প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

যুদ্ধ অনাথ পিতার মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেনঃ ক্ষীণ শ্বাস চলা অবস্থাতেই তাকে ফেলে দেয়া হয় লাশের স্তুপে

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮ ।।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পরও কোজি ওকুদে'কে তাড়িয়ে বেড়ায় পিতার মৃত্যুর ভয়াবহ স্মৃতির কথা যখন তাকে ফেলে দেয়া হয়েছিলো লাশের স্তুপে তখনো তার শ্বাস চলছিলো, তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৬।

"কেউ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি" তিনি বলেন।

ওকুদে একজন যুদ্ধ অনাথ, জাপানিতে বলা হয় "ফুরোজি" অর্থাৎ পরিত্যাক্ত ও ছিন্নমূল শিশু, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মাতা-পিতা উভয়কেই হারিয়েছে। তিনি এখনো কম্পিত হয়ে ওঠেন যুদ্ধ শেষে সমাজ কতটা নির্দয় হয়ে উঠেছিলো সে কথা ভেবে।

টোকিও ও উয়েনো স্টেশনের মতো বড় বড় স্টেশন গুলো ফুরোজি'তে পূর্ণ হয়ে উঠেছিলো তখন। তাদের বেশির ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে -কোনো ধরনের সাহায্যই আসেনি তাদের জন্যে।

যুদ্ধের পর প্রথম শীতকালটা তিনি কাটান খালি পায়ে, শীতে কম্পিত ৬ বছরের ওকুদে এখন ৭৯, থাকছেন কিয়োতো প্রিফেকচারের উজি'তে।

তিনি তাকিয়ে থাকতেন স্টেশনের যাত্রীদের দিকে, যদি কোনো যাত্রী একটু দয়া করে কিছু খাবার দেন।

"কেমন করে আমি মানুষের একটু সমবেদনা পেতে পারি -সারক্ষণ সেটাই ভাবতাম" ওকুদে বলেন।

রাস্তায় ভিক্ষে করা ছাড়া বাঁচার আর কোনো পথ ছিলো না।

মাঝেমধ্যেই এমন হতো যখন টানা দু'দিন পেটে কোনো খাবার জুটতো না।

১৯৪৫ সালের নভেম্বরে তিনি কিয়োতো স্টেশনে পিতা ও বড় বোনের সাথে আসেন। তার বয়স যখন ছিলো ২ বছর তখন মা অসুখে মারা যান।

দুর্বল স্বাস্থ্যের পিতা যুদ্ধের ডামাডোলে চাকুরি হারান।

তিনি আত্মীয়-স্বজনদেরকে অনেক অনুরোধ করেন তার সন্তানদেরকে রাখতে কিন্তু কেউ সে অনুরোধ রাখেনি।

১৪ নভেম্বর ১৯৪৫ তারিখে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে তাদের দুর্বল পিতা মৃত্যুশয্যায় ঢলে পড়েন।

স্টেশনের এক স্টাফ এসে বললো "তার সবশেষ।"

তারা পিতাকে একটি স্ট্রেচারে তুলে নিলো, ক্ষীণ শ্বাস তখনো চলছিলো, তার ও তার বোনের সামনেই পিতাকে স্টেশনের পেছনে একটি বড় কক্ষে অনেক লাশের মধ্যে আবর্জনার মতো ফেলে দেয়া হলো, যন্ত্রণাকর স্মৃতির কথা স্মরণ করে বলেন তিনি।

স্টেশনের স্টাফরা পিতার দেহকে পুড়িয়ে ফেলা হবে- বলে চলে যান।

"আমাদের সমাজের বড়রা আমাদের সাহায্য করবে সে কথা ভাবতেই পারতাম না" ওকুদে বলেন "কেউ অন্যর কথা ভাবে না। সেই ছোটবেলাতেই কথাটি বুঝে গিয়েছিলাম।"

যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনাথরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে থাকে।

তিন মাস পর ১৯৪৬ সালে ওকুদে এবং তার বড় বোনকে একটি এতিমখানায় নেয়া হয়। সেখান থেকেই তিনি জুনিয়ার হাইস্কুল পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। একটি কোম্পানিতে চাকুরি পান কিন্তু তিনি এতিম এ কথা জেনে তার বেতন দেয়া হতো অনেক কম।

ছেলেবেলার একটি ঘটনা তিনি কখনোই ভুলতে পারেন না।

ওকুদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রায়ই রাতে পালিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতেন। তার মনে হতো এভাবে হয়তো একদিন তার অসুস্থ মা'র সাথে দেখা হয়ে যাবে।

একরাতে অন্ধকারে যখন তিনি খালি পায়ে হাঁটছিলেন একজন তাকে ডেকে বললেন "এই ছেলে এদিকে এসো।"

তিনি ছিলেন একটি সুশি দোকানের মালিক, দোকান তখন বন্ধ হচ্ছিলো।

তিনি ওকুদে'কে দোকানে ঢুকিয়ে খাওয়ালেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার পেট পূর্ণ হয়ে ওঠে।

ওকুদে এই উষ্ণ অভিজ্ঞতা জীবনে ভূলতে পারবেন না।

১০ বার বিভিন্ন চাকুরি পাল্টানোর পর ২৫ বছর আগে তিনি নিজেই একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন যার নাম "দেন দেন", সেখানে তিনি পরিবেশন করেন জাপানি খাবার লোহার তাওয়ায় ভাজা।

তিনি এবং তার স্ত্রী (৭৮) এই রেস্টুরেন্ট চালিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, এখনো তারা স্বামী-স্ত্রী একসাথে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। আসাহি।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]