|   প্রথমপাতা  |  প্রকাশের তারিখঃ Friday, August 30, 2024 17:09 |

 

বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের পথে হাঁটছে?: জাপান টাইমস

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।

বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংস অভ্যুত্থান যা দেশটিতে সেনা সমর্থিত শাসন ব্যাবস্থার দিকে পরিচালিত হচ্ছে, দেশটির নতুন সরকার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বেলআউটে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের আবেদন করেছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম দেশটির ভবিষ্যত গতিপথ এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ সহ মৌলবাদী ইসলামী গোষ্ঠির অশুভ পুনরুত্থানও ঘটেছে।

সম্প্রতি ২০২২ সালে বাংলাদেশকে দেখা গিয়েছিলো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে। কিন্তু আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্পের নতুন দিক উন্মোচন হয়েছে যেখানে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে জরুরি ৩ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট, সেই সাথে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিশ্বব্যাংক থেকে এবং এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশনের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার জরুরী সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করেছে।

তার ১৫ বছরের শাসনামলে হাসিনা ক্রমেই অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠছিলেন কিন্তু বাংলাদেশ ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীলতা অর্জন এবং অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছিলো। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ব মন্দার সাথে সাথে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মুখে থাকা পাকিস্তানের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ছিলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আলাদা হয়ে যায় এবং যুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও পাকিস্তানপন্থীদের হাতে দেশের ৩০ লক্ষ বেসামরিক মানুষ নিহত হন।

আজ সামরিক বাহিনী বাছাই করা বেসামরিক সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ব্যাপক সহিংসতার পর ধস নামা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার পতনের পূর্বে ও পরে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব যার সাথে সেনাবাহিনীর সমর্থন স্পষ্ট। ঐতিহ্যগত ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, পুলিশ, ইসলামপন্থী ও অন্যান্য দাঙ্গাবাজদের গুলিতে এসব মানুষ প্রাণ হারান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে রাইফেল লুট করে নেওয়া হয়। জনতা বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। কমপক্ষে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের মৃতদেহগুলি রাজধানী ঢাকার ব্রীজের উপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

৭৬ বছর বয়সী "লৌহ মানবী"কে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইসলামী উগ্রবাদীরা প্রতিশোধ নিতে উন্মত্ত হয়ে ওঠে যার ফলে দেশটির দীর্ঘকাল ধরে নির্যাতিত এবং ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চলে।

বিষয়গুলি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে, প্রতিহিংসা গতি পেয়েছে কারণ নতুন সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সাথে গণগ্রেপ্তার, রাজনীতিবিদদের আটক ও আদালতে হাজিরের সময় তাদের উপর শারীরিক হামলা করা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাবেক বিচারক, স্থানীয় কর্মকর্তারা, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিরোধীরা এবং ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের উপর গণহারে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে একটি মামলায় একজন ৭৫ বছর বয়সী অবসর প্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে অমানবিকভাগে গ্রেপ্তার করা হয়, তার কুঁচকিতে বারবার লাথি মারা সহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এতটাই মারধর করা হয়েছিলো যে তার জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

এখন এই প্রশ্নটিই সবাই করছেন যে বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের পথে যাচ্ছে যার ভগ্ন অর্থনীতি, অকার্যকর রাজনীতি, ইসলামী চরমপন্থা, এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস সহ অবিরাম সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচন ব্যবস্থা রাষ্ট্র ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর দখলদারিত্বকে খর্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও এখন সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে চুড়ান্ত সালিশ হিসেবে ফিরে এসেছে, সেনাপ্রধান সিংহাসনের পেছনের শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। যেন থলের বিড়ালটিকে থলি থেকে বের করে দিয়েছেন একজন অবসর প্রাপ্ত সামরিক জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের পদে অধিষ্ঠিত রাজনৈক চাঁদাবাজদের সতর্ক করে দিতে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করেছিলেন তার "পা ভেঙে" দিয়ে। সরকারের প্রধান ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী মুহাম্মাদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার অভাব রয়েছে।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও একাধীক অর্থনৈতিক খাতে যথেষ্ট বাণিজ্যিক সম্পদ রয়েছে।

ঠিক যেমন পাকিস্তান খাদের কিনারে এসে টলমল করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, ব্যাংকি খাতে অস্থিতিশীলতা বেড়ে গেছে, এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মূলত স্থবির হয়ে পড়েছে। জুলাই থেকে ব্যাপক লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। বাংলাদেশে ভ্রমণের বিরুদ্ধে অনেক দেশের পরামর্শ কার্যকর রয়েছে।

ইসলামপন্থীদের পুনরুত্থান আজ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেমনটা অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যেমন জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে আরামদায়ক জোট বজায় রাখে, তেমনি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীও উগ্র ইসলামপন্থীদের সাথে সম্পর্ক রেখেছিল।

শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এ ধরনের সহিংস ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ব্যাপকভাবে দমন করেছে। কিন্তু বিক্ষোভের সময়, জনতা কারাগারে প্রবেশ করে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ভারতে কাঙ্ক্ষিত অপরাধী সহ শত শত উগ্র ইসলামপন্থী এবং সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয়। সরকার পতনের দুই সপ্তাহেরও বেশি আগে থেকে কারাগারে হামলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু হাসিনার ভারতে প্রস্থানের পর তা গতি পেয়েছে। হিযবুত তাহরীর চরমপন্থী গোষ্ঠী, যা হাসিনা এবং কিছু পশ্চিমা সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ ছিল, এখন বাংলাদেশে অবাধে কাজ করছে, বড় বড় সমাবেশ করছে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান ৫ আগস্ট একটি টেলিভিশন ভাষণে জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন যে হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ত্যাগ করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি "সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন" এবং "সাহায্য করবেন। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন।"

কিন্তু, জাতীয় ঐক্যের একটি বিস্তৃত ভিত্তিক সরকারের পরিবর্তে, একটি পক্ষপাতমূলক প্রশাসন এখন ক্ষমতায় রয়েছে যার মধ্যে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দুইজন ছাত্র নেতা, একজন কট্টরপন্থী ইসলাম প্রচারক এবং তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক জেনারেল রয়েছে। তারা ক্রমাগত শুদ্ধিকরণ, সেইসাথে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ এবং হত্যাকাণ্ডে অবদান রাখছে।

বাংলাদেশ একটি বিষাক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে একটি অত্যন্ত মেরুকৃত দেশ যেটি কয়েক দশক ধরে উন্মত্ত সহিংসতা এবং মারাত্মক প্রতিশোধের একটি চক্রকে উৎসাহিত করছে। সাম্প্রতিক নৃশংস সহিংসতা এর সর্বশেষ উদাহরণ।

জাতীয় ঐক্য এবং নিরাময়ের সূচনা করার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া, বাংলাদেশের গভীর বিভক্তি সম্ভবত আরও বেশি ঘৃণা, প্রতিহিংসা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, এই ঝুঁকির সাথে জাতি তার পুরানো প্রতিশোধের নেশায়, পাকিস্তানের মিরর ইমেজ হয়ে উঠতে পারে। দ্যা জাপান টাইমস।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

 

[প্রথমপাতা]