[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

ড.ইউনূস এবার থামুন, সম্মানের চেয়ে অপমানের পাল্লা ভারি

 

 

জেড এম কামরুল আনাম

আমাদের এই বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ কত রকম কাহিনীর মুখোমুখি যে হয়েছি; তার কোন ইয়াত্তা নেই। যে কারনে নতুন নতুন কাউকে দেশের জন্য কাজ করতে দেখলে ভয়ে গা শিউরে ওঠে; ভাবি বোধহয় আরেকটা কালপিট অথবা কালসাপ। ছোবলে ছোবলে ছন্নছাড়া করে দেবে বাংলাদেশের মানুষের অস্থি-মজ্জা। সে যাইহোক, বাংলাদেশের মান বাড়ানোর কারিগর হিসেবে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ড. ইউনূসকে নিয়ে আমরা গর্বিত হয়েছি। তাঁর নোবেল আমাদেরকে করেছে জাতির কাছে, বিশ্বের কাছে সম্মানি। আর সেই সম্মানের সূত্র ধরে মাঝে মাঝে ভেবেছি যে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ড. ইউনূস আর তার গ্রামীণ ব্যাংকের কারনে। কেননা, তিনি দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর যে মহান পরিকল্পনা নিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলা যায় নির্বিঘ্নে। সেই ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তার মহতী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণব্যাংকের মাধ্যমে এদেশের আপামর জনগোষ্ঠীর দারিদ্র দূরীকরণ করে যাচ্ছেন। ওনার কঠিন সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজকে অর্থনৈতিকভাবে এতোটাই সমৃদ্ধ যে এখনো জনসংখ্যার এক বিপুল অংশকে গ্রামীণব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে হয়, ড. ইউনূস যখন তার চিরাচরিত মিষ্টি হাসি হেসে সদম্ভে ঘোষণা করেন যে তার এক কোটি ঋণগ্রহীতা রয়েছে,তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে ১৯৭৬ -২০১১ পর্যন্ত উনি করলেনটা কি ? দারিদ্র বিমোচন করলে ঋণগ্রহীতা থাকবে কেন,তাও আবার ক্ষুদ্রঋণ ! স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে বাংলাদেশের কিঞ্চিৎ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সিংহভাগই এসেছে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থে। তাই যুক্তিতর্কের খাতিরেই হোক কিংবা পরিসংখ্যানের বিচারে,ইউনূস সাহেবের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব দিয়ে দারিদ্র বিমোচনের অলীক স্বপ্ন ধোপে টেকে না। তবে একদিক থেকে তিনি কিন্তু দারুণ সফল,মধ্যবিত্ত শিক্ষকের অবস্থান থেকে আজকে উঠে এসেছেন মহাবিত্তবানদের কাতারে,তার দেয়া ঋণে এককোটি জনগোষ্ঠী বিত্তবান হতে না পারলেও তিনি কিন্তু চড়া সুদ আরোপ করে ঠিকই নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন,দেশ দারিদ্রমুক্ত না হলেও অঢেল সম্পত্তির মালিক ঠিকই হয়েছেন। সেই তিনিই সকল আইন লড়াইয়ে যখন হেরে গেলেন, তখন তৈরি হলেন নতুন জাল নিয়ে। আগে ছিলো সুদের জাল; এখন ষড়যন্ত্রের। আর সেই জালে ক্রমশ সরকার হেনস্থা হচ্ছে; হেনস্থা হচ্ছে বর্তমানের প্রতিটি মানুষ। কেননা, আমাদের আইন, আমাদের সরকার আর দেশীয় বিষয়ে নাক গলাচ্ছে বাইরের হায়েনারা। যারা প্রতিনিয়ত গরিব করে রাখার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে বাংলাদেশের পেছনে। একটু খোলাশা করে বললে বলা যায়- যখন ঋণ দিয়ে নারীদের স্বপ্ন দেখিয়ে ঋণের জালে আটকে ফেলার অবসান হতে লাগল গার্মেন্টস শিল্পের কল্যাণে। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে তথাকথিত মাইক্রো ক্রেডিটের বাজারে মন্দাভাব দেখা দিতে লাগল। গ্রামীণ ব্যাংকসহ বড় বড় মহাজন মাইক্রো ক্রেডিটের পথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে ভিন্নতর ব্যবসায় নিয়োজিত হতে শুরু করল। তখন আসল চেহারা উম্মোচিত হয়ে বেরিয়ে আসলো 'সামাজিক ব্যবসা'। গ্রামীণ ব্যাংক তার পুরনো গৌরব হারিয়ে স্রেফ ব্যবসায়ে টিকে থাকার জন্য নানা নামের কোম্পানি খুলে বসতে শুরু করল। সেসব কোম্পানির ব্যবসার ধরন হায় হায় কোম্পানির মতোই চমক সৃষ্টিকারী হলেও অন্তিমে আর হালে পানি পায় না।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ড. ইউনূস সেই গ্রামীণ ব্যাংককে ধরে রাখতে চাইছেন যেন-তেন প্রকারণে। কারণ অজ্ঞাত। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যখন গ্রামীণ ব্যাংকের নানা কার্যকলাপ নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করল তখন থেকেই ড. ইউনূসের মার্কিন বন্ধু ক্লিনটনদের বিশেষ করে হিলারি ক্লিনটনের ক্রোধের পারদ চড় চড় করে বাড়তে লাগল। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের খোঁজখবর নেয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌম অধিকারকে প্রায় প্রত্যাখ্যান করে হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ জাতীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দিতে সরাসরি ফোন করল, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে পত্র পাঠাতে কসুর করল না। কেবল তাই নয়, তার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সব ধরনের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে পাঠাতে শুরু করল একের পর এক। পাঠাল বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের, ইউরোপের নানা দেশের সরকারের মন্ত্রীদেরও। ইউনূস যখন আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন তখন হিলারি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন সব কথাবার্তা বলা শুরু করলেন যাতে যে কেউ মনে করতে পারে যে তিনি সুস্থ নন। তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ালো ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের অন্য কোন বিষয় নয়। বাংলাদেশ জাহান্নামে যাক কুচ পরোয়া নেই। হিলারির একমাত্র এজেন্ডা হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করে তাকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে প্রদত্ত রায় থেকে পিছু হঠতে বাধ্য করা। এ ব্যাপারে আবার আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও ইউনূস ও হিলারির বন্ধুর সংখ্যাও কম নয়। তারাও ক্রমাগত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে খুবই উদ্বেগাকুল। ড. ইউনূসের পক্ষে হিলারি ক্লিনটনের এ নির্লজ্জ বেহায়াপনা কি ড. ইউনূসকে লজ্জা দেয় না, তিনি কি এতে অপমানিত বোধ করেন না? ওনার পক্ষে হিলারির এই নির্লজ্জ ফোপর দালালিতে তিনি লজ্জিত ও অপমানিত না হলেও আমরা বাংলাদেশের মানুষরা, ড. ইউনূসের শুভাকাঙ্ক্ষীরা লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন হিলারির মতো নির্লজ্জভাবে হিলারির পদক্ষেপের বিষয়ে তাকে উপদেশ দিতে? ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি এ অস্বাভাবিক মমত্ববোধের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর অন্তত নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর থেকে। নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরে তার ধ্যানজ্ঞানের পরিধি গ্রামীণ ব্যাংককে অতিক্রম করে বিশ্বপরিসরে যেখানে বিস্তৃত হওয়া উচিত ছিল, সেখানে তিনি গ্রামীণ ব্যাংককেই একমাত্র ধ্রুব জ্ঞান করে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত। শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনূসের উচিত ছিল জাতিসংঘের শান্তিদূত হয়ে বিশ্বের নানা দেশে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, দেশে দেশে যে সংঘাতের পরিবেশ বিরাজ করছে তা নিরসনের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করাথ প্যালেস্টাইন-ইসরায়েলে শান্তি স্থাপনের কাজে, আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের কাজে পাকিস্তান-ভারতে কাশ্মীর নিয়ে যে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে তা নিরসনের কাজে, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী আচরণের বিরুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করা, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিনিদের ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, এশিয়ায় জাপান, কোরিয়া ও তাইওয়ানে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে প্রত্যাহারের ব্যাপারে ভূমিকা রাখা, এশিয়াকে আণবিক অস্ত্রমুক্ত মহাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা। সেসব মহৎ কাজগুলো না করে, সেসব ব্যাপারে বিশ্ব জনমত তৈরির ব্যাপারে নিজেকে নিয়োজিত না করে, বিশ্বের যুবসমাজকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এবং শান্তিত্মর পক্ষে অবস্থান গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ না করে তিনি আটকে রইলেন 'গ্রামীণ ব্যাংকে'। কী মধু এতে রয়েছে একমাত্র তিনিই জানেন আর জানেন হিলারি ক্লিনটন।
এই জানা অজানার সাথে সাথে সাধারণ মানুষকে, সরকারকে হেনস্থা করার কোন অধিকার ড. ইউনূসের না থাকলেও তিনি তা করছেন। জোবরা থেকে তিনি যে জাদুর চেরাগ নিয়ে এসেছেন; সে চেরাগে বাংলাদেশের মানুষকে গরিব করে রাখার কৌশলের পাশাপাশি ছিলো বাইরের দেশের অনুদান নিয়ে আমাদেরকে, আমাদের ভবিষ্যৎকে আরো সংকুচিত করে ধনিদেরকে আরো প্রশস্থ প্রাচুর্যে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার পন্থা। যে কারনে অনেকেই আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন, গ্রামীণ শক্তি আর গ্রামীণ চেকসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে। এই তালিকায় আমার দৃষ্টিতে সবার উপরে রয়েছে বর্তমান এমপি হাসানুল হক ইনুসহ অনেক রাঘববোয়াল। যাদের কাছে মাত্র ১০ বছর আগেও কোটি টাকা স্বপ্ন হলেও এখন শত কোটি টাকাও বলা যায় হাতের ময়লা। আর সেই সুযোগেই স্বদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন ড. ইউনূস। তবে বাংলাদেশের মানুষের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানাবো- ড.ইউনূস, দয়া করুন; এবার থামুন। আমরা আর কোন নতুন অপমান চাইনা; সম্মান যা দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি অপমান করেছেন। দয়া করুন, এই অভাগা জাতিকে...
 

জেড এম কামরুল আনাম: রাজনীতিক ও কলামিস্ট
 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]