@

[প্রথমপাতা]

@

@

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নাকায়ামা তাইচি
@

প্রবীর বিকাশ সরকার
@

বেশ কয়েক বছর ধরে রবীন্দ্রনাথ ও জাপান সম্পর্কের ওপর তথ্য ও দলিলপত্র খুঁজে চলেছি। গত পাঁচ বছরে বিস্তর সংগৃহীত হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিভিন্ন জাপানির কাছ থেকে হাতে এসে পৌঁছেছে অনেক, এখনো আসছে। সম্ভবত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এত তথ্য বিদেশের আর কোনো দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না! তবে অধিকাংশই

কঠিন জাপানি ভাষায় লিখিত। ফলে সেসব থেকে বাংলায় অর্থ ও ইতিহাস উদ্ধার করা কী যে কষ্টসাধ্য তা আর না বললেও চলে। কারণ জাপানি ভাষা বিশ্বের এক নম্বর কঠিন ভাষা বলে বিবেচিত।
শুধু ভাষাই যে কঠিন তা নয়, প্রকৃতপে এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক যথার্থভাবে আজো লিখিত হয়নি বলে নানা রকম ভুলভ্রান্তি ও সনতারিখের গরমিল বিদ্যমান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েই সংরতি নেই এমন দলিলের কথা জানা যাচ্ছে, জাপানেও দু®প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক জাপানি রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে এসেছিলেন দেশে-বিদেশে, অনেকে লিখেছেন তাঁকে নিয়ে, করেছেন গবেষণা সেসব এখন খুঁজে পাওয়া বাস্তবিকই কঠিন। তবে রবীন্দ্রনাথ এখনো যেমন প্রবীণদের মনে ভাস্বর হয়ে আছেন আবার যারা ভারত বা বাংলাদেশের নাম জানেন রবীন্দ্রনাথকে চিনতে তাদের বেগ পেতে হয় না। তারা সাগ্রহে রবীন্দ্রনাথের কথা জানতে চান। আরো একটি বিষয় লণীয় যে, রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে শতাধিক বছর ধরে জাপানিরা যেভাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন এমনটি বিশ্বের আর কোনো জাতি করেছেন বলে জানা নেই। আজো জাপানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করছেন, ভাবছেন এবং তার সংগীতচর্চা করে চলেছেন বেশ কয়েকজন। রবীন্দ্ররচনা বারো খ-ে জাপানি ভাষাতে সরাসরি বাংলা থেকে অনূদিত হয়েছে একমাত্র জাপানেই। নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল, অসামান্য একটি কাজ!
আরো কত নবীন-প্রবীণ জাপানি যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, তার কালজয়ী প্রবচন, চিন্তাভাবনার উদ্বৃতি দিয়ে চলেছেন তাদের অভিজ্ঞতা, মতামতের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইন্টারনেটের পর্দায় তা দেখে ও পাঠ করে এক কথায় বিস্ময় জাগে! কত কাজ যে হচ্ছে তাকে নিয়ে এদেশের এখানে-সেখানে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রবিচ্ছটা সব তো চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। এমনই একটি তথ্য আপন সংগ্রহ থেকে উপহার দিলেন আমাকে প্রফেসর সাকামোতো হিরোকো। যা আমি জানতাম না, রবীন্দ্রগবেষক অধ্যাপক কাজুও আজুমার সঙ্গে এত আলাপ হয়েছে জাপান-রবীন্দ্র সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু তার মুখেও কখনো শুনিনি! রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশায় স্বদেশে, জাপানে এবং বহির্বিশ্বে অনেক জাপানির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। কিন্তু নাকায়ামা তাইচি (১৮৮১-১৯৫৬) নামের কোনো প্রভাবশালী এবং অত্যন্ত আধুনিকমনস্ক জাপানির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল এমন তথ্য এই প্রথম জানা গেল।
গত ডিসেম্বর (২০১০) মাসে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল জাপানে এসেছিলেন তাঁর কাজে। ৭ তারিখ সন্ধ্যেবেলা তার অবস্থানরত অতিথিভবন সুবিখ্যাত কোকুসাই বুনকা সেন্টার বা ইন্টারন্যাশনাল হাউজের লবিতে কথা বলছিলাম বিভিন্ন বিষয়ে। এমন সময় সেখানে অবিশ্বাস্যভাবে উপস্থিত হলেন হালকা চকোলেট রঙের সিল্কের শাড়ি পরিহিতা দীর্ঘাঙ্গী, ছোট করে ছাঁটা সাদা-কালো চুলধারী অত্যন্ত স্মার্ট এক ভদ্রমহিলা। নিজেই সুস্পষ্টভাবে নিজের নাম বলে পরিচয় দিলেন, eআমি গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। আজকে একটা সেমিনার আছে আমার এখানে। হিতোৎসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে এসেছি।f তিনি জাপানি দুজনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। তখনই প্রফেসর শ্রীমতী সাকামোতোর সঙ্গে আমার মতবিনিময় হতে তিনি বললেন, eআমিও রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। আপনি eরবীন্দ্র-জাপান সম্পর্কf নিয়ে গবেষণা করছেন জেনে খুব ভালো লাগল। আপনি কী জাপানের প্রখ্যাত শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ এবং শিল্পসংস্কৃতি-সাহিত্যের বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক eনাকায়ামা তাইচিfর নাম জানেন? তিনি রবীন্দ্রনাথের মস্তবড় ভক্ত ছিলেন।h
আমি বললাম, eনা তো। এই প্রথম শুনলাম আপনার কাছে।f
প্রফেসর সাকামোতো বললেন, eনাকায়ামার সঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় হয়েছিল জাপানে। তিনি জাপানের প্রসিদ্ধ প্রসাধনী প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান eকুরাবু কসমেটিক্স কোম্পানিfর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৩ সালে কোবে শহরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গত ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির একশ বছর পূর্তি উপলে একটি বর্ণাঢ্য স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে জাপানি ভাষায় সেখানে রবীন্দ্রনাথের কথা ও ছবি অন্তর্ভুক্ত আছে।f
সেদিনের এই আকস্মিক ঘটনাটি নানা কারণেই কাকতালীয়! প্রথমত, এই ভবনে ১৯৬০ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী অনাড়ম্বর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শততম জন্মবার্ষিকীর প্রারম্ভ হিসাবে। দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্রভক্ত তানভীর ভাইয়ের কল্যাণে গায়ত্রীদির সঙ্গে মাঙ্গলিক সাাৎ হলো, যিনি নিজেই একজন রবীন্দ্রগবেষক। তৃতীয়ত, শ্রদ্ধেয় গায়ত্রীদির বদৌলতে সাাৎ হয়ে গেল একজন জাপানি রবীন্দ্রভক্তের সঙ্গে, যার মাধ্যমে রবীন্দ্র-জাপান সম্পর্কের বিস্মৃত একটি অধ্যায়ের সন্ধান পেলাম। স্বীকার করতেই হয়, রবীন্দ্রাত্মা সর্বব্যাপী ঘিরে আছে আমাদেরকে।
পরের দিনই সন্ধ্যেবেলা প্রফেসর সাকামোতো হিরোকো ই-মেইলে আমাকে মহার্ঘ্য দুটি পৃষ্ঠার ফটোকপি পাঠালেন। eহিয়াকু কা হিয়াকু ছেনf (শত ফুল শত সংগ্রহ) নামক স্মারকগ্রন্থ থেকে ৬৪ ও ৬৫ দুটি পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ রঙিন। দুই পৃষ্ঠাব্যাপী চারটি ছবিসহ একটি ছোট্ট তথ্যরচনা। বড় করে শিরোনাম মুদ্রিত : eইনদো নো শিজিন তাগোর-রু তো নো কোওরিউওf অর্থাৎ eভারতের কবি ঠাকুরের সঙ্গে ভাববিনিময়।f শিরোনামের নিচে আরও দুলাইন লেখা আছে : eহৃদয় ধোয়ার সময়টাকে উপভোগ করাf এবং eজাপানবোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা।f এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, রবীন্দ্রনাথের অবস্থানটা কোথায় ছিল! রবীন্দ্রনাথের একটি ইংরেজি লেখার অংশবিশেষ ছাড়াও পাশেই রয়েছে জাপানি নারী সম্পর্কে তাঁর eজাপানযাত্রীf গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত মন্তব্য, সম্ভবত তাইচি তা পাঠ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়। মন্তব্যটি এরকম : eএখানে মেয়েদের কাপড়ের মধ্যে নিজেকে স্ত্রীলোক বলে বিজ্ঞাপন দেবার কিছুমাত্র চেষ্টা নাই। প্রায় সর্বত্রই মেয়েদের বেশের মধ্যে এমন কিছু ভঙ্গি থাকে যাতে বোঝা যায়, তারা বিশেষভাবে পুরুষের মোহদৃষ্টির প্রতি দাবি রেখেছে। এখানকার মেয়েদের কাপড় স্ন্দুর, কিন্তু সে কাপড়ে দেহের পরিচয়কে ইঙ্গিতের দ্বারা দেখাবার কোনো চেষ্টা নাই। জাপানিদের মধ্যে চরিত্রদৌর্বল্য যে কোথাও নেই তা আমি বলছি নে, কিন্তু স্ত্রী-পুরুষের সম্বন্ধকে ঘিরে তুলে প্রায় সকল সভ্যদেশেই মানুষ যে একটা কৃত্রিম মোহপরিবেষ্টন রচনা করেছে জাপানির মধ্যে অন্তত তার একটা আয়োজন কম বলে মনে হল এবং অন্তত সেই পরিমাণে এখানে স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধ স্বাভাবিক এবং মোহমুক্ত।f
এ মন্তব্যের অর্থের সঙ্গে মিলনাত্মক তাইচির মন্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে পাশাপাশি। তার মন্তব্যটি এ রকম : eসাজসজ্জা হচ্ছে বহিরঙ্গকে সংগঠিত করার কায়দা হিসেবে ব্যক্তিত্বকে প্রস্ফুটিত করার একটি পন্থা, কিছুতেই মানুষকে প্রলুব্ধ করার অর্থে কোন কৃতকর্ম নয়।f এভাবে প্রতিপ কোনো দেশের আধ্যাত্মিকতার উচ্চতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে আলিঙ্গনকারী রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাইচির নীরব সবুজ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
ভারতের বিখ্যাত কবি এশিয়াতে প্রথম নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী হিসাবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও নাকায়ামা তাইচি ঐকান্তিক মনোভাব নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিশ্বভ্রমণ করে ভ্রমণলিপি লিখে রাখা ঠাকুর, বিশেষ করে যার eজাপানযাত্রীf খুবই বিখ্যাত। আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশগুলোর শাসনতলে অবস্থানকারী এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি মাত্র রাষ্ট্র জাপান মেইজি মহাসংস্কারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ধারক বলেই আগ্রহপূর্বক ১৯১৬ সালে প্রথম ভ্রমণের পর আরো তিনবার জাপানে এসেছেন তিনি। ঠাকুর দ্বিতীয়বার ১৯২৪ সালে জাপান ভ্রমণে এলে জুন মাসের ৪ তারিখ থেকে পাঁচ দিনের জন্য রোক্কোও এর তাইয়োওকাকু-তে অবস্থান করেছিলেন। এই সময় তাইচি প্রতিদিন সকাল-বিকাল (রবীন্দ্রনাথের) মুখোমুখি আসন গ্রহণ করে (তার) ধ্যানমগ্নতার গভীরতায় আপ্লুত হতেন বলে জানা যায়। অধিকাংশ জাপানি নাগরিক কর্তৃক অবহেলিত অজানা জাপানের একজন বোদ্ধা হিসাবে ঠাকুরকে তাইচি গভীর শ্রদ্ধা করতেন।
রবি ঠাকুরের সর্বশেষ জাপান ভ্রমণের সময় ১৯২৯ সালের জুন মাসে ওওকুরা আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রে স্থাপিত টেগোর মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ওওকুরা কুনিহিকোর (১৮৮২-১৯৭১) টোকিও বাসভবনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পুনরায় সাাৎ করতে যান এবং পরস্পর আলাপ করেন।f
১৯২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথের ২৪টি বক্তৃতার সংকলন eইনিশিয়ে নো মিচিf বা eপুরনো পথf নামে প্রকাশিত হয়। এটা খুবই মূল্যবান একটি ঐতিহাসিক দলিল রবীন্দ্র-জাপান সম্পর্কের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে। খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা এই যে, এই গ্রন্থটির মুদ্রাকর হিসাবে যার নাম মুদ্রিত রয়েছে তিনি জাপানের বহুশ্রgত ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নাওকি সানজুওগো (১৮৯১-১৯৩৪)। তখন তিনি পুরাতোন শা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ১৯৩৫ সাল থেকে তার নামে eনাওকি শোওf বা eনাওকি পুরস্কারf প্রতিষ্ঠা করেন জাপানের অত্যন্ত প্রভাবশালী সাহিত্য ও ইতিহাসভিত্তিক সাময়িকী eবুনগেই শুনজুউf-এর কর্ণধার খ্যাতিমান সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক কিকুচি কান (১৮৮৮-১৯৪৮)। এ ম্যাগাজিনটির সাফল্যের পরের বছর ১৯২৩ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকেই আরও একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় eকুরাকুf বা eদুঃখসুখf নামে। জনপ্রিয় সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক এ কাগজের প্রথম সম্পাদক ছিলেন উক্ত নাওকি। প্রকাশনাগুলোতে তখনকার বিখ্যাত ও পেশাদার সাহিত্যকর্মী ও ডিজাইনারদের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন নাকায়ামা তাইচি ও তার অনুজ নাকায়ামা তোয়োজোও।
নারীর সৌন্দর্যচর্চার েেত্র তাইচির চিন্তাভাবনা ছিল খুবই আধুনিক এবং শৈল্পিক গুণাগুণসম্পন্ন। বিশেষ করে নারী সৌন্দর্যচর্চা ও প্রসাধনীসংক্রান্ত রঙিন পোস্টার ডিজাইন, মুদ্রণ ও প্রবর্ধনে তিনি ছিলেন অগ্রদূত। নারীদের জন্য ফ্যাশন সেলুনও একাধিক স্থাপন করেছিলেন আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বেই। একাধারে আধুনিক, উচ্চাভিলাষী এবং প্রাচ্যদেশীয় আদর্শে বিশ্বাসী তাইচি ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তখনকার অন্যান্য কৃতী শিল্পপতির মতো শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক সেবাক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক সেবার ক্ষেত্রে নিয়োজিত রাখার ভূমিকায় তিনি ছিলেন জাপানে প্রথম ব্যবসায়ী। রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ৫৭ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে অভিজাত শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসাবে রাজকীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৃত্যুর পূর্বে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকেও ভূষিত হন।
রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ সালে যখন তৃতীয়বারের মতো জাপানে এসেছিলেন তখন কোবে বন্দরনগরের রোক্কোও কুরাকুএনে তাইচি কর্তৃক সদ্য প্রতিষ্ঠিত (১৯২২) অভিজাত eতাইয়োওকাকুf নামের অতিথিশালায় পাঁচ দিনের জন্য (৪-৮ জুন) অবস্থান করেছিলেন।
eটকস্ ইন জাপান থেকে আরও জানা যাচ্ছে ৭ জুনে তারা টোকিওর উদ্দেশে কোবে ত্যাগ করেন রেলপথে।f এটা কি ৯ জুন হবে নাকি ৭ জুন? যদি নাকায়ামা তাইচির অতিথিশালায় পূর্ণ পাঁচ দিন রবীন্দ্রনাথ অবস্থান করে থাকেন তাহলে টোকিওর উদ্দেশে ৯ তারিখ রওয়ানা হওয়ার কথা। আর যদি ৭ তারিখ হয়ে থাকে তাহলে কোবের রোক্কোওতে অবস্থিত তাইয়োওকাকু অতিথিশালাতে ছিলেন তিন দিন ৪ থেকে ৬ জুন পর্যন্ত। তবে যে কfদিনই হোক না কেন রবীন্দ্রনাথ এখানে অবস্থান করার কারণে তাইচি তার উষ্ণমধুর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলোতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তিনি সংলাপ বিনিময় করেছিলেন, নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করেছিলেন গুরুদেবের একাধিক বক্তৃতাও। কবিগুরুর প্রতি তিনি মনে হয় সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তার নারীবিষয়ক চিন্তাভাবনার কারণে। রবীন্দ্রনাথ সেবার জাপানের কোবে, নারা, কিয়োতো, ওসাকা, টোকিওতে যতগুলো বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার মধ্যে নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তেমনি একজন রবীন্দ্রভক্তের কথা জানা যায় তিনি হলেন শ্রীমতী নাকাগাওয়া কিনুকো, ১৯২০ সালে কিয়োতোতে জাপানের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মুরাকামি কাগাকুর (১৮৮৮-১৯৩৯) জ্যেষ্ঠকন্যা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। চার বছরের সময় কিনুকো তার পিতামাতার সঙ্গে কোবে শহরের ইয়ামাতো রোকু-চৌমে স্থানে অবস্থিত সেইনেনকান ভবনে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনো তার মনে অম্লান। তার পিতা শিল্পী মুরাকামি রবীন্দ্রনাথের একটি ছবিও এঁকেছিলেন, আজো সেটি সযতেœ সংরতি হচ্ছে শিল্পীর স্বগৃহে। একটি শিশুকন্যার মনে যদি রবীন্দ্রনাথ চিরস্থায়ী আসন করে নিতে পারেন তাহলে আধুনিক জাপানের অন্যতম স্রষ্টাদের একজন অসাধারণ মেধাসম্পন্ন নাকায়ামা তাইচির মনে তিনি কী প্রভাব ফেলেছিলেন তা ব্যাখ্যার অতীত। তাই দেখা যায় ১৯২৯ সালে যখন কবি শেষবারের মতো জাপানে এসেছিলেন কানাডা থেকে ভারতে ফেরার পথে, অতিথি হয়েছিলেন টোকিওর মেগুরো শহরস্থ শিল্পপতি ও শিাবিদ ড. ওওকুরা কুনিহিকোর বাসভবনে তাইচি খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলেন কবির সঙ্গে পুনর্বার সাাৎ করার জন্য।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানি বিদ্বৎসমাজের কারো কারো বিরাগভাজন হয়েছিলেন সত্যি, কিন্তু অধিকাংশ অগ্রসর আধুনিক মানুষের কাছে কী রকম ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তা আমাদের বিস্মিত করে বৈকি! নাকায়ামা তাইচি ছিলেন তাদেরই একজন।

@

[প্রথমপাতা]