|
জাপানে সরস্বতী পূজা উদযাপিত
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। জানুয়ারি ৩০, ২০১৮ ।।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, উৎসবমুখর পরিবেশ এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৮ জানুয়ারী
২০১৮ রোববার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা
উদ্যাপিত হয়েছে জাপানে। প্রতি বছরের মতো এবারও সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান
বিদ্যাদেবীর এই মহোৎসবের আয়োজন করে। এবারের আয়োজন ছিল সার্বজনীন পূজা কমিটি
জাপান'র ২৩ তম আয়োজন।
২৩ তম আয়োজনটি ছিল একটু ব্যাতিক্রমধর্মী । হিমশীতল তাপমাত্রায় টোকিওর অদুরে
সাইতামা কেন এর ওয়ারাবি সিটির কিতামাচি কুমিনকান এ অস্থায়ী পূজামণ্ডপে সকাল
থেকেই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, তরুণ-তরুণীরা তাদের অভিভাবকদের সাথে প্রচন্ড শীতকে
উপেক্ষা করে রং-বেরঙের পোশাক পরে সরস্বতী দেবীর বন্দনায় পূজামন্ডপে হাজির হতে
থাকেন। কৃপা লাভের আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পাদপদ্মে
পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে শিক্ষার্থীসহ নানা পেশা ও নানান বয়সের মানুষ। অনেক
শিক্ষার্থী আবার তাদের বইগুলো রেখে দেন মায়ের চরণে আশীর্বাদের জন্য। প্রথম
শিক্ষাজীবন শুরু করার জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন পূজা পরিচালনার
ঠাকুরের কাছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক।
বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর
চরণে 'সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী
নমোহস্তুতে' এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রণতি জানাবেন
তারা।
মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতী আসেন ধরণীতে।
বিদ্যানুরাগীরা ও ভক্তরা দিনটি শুরু করেছেন দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে।
বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পাদদেশে বসে পুরোহিত জ্যোতি অল্কেশ এর কাছ থেকে এবার ৫ জন
শিশু হাতে খড়ি নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন । এরা হচ্ছেন শ্রেয়া পাল ,
ঈশ্বরীয়ান শ্রিয়াস বিশ্বাস , সম্প্রিতি ঘোষ , শ্রেয়া দাস এবং মৃন্ময়ী পাল ।
দুপুরে পূজার প্রসাদ বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় পূজা বিষয়ক আলোচনা
অনুষ্ঠান। তনুশ্রী বিশ্বাসের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রতিনিধিত্ব করেন দূতাবাসের কমার্স কাউন্সেলর মোঃ
হাসান আরিফ ।
অতিথী , পূজারী ভক্তদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সার্বজনীন পূজা
কমিটি জাপান'র সভাপতি শ্রী সুনিল রায়
সাধারণ সম্পাদক শ্রী রতন বর্মণ এবারও বরাবরের মতো সবাইকে আসার জন্য ধন্যবাদ
জানান।
উপদেষ্টা শ্রী সুখেন ব্রহ্ম তার বক্তব্যে সরস্বতী পূজার তাৎপর্যে জ্ঞানগভীর
আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পুরাণ ও সাহিত্যে সরস্বতীকে নানাভাবে বর্ণনা
করা হয়েছে। সরস্বতী পূজার মাস, তিথির মধ্যেও আছে নানা বৈচিত্র্য। বহু নামে, বহু
অভিধায় তিনি পরিচিত। যেমন, ব্রাহ্মী, ভারতী, ভাষা, বাক্বাণী, ইরা, বাগদেবী ও
ঈশ্বর। সরস্বতীর রূপ কল্পনার মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি কোথাও পদ্মের
উপর বসে আছেন, কোথাও দন্ডায়মান, কোথাও পদ্মোপবিষ্ট হংসবাহন আবার কোথাও-বা
ময়ূরবাহনা সরস্বতী, সিংহবাহিনী সরস্বতী। পদ্ম সৌন্দর্য সৃষ্টির, জল জীবনের এবং
মুকুট তার সম্মানের প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, এই পূজা শুধু বাঙালিদের মধ্যেই প্রচলিত নয়, দক্ষিণ এশিয়ায়
বিভিন্ন অঞ্চলসহ পৃথিবীর বেশকিছু দেশে যেমন জাপান, গ্রিক এমনকি বৌদ্ধধর্ম এবং
জৈন ধর্মেও সরস্বতীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বিশেষ অতিথীর বক্তব্যে জাপান রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী মেধসানন্দ তার
শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিশুকিশোরদের বিদ্যাদেবী মা সরস্বতীর আদর্শে গড়ে তুলার জন্য
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান ।
প্রধান অতিথির শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা'র প্রতিনিধি হাসান
আরিফ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকালীন ছাত্র জীবনে
জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজার স্মৃতিচারণ করেন । তিনি প্রবাসি বাংলাদেশীদের কাছে
জাপানে বাংলাদেশকে তুলে ধরা সহ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের
উন্নয়নে শরীক হওয়ার আহবান জানান তিনি ২৩ বছর যাবৎ জাপানে পূজা আয়োজনের ভূয়সী
প্রশংসা করেন। তিনি আয়োজক ও কমিউনিটিকে ধন্যবাদ জানান।
সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান'র সাংগঠনিক সম্পাদক ডঃ অতুনু সাহা'র ধন্যবাদ
জ্ঞ্যপন এর মধ্য দিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠা্নটিও পরিচালনা করেন
তনুশ্রী বিশ্বাস স্বরলিপির শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং একঝাঁক শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
এবারের পূজায় জাপানীজ শিল্পী শান্তি ইযুমিকা তার নিজের লিখা ও সুরকরা ভক্তিমূলক
গান পরিবেশন করেন । এছাড়াও অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে পপি ঘোষ এর গান টি বেশ
শ্রুতি মধুর ছিল । শ্রোতারা উপভোগ করেছেন ।
পুজায় ভক্তিমূলক গান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খন্দকার ফজলুল হক রতনের পরিচালনায়
উত্তরণ অংশ নেয়। উত্তরণের শিল্পীরা গানে গানে অতিথী দর্শকদের মন ভরিয়ে দিতে
সক্ষম হয় ।
সবশেষে যথারীতি সন্ধ্যা আরতী, আলিঙ্গন এবং মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২৩
তম সরস্বতী পূজা ২০১৭।
বরাবরের মতো এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের আবহে মুসলিম ,
খ্রিষ্টান , বৌদ্ধ ধর্ম্যালম্বীরা পূজাতে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে । বিশেষ করে
সাইতামা বাংলা সোসাইটি নিজেদের জন্য নেয়া হলটি পূজার পালনের জন্য নিজেদের
নির্ধারিত আয়োজন পিছিয়ে দেয় ।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|