়ে মঞ্চে আসেন সুরেলা কণ্ঠশিল্পী
রাবিতা সুলতানা নওসি |
" জয় বাংলা বাংলার জয় " ও " প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ " দুটি
দেশাত্মবোধক গান পরিবেষণ করেন যথাক্রমে পুরুষ ও নারী সদস্যরা | বাংলাদেশের
ক্ষমতা পালাবদলে দলীত হওয়া এই অসাধারণ দেশাত্মবোধক গান দুটি একই মঞ্চে পরিবেষণ
সম্ভবতঃ প্রথম | দেশাত্মবোধক গান কখনো কারো / কোন নির্দিষ্ট দলের সম্পদ হতে
পারেনা - আয়োজকদের এই পরিকল্পনা প্রশংসাযোগ্য |
তারপর থাকে বাচ্চাদের চিত্রাংকন ও বর্ণাঙ্কণ প্রতিযোগিতা যেখানে প্রতিটি শিশু
কিশোর নিজের পছন্দের আর্ট এর পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ৩ টি বাংলা বর্ণঅংকণ ও
বাংলাদেশের পতাকা অংকন করেছে | বিচারক হিসেবে ছিলেন সাবরিনা ভাবী , ইমু ভাবী ও
সাথী ভাবী এবং বিজয়ী ৬ জনের হাতে পুরস্কার বিতরণ করেন গুণী শিল্পী শাম্মী বাবলি
আপু |
বাচ্চাদের চিত্রাংকনের পাশাপাশি দারুণ সম্ভাবনাময় চিত্রশিল্পী সাবরিনা ভাবীর
আর্ট একজিবিশন এর আয়োজন করা হয় | উনার চিত্রকর্মে মুগ্ধতা প্রকাশ করে অন্য
উচ্চতায় নিয়ে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধাণ অতিথি / বিশেষ অতিথিবৃন্দরা |
মধ্যাহ্ন ভোজনে ছিল খাঁটি বাঙালী মজাদার খাবার সাদা ভাত, হরেক রকম ভর্তা, বীফ ,
চিকেন, সবজি, কাবাব |
মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে শিশু কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় জাপানীজ ভাষায়
অভ্যস্ত শিশুরা বাংলা বর্ণমালা, বাংলায় আত্মপরিচয় ও বাংলা কবিতা/ ছড়া/ গান/ সূরা
এর পরিবেষণ এ ফুটে উঠেছে দেশাত্মবোধ |
এ পর্ব পরিচালনা করেন রোশান আফরোজ রুম্পা ভাবী |
শিশুদের ইভেন্ট শেষে থাকে মজার এবং শিক্ষণীয় প্রশ্নোত্তরে কুইজ পর্ব |
শেষার্ধে থাকে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান | বলে নেয়া দরকার অনুষ্ঠানের
কনসার্ট লেভেল সাউন্ড সিস্টেম ও কারাওকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আয়োজকগণ যার কাছে
চিরঋণী তিনি হচ্ছেন সবার প্রিয় সংগীত শিল্পী ও সঙ্গীতে অনুপ্রেরণাদানকারী জায়েদি
সোহেল ভাই |
অসাধারণ সব গান পরিবেশিত হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত | মাঝে নাট্যকার সালাহউদ্দিন জাহিদ
রচিত নাটিকা " টক শো " মঞ্চস্থ হয় | বক্তব্য নির্ভর কমেডী এই নাটিকাটির শেষাংশে
থাকে প্রবাসীদের জন্য চমকপ্রদ মেসেজ যে , ব্যায়বহুল জাপানের অনেক অপ্রয়োজনীয় বা
সৌখিন ব্যায় একটু কমিয়ে জমা করলে মাস শেষে যেই এমাউন্ট দাঁড়াবে, জাপানের হিসেবে
খুব বড় কিছু না হলেও, সেই এমাউন্ট সবাই একত্রিত করে আমরা বাংলাদেশের এতিম,
দুস্থ ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে পারি পক্ষান্তরে হবে দেশের উন্নয়ন | অভিনয়
করছেন মনসুর আহমেদ মিলন, মোঃ শাহাদাৎ, গোলাম মোস্তফা ও মোঃ সোহানুর রহমান সোহাগ
|
ভাবীদের তৈরিকৃত হরেক রকম মুখরোচক পিঠা ও নাস্তা পরিবেষণ চলে সেই সাথে আরো থাকে
ভাবীদের কুশন পাস্ প্রতিযোগিতা |
সদ্য প্রয়াতঃ বাংলা সংগীতের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতির
উদ্দেশ্যে ট্রিবিউট সং " চলো বদলে যাই " সবাই একসাথে গেয়ে শেষ হয় গুন্মা ,
তোচিগি, সাইতামা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত সর্বপ্রথম বিজয় উৎসব ২০১৮ |
পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালন ও পরিচালনায় ছিলেন লেখক নিজে |
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |