প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

ফুটবলময় বেদনা
 
 

-আকাশ মামুন-


হানাহানি আর যুদ্ধ ও ধ্বংসের স্মৃতি ভুলে ক্ষণিকের জন্য হলেও পুব আর পশ্চিম বিশ্ব কে বারবার এক কাতারে নিয়ে আসে ফুটবল। হার-জিতেও পিঠ চাপড়ে, হাত মিলিয়ে আর মুখে প্রসারিত নয়তো সংকুচিত হাসি বিনিময় করছে। এক সময়ের অক্ষ শক্তি আর মিত্র শক্তির আমেরিকা আর জার্মানির বেলায়ও একই দৃশ্য।রাফনান হায়দারকেও সেই পথেই হাঁটতে হল। সব ভুলে দীর্ঘ সাত বছর পর নিজের কর্মস্থল বিএইচবি গ্লোবাল লি. এ স্বাগতম জানাতে হল অ্যালিসিয়া আফরিনকে। বিশাল হল রুমে রাফনানকে হাসিহাসি মুখে দৃপ্ত কন্ঠে বলতে হল, ডিয়ার অল নাউ আই অ্যাম ইন্ট্রুডিউসিং উইথ ইউ এ ইয়াং, এনার্জিটিক এন্ড ক্রিয়েটিভ লেডি। ফ্রম নাউ সি ইজ অনারেবল আন্ড ভেলু অ্যাডেড মেম্বার উইথ আওয়ার টিম।হল ঘরে হাততালির ঢেউ উঠল। একের পর একজন স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রেখে চলছে। কিন্তু কারও বক্তব্যই রাফনানের কানে প্রভাব ফেলতে পারছে না। তার মনের খেরুখাতায় দমকা এক হাওয়া লেগে নিমিশেই যেন সহস্র মুহুর্তের জমা ধুলি সরে গেল। আর স্মৃতির চৌহদ্দিতে মাথা উঁকি দিল ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ। সবে মাত্র কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গিনায় পা পড়েছে। লাগমহীন নতুন জীবনের স্বপ্ন ডানা তখন পুরোপুরি মেলা শুরু করেনি।তৃতীয় সপ্তাহের ক্লাস গড়িয়েছে। ক্লাসে পড়ার গতি বেড়ে চললেও দু’ একজন আতেল ছাড়া কেউই তাল মিলায়নি।যে যার মত ফুটবল বিশ্বকাপ আর নতুন জীবনকে উপভোগ করতেই ব্যস্ত। এর মধ্যে নতুন এক আকর্ষণ পেয়ে বসেছে কাউকে কাউকে। বোটানি থেকে মাইগ্রেশন করে মলিকুলার বায়োলজিতে এডমিশন নিয়েছে নতুন এক সুন্দরী। অচিরেই সে পরিচিতি পেল ফুটবল সুন্দরী নামে। কারণে-অকারণে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেকেই কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করতে থাকল ফুটবল সুন্দরীর। আর অবসরে সেই নিয়ে মুখরোচক আড্ডা। রাফনানের মাথায়ও ভুত চেপে বসল ফুটবল সুন্দরীর কাছাকাছি হতে হবে।কিন্তু যে হারে সবাই কাছে ভেড়ার চেষ্টা করছে তাতে করে পাত্তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষিণ। তাই তাকে কৌশলি হতে হবে।বিকেলের আড্ডায় আর যাওয়া হলো না। মনির, জিকোর ফোনও রিসিভ করলো না। যেকরেই হোক আজকের মধ্যে একটা কৌশল বের করতেই হবে। নয়তো আক্রমন ভাগের দুর্বলতা আর কাল ক্ষেপনে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের বল ঢুকে যেতে পারে জালে। শেষে ঠিক হল, কৌশলে তার পছন্দ-অপছন্দ গুলে জেনে নিতে হবে আর সে ছক ধরেই এগুতে হবে। সন্ধ্যা নাগাত খবর পাওয়া গেলো ফুটবল সুন্দরীর পছন্দের দল ব্রাজিল। ক্রিকেট পাগল রাফনান ফুটবল নিয়ে কোন দিনই এতটা উত্তেজিত না থাকলেও হঠাৎই ব্রাজিলের বিশাল ফ্যান হয়ে গেল। রাতেই সেজান পয়েন্ট থেকে ব্রাজিলের জার্সি কিনে নিল।ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই ব্রাজিলের পতাকার ডিজাইন করা ইয়ার রিং চোখে পড়ল। সাথে সাথেই মাথায় নতুন কৌশল এলো। দরদাম না করেই দোকানির হাকানো দামেই কিনে নিল। জীবনে পেলে ছাড়া ব্রাজিলের একজন খেলোয়াড়ের নাম না জানলেও সাইবার ক্যাফে বসে গারিঞ্জা, ভাভা, বেলিনি, ক্যাস্টিলহো, দিদি্, কাফু, পেপে, জাজিমো, জিকো, রোনালদো, রিভালদো নাম মুখস্থ করে ফেললো।১৯৫৮, ৬২, ৭০, ৯৪ ও ২০০২ সালে কিভাবে কাপ জিতলো তার সংক্ষিপ্ত একটা ইতিহাসও জেনে নিল। আর জানলো ব্রাজিল বিরোধী আর্জেন্টিনার দুর্বল দিক, মারাদোনার হাত দিয়ে গোল করার ন্যাক্কার জনক ঘটনা। রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক বার প্র্যাকটিসও সেরে নিল, কাল কি ভাবে মুখোমুখি হবে।ব্রাজিল নিয়ে কথা শুরু করাটাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে।কথা প্ল্যানমত এগুলে এক পর্যায়ে ইয়ার রিং দুটো দিয়ে চমকে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলো। পরিকল্পনা মত হরলিক্স স্যার ক্ষ্যাত নাফিস স্যার এর ক্লসের বিরতিতে ফুটবল সুন্দরীকে পাওয়া গেল। লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ব্রাজিল নিয়ে চাপাবাজি শুরু হল। দেখা গেল কৌশল কাজ করা শুরু করেছে। এবার শুরু হল আর্জেন্টিনা আর তার সমর্থকদের পঁচানো। পরিকল্পনা এবার শতভাগ কাজে দিল। ফুটবল সুন্দরী সেমিনারে হরলিক্স স্যারের পড়ানো টপিকটা নিয়ে বই খুজতে যাওয়ার সঙ্গি হিসেবে রাফনানকেই অফার করলো। মনেমনে এমন একটা সুযোগই চাচ্ছিল রাফনান। সুযোগ বুঝে দুরুদুরু বুকে ইয়ার রিং অফার করতে ছু মেরে রাফনানের হাত থেকে নিয়ে নিল। সেই থেকে শুরু। কোয়ার্টার ফইনালে আর্জেন্টিনার হারে কেএফসিতে ফুটবল সুন্দরী বার্গার খাওয়ালো কিন্তু পরদিন ব্রাজিলের হারে ফোনে সে কি কান্না।তবে সেই ফুটবল সুন্দরীর সাথে রাফনানের ফুটবল বন্ধু আর বিশ্বকাপের গন্ডিতেই পড়ে থাকেনি। ফুটবলের মাঠ পেরিয়ে তার মনের মঠের সীমানায় গড়িয়েছিল। কিন্তু সেকেন্ড ইয়ারেই হরলিক্স স্যারকে বিয়ে করে স্যারের পিএইচডি সঙ্গি হয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমায় সেই ফুটবল সুন্দরী। সেকেন্ড ইয়ারে জীবন যুদ্ধের রক্ষণভাগ আর কতটাই রক্ষিত থাকে? যাওয়ার আগে পথ আগলে রাখার মত শক্তিশালী রক্ষণভাগ না থাকায় গোল হজম করতে হল। যাওয়ার আগে ছলছল চোখে বলে গিয়েছিল,রাফ তোমাকে ভালবেসেছিল এটা যেমন সত্য, ছেড়ে যাচ্ছি এটাও সত্য। সত্য চিরদিনই সত্য, সত্যের সথে কোন সন্ধি নেই। নিজের যত্ন নিও।ক্রেডিট ট্রান্সফার করে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা শ্যাম্পেইন থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে দেশে ফিরে এসেছে। আজ পোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্স এক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন্ট করছে বিএইচবি গ্লোবাল লি.। একটুও বদলায়নি। শুধু বাড়তি একটু মানানসই গাম্ভির্য যোগ হয়েছে। যা তার ঠিকরে পড়া ব্যক্তিত্যে ক্যালকুলেটিভ মাধুর্য দিয়েছে। অ্যালিসকে দেখে যতটানা চমকে উঠেছে তার চেয়ে বেশি চমকে উঠেছে তার কানে সেই ২০০৬ সাথে দেয়া ব্রাজিলের পতাকার ইয়ার রিং দেখে। তাইতো এত বছর পর ইউনিভার্সিটির দুর্বিনীত আর প্রাণোচ্ছল দিন গুলো তাকে কেবই বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে ভাসিয়ে নিচ্ছে। তবে কি তার রক্ষণভাগ আবারও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে করে হয়? রক্ষণভাগ আগলে রেখেছে তিন বছরে স্ত্রী লিহান আর ছেলে জিদনান হায়দার।এই রক্ষণভাগ ভেদ করে সে কি আবারও পরাজিত হতে যাচ্ছে? টালমাটাল মনের উচাটন কেবল তাকে গ্রাস করছে। সে কিছুই ভাবতে পারছে না।কেবলি তার মনের আয়নার জুড়ে ভেসে উঠছে ইয়ার রিং দুটো আর প্রত্যয়ী অ্যালিসের মুখ।
 


 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ