|
জাপান প্রবাসীদের দুর্গোৎসব পালন
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। অক্টোবর ২৩, ২০১৮ ।।
বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে সনাতন ধর্মালম্বীদের এই উৎসবকে সার্বজনীন দুর্গাপূজা বা
দুর্গা উৎসব হিসেবে অভিহিত করা হয়। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এটাকে শরৎকালের
বার্ষিক মহা উৎসব হিসেবে ধরা হয় বলে একে শারদীয় উৎসবও বলা হয়। কার্তিক মাসের
দ্বিতীয় দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত এই উৎসবকে মহালয়া, ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী,
মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও দশমী নামে পালন করা হয়। অকালে বা অসময়ে দেবীর আগমন বা
জাগরণ বলে বসন্তকালের এই উৎসবকে বাসন্তী পূজা বা অকালবোধনও বলা হয়।
দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ পূজা শুধু বাঙালি
হিন্দুদের ভেতরই সীমাবদ্ধতা নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্ডি পেরিয়ে দুর্গোৎসব
আজ বাঙালি জাতির এক অনন্য উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে সকলের মধ্যে গড়ে উঠে
এক সৌহার্দ্য-প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন। অতি সম্প্রতি তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ধর্মপ্রাণ বাঙ্গালী জাতী জাপানেও নিয়মিতভাবে পালন করে থাকে এ দুর্গোৎসব।
প্রতিবছরই এই আয়োজনের পিছনে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি কাজ করে থাকে। এই জন্য
গঠিত হয়েছে সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান। বাংলাদেশি হিন্দু সমাজই এর মূল
উদ্যোক্তা।
সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপানের এবারের আয়োজনটি ছিল ২৩তম। এই ২৩তম আয়োজন উপলক্ষে
টোকিওর কিতা সিটি তাকিনোগাওয়া কাইকান কে সজ্জিত করা হয়েছিল অস্থায়ী পূজামণ্ডপে।
ঢাক, ঢোল, কাঁসি, শঙ্খ, শানাইয়ের বাজনায় সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
দূর থেকেও তা শোনা যায়।
২১ অক্টোবর ২০১৮ রোববার অস্থায়ী এই পূজামণ্ডপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঢল নেমেছিল।
বাংলাদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয় জাপানিজ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালের
হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজারি, ভক্ত, সুহৃদ এবং দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে
ওঠে পূজামণ্ডপ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির প্রবাসী বাংলাদেশি
মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব সম্প্রদায়ের লোক পূজায় অংশ নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন।
জাপানী অতিথিদের পদচারনার ও কমতি ছিলনা পূজা মণ্ডপে ।
বেলা ১১টায় শঙ্খধ্বনির সঙ্গে উলুধ্বনি দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও দুপুর
২ টায় অঞ্জলি দেয়ার পর প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে তা পরিপূর্ণতা পায়। মোট তিনবার
সমবেতভাবে অঞ্জলি দেয়া হলেও অনেকে আবার দেরি করে আসার কারণে পারিবারিকভাবে, কেউ-বা
ব্যক্তিগতভাবেও অঞ্জলি প্রদান করেন। ভোগ পর্বও সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
অপরাহ্ণ ৫টা থেকে শুরু হয় পূজাবিষয়ক ধর্মীয় আলোচনা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি
হিসেবে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বিশেষ শুভেচ্ছা প্রদান করেন ।
তনুশ্রী গোলদার বিশ্বাসের উপস্থাপনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সার্বজনীন পূজা
কমিটি জাপানের সভাপতি সুনীল চন্দ্র রায়। সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ, এবং সহ
সাধারন সম্পাদক শ্রী অঞ্জন দাস ।
পূজাবিষয়ক ধর্মীয় আলোচনা করেন উপদেষ্টা শ্রী সুখেন ব্রহ্ম (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)।
ববিতা পোদ্দারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথমেই সঙ্গা ঘোষ এর নৃত্ত
পরিবেশনা দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয় । এরপর শুরু হয় ছোটদের পর্ব। ছোট ছোট
ছেলেমেয়েরা পাহাড়িয়া পোশাকে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন শ্লোক, , মন্ত্র পাঠ, আবৃত্তি,
নাচে , গানে অতিথি দর্শকদের মাতিয়ে রাখে।
বরাবরের মতো এবারও স্থানীয় প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন উত্তরণ পূজা উপলক্ষে
ভক্তিমূলক গান এবং কীর্তন পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হলে শুরু হয় আরতি। আরতিতে ঢাকের শব্দে ধুনচি-ধুনট হাতে
নৃত্যের তালে তালে বৌদিরা এবং প্রজন্ম একসঙ্গে নেচেগেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।
সিঁদুর খেলায় মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও রঙিন করা হয়। এরপর মিষ্টিমুখ ও
আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে বিষাদের ছায়ায় দেবী দুর্গাকে প্রতীকী বিদায় জানানো হয়।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|